পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ দর্শন করিলেন এবং আমাকেও পরম সমাদরে দর্শন করাইলেন । বাহিরে সে সময় অল্প বৃষ্টি পড়িতেছিল। দেবালয়ের প্রশস্ত বাধান অঙ্গনের স্থানে স্থানে হরিদ্রাভ বিন্দুর মত কোন পদার্থ দেখ যাইতেছিল। গৃহস্থ পরম শ্রদ্ধার সহিত নিবেদন করিলেন, “পূৰ্ব্বকালে এখানে কেশৱ-বৃষ্টি হইত, তখন লোকেরা সাধু ছিল । কালের প্রভাবে লোকে সত্যভ্রষ্ট হওয়ায় এখন আর কেশর-বৃষ্টি হয় না, কেশরের মত দ্রব্য মাটি হইতে ফুটিয়া বাহির হয় ।” আমি ভাবিলাম, অতীতের স্মৃতি কি মধুর। ইহাদের ধৰ্ম্মই এখন ভারতের জীবিত ধৰ্ম্মের মধ্যে প্রাচীনতম, ইহার ধারা অবিচ্ছিন্ন রূপে চলিয়া আসিতেছে । বৌদ্ধরও এদেশে থাকিলে প্রাচীনত্বের দাবি - রিতে পারিতেন। শঙ্কর, রামানুজ প্রভৃতির মতবাদ তো এই দুষ্ট ধৰ্ম্মের তুলনায় সেদিনের মাত্র। আড়াই হাজার বৎসর বিগত, কৌশাম্বী জনশূন্ত গৃহশূন্ত, ভূমির অধিকারী কত শত বার বদল হইয়াছে, কিন্তু এখনও ইহাদের কাছে কেশর-বৃষ্টি সম্পূর্ণ সত্য । গৃহস্থ ভোজনের নিমন্ত্ৰণ করিলেন । তাহ সাদরে গ্রহণ করিয়া পাহাড় পরিক্রম করিতে চলিলাম। পুনৰ্ব্বার উপরে গিয়৷ পুরাতন গুপেব ধ্বংসাবশেষ এবং অপেক্ষাকৃত নূতন একটি ছোট স্তুপ দেখিলাম। উপর হইতে অদূরে এক পাশে কলিন্দনন্দিনীর মন্দগতি নীলধারা দেখা গেল । তাহার পরপারে অভিমানী শিশুপালের দেশ বিস্তুত রহিয়াছে। ঐ দিকেই কোন দূরের জঙ্গলে হস্তী-বিলাসী উদয়ন প্রদ্যেতের কবলে বন্দী হইয়াছিলেন । মনে পড়িল, ভগবান বুদ্ধের সমসাময়িক কৌশাম্বীরাজ উদয়ন ‘হাতী-খেদা করিতে গিয়া কেমন করিয়া উজ্জয়িনীরাজ প্রদ্যোতের লুক্কায়িত সেনার ফাদে পড়িলেন । বন্দী অবস্থায় প্রদ্যোত-দুহিতা বাসবদত্তার সহিত র্তাহার প্রণয়ু সঞ্চার এবং উভয়ের ষড়যন্ত্র ও পলায়নের কথ। স্মৃতিপটে উদিত হস্তব মাত্র মনে হইল, এই দেশই ঐ নাট্যের অভিনয়-মঞ্চ । বৎস তখনও স্বাধীন, কৌশাম্বাও স্বাধীন। কৌশাম্বী না জানি কতদিন উদ্‌গ্ৰীব হইয়া কুরুকুলের শেষ প্রদীপের প্রতীক্ষায় যমুনার পরপারে সজাগ দৃষ্টি রাখিয়াছিল! শেষে দ্রুতগামিনী হস্তিনীর পৃষ্ঠে চড়িয়া প্রতাপশালী অবস্তীরাজের কন্যা ত্রিভুবনবিখ্যাত সুন্দরী বাসবদত্তার সঙ্গে বহু প্রতীক্ষিত নিষিদ্ধ দেশে সওয়া বৎসর ኟግጭ উদয়নের প্রত্যাগমনে না জানি বৈভবসম্পন্ন কৌশাম্বীতে কি উৎসবের আলোক জ্বলিয়া উঠিয়াছিল ! কিন্তু আজ সে কৌশাম্বীর কি আশা ভরসা আছে । তাহার সস্তানগণের অন্তরে অতীত গৌরবের ক্ষীণতম স্মৃতিটিও আজ বর্তমান নাই ! - বড় পাহাড় হইতে নামিয়া দক্ষিণের শিখরে উঠলাম। ইহার উপরিভাগ সমতল। সেখানে বড় বড় ইটের শু,পাবশেষ রহিয়াছে। পৰ্ব্বতমূলে যমুনা প্রবাহিত। আজ এই পাহাড় শুষ্ক ও নীরস কিন্তু আড়াই হাজার বৎসর পূৰ্ব্বে এখানকার কোন স্বাভাবিক জলাশয় দেব-কট সোব ভ নামে খ্যাত ছিল । ভোজনের বিলম্ব আছে গুনিয়া রাত্রের সেই দালানের দিকে চলিলাম। শুনিলাম, প্রভাসক্ষেত্রের ৬ ব্রাহ্মণের পুষ্করিণীকে দেবকুণ্ড নামে অভিহিত এবং মন্দিরকে অনন্দী মহারাণী—এই পবিত্র নামে ভূষিত করিয়াছেন । মন্তক দেহের অনুপাতে বিপুল, দেহমধ্যভাগে ধ্যানী জৈন মূৰ্ত্তির অংশ এবং নীচে অন্য কোন মূৰ্ত্তির নিম্নাংশ, এই তিন খণ্ডের যোগে অনন্দীমাই আবিভূত হইয়াছেন ! তরুণ ব্রাহ্মণ পূজারীর পরিচয় জিজ্ঞাসা করিয়া শুনিলাম সেও মলইয়। পড়ে এতদুরে আসিয়া পড়ার কারণ হিসাবে পুরাতন কহিনীই শুনিলাম। বিবাহ-সম্বন্ধ দ্বারা কৌলীন্যপ্রার্থী কোন ব্রাহ্মণের পাল্লায় পড়িয়া তরুণ ব্রাহ্মণ চিরদিনের জন্য জন্মভূমি ছাড়িয়া আসিয়াছেন। পথে কথাপ্রসঙ্গে তিনি আমার জৈন মন্দির দর্শন ও জৈনের হাতের রুটি ভোজন সম্বন্ধে টিপ্পনী করিলেন । রক্ষা এই যে সংকিসার মত এথানে সরেীকাদিগকে জল-অচল ভাব হয় না । প্রেম ও শ্রদ্ধার সহিত প্রস্তুত মধুর রন্ধন, সঙ্গে পূৰ্ব্বের চব্বিশ ঘণ্টার শ্রান্তি-ক্লাস্তি, এরূপ ভোজন অমৃতের তুল্য। খাইবার পর একাকী কৌশাম্বীর পথে অগ্রসর হইলাম । জৈন গৃহস্থেরাও যাইবেন, কিন্তু নৌপথে। তাহাদের সঙ্গে যেসব স্ত্রীলোক আছেন তাহারা আমার বৃষ্টিগোচর নহেন। এক ক্রোশ পথ চলিবার পর সিংহবল গ্রাম, তাহার পর

  • পভোসরি পুরাতন নাম । + লেখকও মলইয় পড়ে বংশজ ।

সরাবাগ শ্রাবক জৈন।