পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্রমের শিক্ষা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রাচীন ভারতের তপোবন জিনিষটার ঠিক বাস্তব রূপ কী তার ঐতিহাসিক ধারণ আজ সহজ নয়। তপোবনের যে প্রতিরূপ স্থায়ী ভাবে আঁকা পড়েছে ভারতের চিত্তে ও সাহিত্যে সে হচ্ছে একটি কল্যাণময় কল্পমূৰ্ত্তি, বিলাসমোহমুক্ত প্রাণবান আনন্দের মুর্তি । আধুনিক কলে জন্মেছি । কিন্তু এই ছবি রয়ে গেছে আমারও মনে । বর্তমান যুগের বিদ্যায়তনে ভাবলোকের সেই তপোবনকে রূপলোকে প্রকাশ করবার জন্যে একদ! কিছুকাল ধ’রে আমার মনে আগ্রহ জেগেছিল । দেখেছি মনে মনে তপোবনের কেন্দ্রস্থলে গুরুকে । তিনি যন্ত্র নন তিনি মাহুধ । নিষ্ক্রিয় ভাবে মাচুর্য নন সক্রিয় ভাবে, কেন-ন মনুষ্ঠত্বের লক্ষা সাধনেই তিনি প্রবৃত্ত । এই তপস্তার গতিমান ধারামু শিষ্যের চিত্তকে গতিশীল ক’রে তোলা তার অাপন সাধনারই অঙ্গ । শিষ্যের জীবন প্রেরণ। পায় তার অব্যবহিত সঙ্গ থেকে । নিত্য জাগরূক মানবচিত্তের এই সঙ্গ জিনিষটি আশ্রমের শিক্ষায় সব চেয়ে মূল্যবান উপাদান। তার সেই মূল্য অধ্যাপনার বিষয়ে নয়, উপকরণে নয়, পদ্ধতিতে নয় । গুরুর মন প্রতি মুহূৰ্বে আপনাকে পাচ্ছে ব'লেই আপনাকে দিচ্ছে । পাওয়ার আনন্দ সপ্রমাণ করছে নিজের সত্যত, দেওয়ার আনন্দেই । একদা এক জন জাপানী ভদ্রলোকের বাড়ীতে ছিলাম, বাগানের কাজে ছিল তার বিশেষ সখ । তিনি বৌদ্ধ, মৈত্রীর সাধক । তিনি বলতেন, আমি ভালবাসি গাছপালা, তরুলতায় সেই ভালবাসার শক্তি প্রবেশ করে, ওদের ফুলে ফলে জাগে সেই ভালবাসারই প্রতিক্রিয়া । বল বাহুল্য মানবচিত্তের মালীর সম্বন্ধে এ কথা সম্পূর্ণ সত্য। মনের সঙ্গে মন যথার্থভাবে মিলতে থাকলে আপনি জাগে খুশী । সেই বুশ স্বজনশক্তিশীল আশ্রমের শিক্ষাদান এই খুশীর দান । যাদের মনে কৰ্ত্তব্যবোধ আছে কিন্তু সেই খুশী নেই, তাদের দোসর পথ । গুরুশিষ্যের মধ্যে পরস্পরসাপেক্ষ সহজ সম্বন্ধকেই আমি বিদ্যাদানের প্রধান মাধ্যস্থ্য ব’লে জেনেছি। আরও একটি কথা মনে ছিল । যে গুরুর অস্তরে ছেলেমান্তযটি একেবারে শুকিয়ে কাঠ হয়েছে তিনি ছেলেদের ভার নেবার অযোগ্য। উভয়ের মধ্যে শুধু সামৗপ্য নয়, আস্থরিক সাযুজ্য ও সাদৃশু থাকা চাই । নইলে দেন পাওঁনায় নাড়ির যোগ থাকে না । নদীর সঙ্গে যদি প্রকৃত শিক্ষকের তুলনা করি তবে বলব, কেবল ডাইনে বয়ে কতকগুলো বুডো বুড়ে উপনদীর যোগেই নদী পূর্ণ নয় তার আদি ঝরণার ধারাটি মোট মোট পাথরগুলোর মধে হারিয়ে যায় নি । যিনি জাতশিক্ষক ছেলেদের ডাব শুনলেই তার ভিতরকার আদিম ছেলেট। আপনি বেরিয়ে আসে । মোট গলার ভিতর থেকে উচ্ছসিত হয় প্রাণে ভর কাচ হাসি । ছেলেরা যদি কোন দিক থেকেই তাবে স্বশ্রেণীয় জীব বলে চিনতে না পারে, যদি মনে করে লোকট যেন একটা প্রাগৈতিহাসিক মহাকায় প্রাণী তবে নিভ৷ে সে তার কাছে হাত বাড়াতেই পারবে না। সাধারণত আমাদের গুরুর সৰ্ব্বদা নিজের প্রবীণতা অর্থাৎ নবীনের কাছ থেকে দূরবর্কিত। সপ্রমাণ করতে ব্যগ্র, প্রায়ই ওট সস্তায় কত্ত্বত্ব করবার প্রলোভনে। ছেলেদের পাড়ায় চোপদার না নিয়ে এগোলে পাছে সস্ত্রম নষ্ট হয় এই ভয়ে তার সতর্ক । তাদের সঙ্গে সঙ্গে ধ্বনি উঠছে চুপ, চুপ। তাই পাক শাখায় কচি শাখায় ফুল ফোটাবার ফল ফলাবার মৰ্ম্মগত সহযোগ রদ্ধ হয়ে থাকে, চুপ করে যায় ছেলেদের চিত্তে প্রাণের ক্রিয়া । আর একটা কথা আছে । ছেলেরা বিশ্বপ্রকৃতির অত্যন্ত কাছের । আরাম-কেদারায় তারা আরাম চায় না, হযোগ পেলেই গাছের ডালে তার চায় ছুটি । বিরাট প্রকৃতির নাড়িতে নাড়িতে প্রথম প্রাণের বেগ নিগূঢ়ভাবে চঞ্চল । শিশুর প্রাণে সেই বেগ গতিসঞ্চার করে । বয়স্কদের