পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আগষণচ -k বোনের ভালবাসা, বন্ধুর প্রীতি সে তাকে তার সমস্ত চিত্ত উজাড় ক'রে দান করেছে ; প্রতিদানে সেও শচীন্দ্রের কাছ থেকে নিৰ্ব্বিরোধ প্রীতি এবং বন্ধুত্বের অজস্র অকপট আত্মনিবেদন লাভ করেছে । কিন্তু তার এই দুরন্ত যৌবনবিদাহী দীপ্যমান প্রেমের অজস্রতার কাছে সে কতটুকুই বা! যে ঘটনায় আজ এই হান্তোজ্জল দ্বিপ্রহরে অকস্মাৎ তাদের চিত্তে অন্ধকার ঘনীভূত হয়ে এসেছিল তাকে সম্পূর্ণ বুঝতে হ'লে পাৰ্ব্বতীর পূৰ্ব্বতন ইতিহাস একটু আলোচনা করা আবখ্যক । Σ\" বাইরের দিক থেকে পাৰ্ব্বতী নিজেকে অনেকখানি সংযত ক'রে এনেছিল ; প্রথমত তার মজ্জাগত বিলাতী শিক্ষার শাসনগুণে, দ্বিতীয়ত তার স্বাভাবিক আত্মমৰ্য্যাদা প্রত্যাখ্যানকে উচ্ছ্বাসের নাটকীয়তায় পরিণত হ’তে দেয় নি বলে এবং তৃতীয়ত শচীন্দ্রের ইতিহাস এখন তার সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ঠিল না । অবশ্য একদিন ছিল যখন পাৰ্ব্বতীর নবোৎসারিত দুৰ্জ্জয় প্রেম, প্রবল বন্যায় তার শিক্ষা, তার অভিমান সব ভাসিয়ে দেবার উপক্রম করেছিল। দোষও তার বড় ছিল না। শচীন্দ্রকে সে প্রথম দেখে প্রবণ জরে সংজ্ঞাশূন্ত অসহায় অবস্থায় । সুতরাং লজ্জা, সঙ্কোচ এবং শিক্ষিত নরনারীর প্রথম পরিচয়ের স্বাভাবিক আত্মরক্ষণশীলতাকে তার দরজার বাইরেই ফেলে রেখে আসতে হয়েছিল। সে কথা বস্তুত তপন তার মনে রাখবার অবস্থাও ছিল না শচীন্দ্রের জীবনের মৰ্ম্মঘাতী দুঃখের ইতিহাস ছিল তার কাছে সম্পূর্ণ অপরিজ্ঞাত । সুতরাং তার নিজের নিরাশ্রয় তরুণ হৃদয়ের প্রথম প্রেমের কুলপ্লাবী উচ্ছ্বাসের আবেগে সে কোন কথা স্থিরভাবে চিন্তা করবার অবসর পায় নি। তাই আজ সে অবাক হয়ে ভাবে- কোথায় ছিল শচীন্দ্রনাথ—ভারতবর্ষ থেকে আগত, পত্নীবিরহবিধুর শান্তিসাত্বনাপ্রয়াসী এক যুবক, লণ্ডনে অপরিচিত বিদেশীর ঘরে এসে কেনই বা এমন অমুস্থ অসহায় হয়ে পড়ল ? অার কোথায় ছিল পৰ্ব্বতী—বিদেশে বান্ধবহীন চাকুরীজীবী একটি বাঙালীর মেয়ে ! কি অভাবনীয় উপায়েই না পরস্পর পয়স্পরের কাছে পরিচিত হ'ল! কি আবশ্যক ছিল এই পরিচয়ের, - মানুষের মন N少位@ যদি না তার অন্তরাত্মা পূর্ণতা ও শাস্তির আশ্রয় লাভ করতে পারল দৈবদেয় এই অপূৰ্ব্ব দানের দাক্ষিণ্যে ! লওনে সে-বার ভয়ানক শীত পড়েছে। অাপিসের মধ্যে বসেও কাজ করা দুরূহ হয়ে উঠেছে। ইডিথ, এসে পাৰ্ব্বতীকে বললে, “দেখ, বড় মুস্কিলে পড়েছি আমরা। আজ কয়েক দিন হ’ল একটি ভারতবর্ষীয় যুবক এসে আমাদের বাড়িতে, নায়ুডু যে-ঘরগুলোয় ছিল, সেই মুয়েটটা ভাড়া নিয়েছে। জাহাজ থেকেই অমুখ নিয়ে এসেছিল বোধ হয়। আজ দু-দিন হ’ল একেবারে জরে বেছ স হয়ে পড়েছে । তার সঙ্গে আমাদের ভাল করে আলাপই হয় নি। এমন কোন ঠিকানা তার কাছে পাচ্ছি না যাতে কাউকে 'তার' ক'রে একটা খবর দিতে পারি। মা ত খুবই ভয় পেয়েছে। তুমি কি গিয়ে একবার দেখবে ? ভারতীয় ছেলে বলেই তোমাকে এই অনুরোধ করছি। কিছু যদি মনে না কর তবে মা’র অনুরোধ তুমি অনুগ্রহ ক'রে একবার আমাদের বাড়ী যেওঁ ৷” ইডিথ পাৰ্ব্বতীদের আপিসেই কাজ করে। তার অমায়িক সরল ব্যবহারে সে পাৰ্ব্বতীর বন্ধুতা অর্জন করেছিল। এর পূৰ্ব্বেও ইডিথের মা'র কাছে পাৰ্ব্বতী দু-এক বার গিয়েছে। তবে পাৰ্ব্বতী নিজের অনন্যসাধারণ অদ্ভুত বিপৰ্য্যস্ত ভাগ্য নিয়ে নিজের মধ্যে আবৃত থাকতেই চাইত। তবু নিতান্ত দরিদ্র এই মেয়েটি এবং তার মার সঙ্গে তার পরিচয় অপেক্ষাকৃত ঘনিষ্ঠ হয়েছিল। তা ছাড়া এই বিরাট লওনের জনসমুদ্রের কোলাহলময় নিৰ্জ্জনতার অতলে সে নিজেকে সম্পূর্ণ প্রচ্ছন্নই রেখেছিল। পাৰ্ব্বতী নিজে সহজে কারও সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা করতে পারত না । কারণও ছিল তার । Ꮌ8 পাৰ্ব্বতীর বাবা ভূপতিনাথ রায় ছিলেন একটু ফিরিঙ্গিভাবাপন্ন—ছেলেবেল থেকেই । সেণ্টজেভিয়াসে পড়াশুনা করেছিলেন এবং তার চিরদিনের বাসন ছিল বিলাতে গিয়ে বসবাস করা । ভারতবর্ষের কিছুই তার মতে মতুষ্যজনোচিত ছিল না । পিতার অকুমতিও পেলেন । এমন সময় বিলেত যাবার আগেই র্তার বাবা গেলেন মারা। কিন্তু মারা যাবার