জটিল ব্যাপার শ্রীশরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় একটা জটা জুটিয়াছিল । পরচুলার ব্যবসা করি না ; সখের থিয়েটার করাও অনেক দিন ছাড়িয়া দিয়াছি । তাই, আচম্বিতে যখন একটি পিঙ্গলবর্ণ জটার স্বত্বাধিকারী হইয়া পড়িলাম তখন ভাবনা হইল, এ অমূল্য নিধি লইয়া কি করিব। কিন্তু কি করিয়া জটা লাভ করিলাম সে বিবরণ পাঠকের গোচর করা প্রয়োজন ; নহিলে বলা-কহ নাই হঠাৎ একটি জট বাহির করিয়া বসিলে পাঠক স্বভাবতই আমাকে বাজীকর বলিয়া সন্দেহ করিবেন। এরূপ সন্দেহভাজন হইয়া বঁচিয়া থাকার চেয়ে উক্ত জটা মাথায় পরিয়া বিবাগী হইয়া যাওয়াও ভাল । রবিবার প্রাতঃকালে বহিষ্কারের সম্মুখে মোড়ায় বসিয়া রোদ পোহাইতেছিলাম—সাওতাল পরগণার মিঠে-কড় ফাল্গুনী রৌদ্র মন্দ লাগিতেছিল না—এমন সময় এক গ্যাটগোটা সন্ন্যাসী আমার সম্মুখে আবির্ভূত হইলেন। হুঙ্কার ছাড়িয়া বলিলেন,—‘বম্ মহাদেও, ভিখ, লাও। বাবাজীর নাভি পর্য্যস্ত সর্পাকৃতি জট ছলিতেছে, মুখ বিভূতিভূষিত। তবু ভক্তি হইল না, কহিলাম, ‘কিছু হবে না।’ বাবাজী ঘূর্ণিত নেত্ৰে কহিলেন, --‘কেঁও ! তুম্ মেচ্ছ, হায় ? সাধু-সন্ত, নহি মানত ? বাবাজীর বচন শুনিয়া আপাদমস্তক জলিয় গেল, বলিলাম, নহি মানত।’ সাধুবাবা অট্টহাস্তে পাড়া সচকিত করিয়া বলিলেন, তু বাংগালী হায়—বাংগালীলোক ভ্ৰষ্ট হোতী হায়! আর সহ হইল না, উঠিয়া সাধুবাবার জটা ধরিয়া মারিলাম এক টান । কিছুক্ষণ দু-জনেই নিৰ্ব্বাক । তার পর বাবাজী জটাটি মামার হস্তে রাখিয়া মুণ্ডিত শীর্ষ লইয়া দ্রুত পলায়ন করিলেন। রাস্তার কয়েক জন লোক হৈ হৈ করিয়া উঠিল, বাবাজী কিন্তু কোন দিকে দৃকৃপাত করিলেন না। এক জন পথচারী সংবাদ দিয়া গেল,-লোকটা দাগী চোর, সম্প্রতি জেল হইতে বাহির হইয়া ভেকু লইয়াছে। সে য। হোক, কিন্তু এখন এই জটা লইয়া কি করিব ? সংবাদদাতাকে সেটি উপহার দিতে চাহিলাম, সে লক্টতে সম্মত হইল না । হঠাৎ একটা প্ল্যাণ মাথায় থেলিয়া গেল— গুহিণীকে ভয় দেখাইতে হইবে । বাহিরে প্রকাশ না করিলেও আধুনিক বলিয় প্রমীলার মনে বেশ একটু গৰ্ব্ব আছে । গত তিন বৎসরের বিবাহিত জীবনে কখনও তাহকে সেকেলে বলিপার হযোগ পাই নাই । নিজেকে সে পুরুষের সমকক্ষ মনে করে, তাই তাহার লঙ্কার বাড়াবাড়ি নাই ; কোনও অবস্থাতেই লজ্জা বা ভয় পাওয়াকে সে নারীসুলভ লজ্জার ব্যতিক্রম মনে করে । তার এঃ অসস্কেচ আত্মম্ভরিতা মাঝে মাঝে আমার পৌরুষকে পীড়া দিয়াছে, একটা অস্পষ্ট সংশয় কদাচিৎ মনের কোণে উকি মারিয়াছে— ভপিলাম, আজ পরীক্ষা হোক প্রমীলার মনের ভাব কতটা থাটি, কতটা আত্মপ্রতারণ। জট লুকাইয়া রাখিয়া বাড়ার ভিতরটা একবার ঘুরিয়া আসিলাম । প্রমীলা বাড়ীর পশ্চাদিকের ঘরে বসিয়া আছে । তাহার হাতে একথান চিঠি । নিশ্চয় জট-ঘটিত গণ্ডগোল শুনিতে পায় নাচ । আমাকে দেখিয়া সে মুখ তুলিয়া চাহিল। গম্ভীর। জিজ্ঞাসা করিল, কিছু চাই ? বলিলাম, না। কার চিঠি ? ‘বাবার ” ‘আজ এল ? মুখথান
পাতা:প্রবাসী (ষট্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৫৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।