পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আষাঢ় তাতে লাল রেশমের গদী এটে দুই আম্বাবাঈকে সোনা মুক্তোর গয়না ও রেশমী শাড়ী দিয়ে সাজিয়ে বসানো হয়। উপরে কারুকার্যখচিত মস্ত ছাতা ধরা হয়। তার পর পূজার ব্রাহ্মণের সেই দুই পান্ধী কাধে ক’রে টেম্বলাবাঈদর্শনে যাত্রা করে । স্বয়ং মহারাজ তার পাত্রমিত্রসভাসদবর্গসহ ঘোড়ায় চড়ে দেবীর পান্ধীর অন্তগমন করেন। রাজ্যে যত রকম বাদ্য আছে,—ইংরেজী ব্যাও, দেশী বা, সানাই, বাশ, তবলা, শিঙ্গ, সমস্ত বাজতে থাকে, চার দিকে বাজী পোড়ান হয়। হাতীগুলিকে নানা বর্ণ চিত্রিত করে, বাঘ কুকুর প্রভৃতির গায়ে রেশমী জামা এটে তাদের শোভাযাত্রায় বের করা হয়। উটগুলির উপর ব সে তবলাওয়ালার তবলা বাজাতে থাকে। অশ্বারোহী সৈন্ত, পদাতিক সৈন্য তালে তালে চলতে থাকে। এই অপূৰ্ব্ব শোভাযাত্রার পেছনে রাজ্যের জনতা ভেঙে পড়ে। মহাসমারোহে এই বিপুল শোভাযাত্র টেপলাবাঈর মন্দিরে পৌছয় । তখন বহুদিন পর দুষ্ট ভগিনার মিলন হয় । পূজারী ব্রাহ্মণের দেবীদ্বয়ের পূজো করে, একটি কুমড়ে এনে দেবীর সম্মুখে রাখে। একটি রঞ্জক-কুমারী রেশমী বঙ্গে অলঙ্কারে সজ্জিত হয়ে এসে ভলোয়ার নিয়ে সেই কুমড়োটিকে এক কোপে কেটে ফেলে। তখন খুব জোরে বাজনা বেজে ওঠে, পূজো শেষ হয়ে যায়। তার পর আবার আম্বাবাঈকে পান্ধীতে চড়িয়ে শহরে ফিরিয়ে আন হয়। এইটে হ’ল রাজ্যের একটি প্রধান উৎসব, যাতে রাজা থেকে আরম্ভ করে জনসাধারণ সবাই যোগদান করে । “টেম্বলাবাঈল পানি" শুধু কুলওয়ার্ড বা কৃষকসম্প্রদায়ের উৎসব। কৃষকবধূরা, রুযককন্যারা নূতন মাটির কলসী * চিত্রিত করে তাতে নদী থেকে জল ভরে নেয়, তার ওপর * একটি করে নারকেল রাখে, তার পর নূতন রঙীন শাড়ী পরে রেশমী অচল উড়িয়ে এই কলসী মাথায় তুলে নেয়, ও সার বেঁধে হেলে দুলে চলতে থাকে। বলদের গাড়ীগুলি দেবদারুপাত দিয়ে সাজিয়ে তার মধ্যে ছোট ছেলেমেয়েদের বসিয়ে দেওয়া হয়। বলদগুলির শিং লাল রং দিয়ে রাড়িয়ে দেয়, সমস্ত গায়ে হলুদ ও সিছুর দিয়ে চিত্র একে দেয়, গলায় যুঙর গেঁথে মালা পরিয়ে দেয়। এই অপূৰ্ব্ব সাজে মহারাষ্ট্রে বর্ষ-উৎসৰ Nご)色。 সজ্জিত হয়ে বলদগুলি মন্থর গতিতে চলতে থাকে। শিশুদের কলরব, বলদগুলির ঘুঙরের মুহূমধুর আওয়াজ চার দিকে উংসবের সূচনা করে । এক দল বাস্থ্যকর মাদলের মত এক রকম বাদ্য বাজাতে আরম্ভ করে । তাতে নীচের এক অদ্ভুত স্বর বাজতে থাকে। আর এক রকম সানাইও সাপ-নাচের গানের মত বাজতে থাকে, আর সেই তালে তালে কখনও একটি মেয়ে কখনও বা একটি পুরুষ প্রবল বেগে নাচতে আরম্ভ করে । পুরুষ বা মেয়েটির সমস্ত কপালে হলুদ ও কুঙ্কুম দিয়ে চিত্রিত ক'রে দেওয়া হয় । সে দু-হাত জোড় ক'রে কখনও লাফিয়ে, কখনও ব৷ কাৎ হয়ে বাজনার তালে তালে নাচতে থাকে। না থেমে সে এক মাইল দু-মাইল নেচে নেচে চলে ; লোকের তথন বলতে থাকে, তার শরীরে দেবতার আবির্ভাব হয়েছে ; সে সমস্ত লোকের সন্ত্রমের পাত্র হয়ে দাড়ায় । এই বিচিত্র শোভাযাত্র রাস্তায় রাস্তায় থামৃতে থাকে এবং দেববিশ্বাসী ও ভূতবিশ্বাসী লোকেরা এসে ঐ দেবাবিষ্ট লোকটিকে নিজেদের বর্তমান ও ভবিষ্ণুতের শুভাশুভ জিজ্ঞেস করে, সেও তার উত্তর দেয় । লোকের গভীর বিশ্বাসে তাই গ্রহণ করে । এই ভাবে তাঁর শহর ছাড়িয়ে যখন সেই নির্জন পাহাড়ের চূড়ায় টেম্বলাবাঈর মন্দিরে উপস্থিত হয়, তথম বাজনা খুব জোরে বেজে ওঠে । দেববিষ্ট লোকের তাণ্ডবনৃত্য আরও ভীষণ বেগে চলতে থাকে। মাঝে মাঝে এক এক দলের লোক এক রকম বাদ্যযন্থ নিয়ে নাচের ভঙ্গীতে সেই বাজনা বাজীতে থাকে । এই কুলওয়াড়ী জাতির মন্দিরে প্রবেশ নিষেধ, কাজেই তারা সেষ্ট কলসীর নুতন বর্ষার জল মন্দিরের সিড়িতে ঢালতে আরম্ভ করে, তাতেই দেবীকে জল দেওয়ার উদেশ্ব সার্থক হয়। পূজারী মন্দিরের ভিতরে পূজো করে পাঠা বলি দেয় । সেই দেবাবিষ্ট লোকটির শরীর থেকে তখন দেবতার তিরোধান হয়ে যায়। ধীরে ধীরে বাজনা থেমে যায়। তখন কুলওয়াড়ী নরনারী ও শিশুদের বিচিত্র ভাষায়, বিচিত্র কলরবে, সেই পাহাড়ের নির্জন চূড়া মুখরিত হয়ে ওঠে। দলে দলে পুরুষ স্ত্রী তাদের খাদ্যদ্রব্য বের করে বনভোজন করতে বসে যায়। চার দিকে মেয়েদের গায় লাল, নীল, হলুদ, সবুজ রঙের শাড়ী, আর পুরুষদের মাথায়