سری প্রবাসী ১৩৪৩ খোজ করিতে গেলাম। সেখানে কিছু ক্ষণের জন্য পথের একজন সাখী জুটিল। তাহার ঘর গঙ্গার নহরের ( সেচখালের ) পাশের একটি বড় গ্রামে। ঐ গ্রামে আমার কোনই প্রয়োজন নাই, পভোসা আজই পৌছান দরকার—শুনিয়া বেচার বলিল, মনিবের জন্য সে গাজা কিনিতে আসিয়াছে, যদি তিনি অকুমতি দেন তবে সে আমায় পভোসা পৌছাইয়া দিবে। সময় আসিলে অনেক ক্ষণ গ্রামের পাশে নহরের ধারে বৃথা অপেক্ষা করিয়া বুঝিলাম, মনিবের ইচ্ছা অনুকূল হয় নাই। যাহাই হউক রাস্তার নির্দেশ এবং পথে ব্রাহ্মণপণ্ডিতের ঘর আছে কিনা সেই ঠিকানা লইয়া চলিলাম। নহরের গায়েই এক ব্রাহ্মণ-বাড়ির খোজ পাইয়া দ্রুত সেখানে পৌছিলাম । বেলা তখন প্রায় শেষ, যদিও পভোসা পৌছিবার ইচ্ছ তথনও মনে রহিয়াছে। পণ্ডিতজীর খোজ করিলাম। তিনি বাড়ি ছিলেন । আমাকে বাহিরে দেখিতে পাইয়া তিনি আসিয়া আমায় দেখা দিলেন। ফলে, এ অভাগা দেশে সাধনসঙ্গতিহীন গৃহস্থের দ্বারে অপরিচিত সাধু দেখিলে যে মনোভাব হয়, তাহাই হইল। আরও আগাইয়৷ উত্তম বিশ্রামস্থান পাওয়া যাইবে এই নির্দেশ পাইলাম। আমারও অন্তরাত্মা তো পভোসামুী, স্বতরাং আগেই চলিলাম। পথ কিছু দূরের পর নহর ছাড়িয়া ক্ষেতের মধ্যে চলিল। ক্ষেতের পাশে আখমাড় কল। পথ ভুল হইলে সেখানে ঠিকানা জিজ্ঞাসা করিয়া লইতে হইতেছিল। স্বৰ্য্যদেবের রক্তিম কিরণ আকাশপ্রাস্তে প্রায় মিলাইয় গিয়াছিল। রাস্ত পুৰ্ব্বাপেক্ষ স্পষ্ট হইলেও বন্ধুর। হেথা-হোথী উচুনীচু নালার পাড় । অণকাবাকা মেঠো পথের যেখানেসেখানে চৌমাখ। সুতরাং সে পথের নিশ্চয়তা কিছুই ছিল না। মনে হইল, এ তো যমুনার উত্তরে বৎসদেশের সমতল ভূমি, তবে এখানকার জমি চেদি-দেশের স্বায় এবড়ে-খাবড়ো খানাথন্দে পূর্ণ কেন। এখনও অগ্রসর হইতেছিলাম কিন্তু মনের মধ্যে আশার বাণী ক্রমেই ক্ষীণ হইতে লাগিল । চারিদিক অন্ধকার । কোন দীপের আলোও চোখে পড়িল না যে সেদিকে চাই। এমন সময় এক পুষ্করিণীর বাধ চোখে পড়িল। সেদিকে গিয়া প্রথমে এক বটগাছ, পরে ছোট একটি শূন্ত দেবালয় দেখিলাম। ভাবিয়া স্থির করিলাম, এত রাত্রে এইভাবে অপরিচিত গ্রামে যাওয়া অপেক্ষা শূন্ত দেবালয়ে আশ্রয় লওয়াই শ্রেয়। বাহিরের চবুতরা ভাঙিয়া পড়িয়াছে। বিজলী-মশালের সাহায্যে ছোট-বড় ভাঙা মূৰ্ত্তি ঘের ছোট দালান দেখা গেল। রাত্রিযাপন সেখানেই করিব স্থির করিয়াছি, এমন সময় নিকটেই মনুষ্যকণ্ঠস্বর শুনিলাম । আগাইয়া গিয়া দেখিলাম, গাছের নীচে দুখানি গরুর গাড়ী। শুনিলাম কয়েকটি জৈন পরিবার তীর্থদর্শনের জন্য এই গাড়ীতে আসিয়া নিকটস্থ ধৰ্ম্মশালায় উঠিয়াছে। পভোস পৌছিয়াছি শুনিয়া মন প্রসন্ন হইল। ধৰ্ম্মশালার কূপ হইতে জল লইয়া আসিলাম এবং গাড়োয়ানদের পাশেই শয্যাসন বিছাইলাম। তাহারা ধুনীও জালাইয়া দিল । গরিবের নিকট এরূপ সৌজন্য পাওয়া যায়। প্রাতে গ্রামের ভিতর দিয়া যমুনাস্বানে চলিলাম। গ্রামে কয়েকটি ব্রাহ্মণ্য দেবালয় দেখিলাম ! স্বান করিয়া ফিরিবার পথে মনে হইল, যাহার জন্য এত পথের ধূলা উড়াইলাম, এবার সেই পাহাড় দেখা উচিত। পালিসূত্রে আনন্দেরও ঘোষিতারাম হইতে দেবকট সৌৰভ নামক স্থানের ছোট পাহাড়ে যাত্রার প্রসঙ্গ পড়িয়া সন্দেহ হইয়াছিল যে যমুনার উত্তরে পাহাড় কোথায়। কিন্তু আয়ুষ্মান আনন্দ ক যখন এই সকল তীর্থ দৰ্শন করিয়া সিংহলে ফিরিলেন তখন সে প্রশ্নের সমাধান হইয় গেল । এই একাস্তে স্থিত পাহাড়টি দুই অংশে বিভক্ত। জৰ্ত্তরের অংশের নাম বড় পাহাড়। ইহার নীচে পদ্ম-প্রভুর মন্দির আছে । জৈন গৃহস্থ বলিলেন, তাহদের সঙ্গে গেলে দ্বার খোলাইয়া দর্শন করাইবেন। আমি কিছু আগেই চলিলাম। পাহাড়ের উপরের মন্ত্ৰণ গাত্রে বহুপ্রাচীন, ছোট ছোট মূৰ্ত্তি খোদিত রহিয়াছে—অনেকগুলি দুর্গম স্থানে দেখিয়া মনে হইল বেশীর ভাগই জৈন মূৰ্ত্তি। বোধ হয় কৌশাম্বীর প্রাচীন সমুদ্ধির কালে বহু শতাব্দী ধরিয়া এখানে জৈন সাধুজন থাকিতেন। সে সময় কৌশাম্বীর ধনকুবেরের না জানি কত শতবার এখানে ধৰ্ম্ম শ্রবণের জন্য আসিতেন কিছুক্ষণ পর জৈন গৃহস্থেরা আসিলেন । র্তাহার নিজের
- ভগবান বুদ্ধের প্রধান শিক্ট । + বুদ্ধদেবের সময় কৌশাম্বীর এক বিহারের নাম যোধিতারাম। ! সিংহলে ভিক্ষু রাহুলের আচাৰ্য্য।