পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀՖՃՆ পূৰ্ব্বেই তিনি তার পুত্রের বিদেশে চরিত্রবান থাকবার অব্যর্থ কবচ একটি পত্নীকে তার কণ্ঠলগ্ন ক'রে দিয়ে গেলেন । তখনকার মত র্তার বিলাতযাত্রায় যবনিক পড়ল। কিন্তু যাদুশী ভাবনা যস্ত,—কিছুদিন, অর্থাৎ বছর-পাঁচেক যেতে-নীযেতেই যমরাজের বিশেষ কৃপাদৃষ্টিতে, দুরন্ত কলেরা রোগে তার দুই খালক ইহলোকে, ভূপতি এবং তার শ্বশুর মহাশয়ের বিরাট লোহার সিন্দুকের মধ্যের ব্যবধানটুকু লুপ্ত ক'রে দিয়ে, বোধ করি ভগ্নীপতির আন্তরিক আশীৰ্ব্বাদের থেয়া-নৌকায় পরলোকের ঘাট সই ক’রে পাড়ি দিল । যেক’দিন এর পর বেঁচেছিলেন, ভূপতির শ্বশুরমহাশয় জামাইকে ও মেয়েকে তার কাছছাড়া করেন নি। তার পর একদিন ভূপতি ও পাৰ্ব্বতীর মাকে তার ঘরসংসার, লোহার সিন্দুক এবং চাবির তাড়া সমর্পণ করে দিয়ে তিনিও বিদায় নিলেন । পাৰ্ব্বতীর বয়স তখন চার বছর মাত্র । এর পর তার বাবা পড়লেন তার শিক্ষা নিয়ে । কখনও ভুলেও তার সঙ্গে বাংলায় কথা কইতেন ন—একটু বড় হলেই লরেটোতে ভৰ্ত্তি ক’রে দিলেন এবং সৰ্ব্বপ্রকারে যাতে মেটিবগন্ধবিবর্জিত শিক্ষা সে পায় তার জন্যে চারি দিকের শুচিত বঁচিয়ে তাকে খাটি ফিরিঙ্গি বানাবার অসাধাসাধনে প্রাণপাত করতে লাগলেন । পাৰ্ব্বতীর মা ছিলেন অতি নিরীহ মানুষ, তাতে র্তার বয়সও বেশী ছিল না। স্বামীর প্রভৃত্বের কাছে বরাবরই র্তাকে হার মানতে হয়েছে। তবু তিনি প্রাণপণে স্বামীর অগোচরে নিজের সাধ্যমত তাকে গৃহকৰ্ম্ম এবং বাংলা দেশ ও ভাষার প্রতি অনুরক্ত হ’তে শিক্ষা দেবার চেষ্টা করতেন । কিন্তু তিনি ছিলেন দুৰ্ব্বল, র্তার চেষ্টাও ছিল নিতান্ত সীমাবদ্ধ ; তার উপর কোনদিন ভূপতি এ-সব জানতে পারলে অশেষ লাঞ্ছন না দিয়ে তাকে নিস্কৃতি দিতেন না । একটু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পাৰ্ব্বতী মায়ের এই অসহায় ভাবখান বেশ উপলব্ধি করতে পারল, এবং ধীরে ধীরে নিজের অজ্ঞাতেই সে ক্রমে মায়ের ইচ্ছাগুলিকে পিতার অগোচরে প্রাণপণে পালন ক’রে শেষের দু-এক বছর মা'র চিরনিস্তব্ধ ক্ষুব্ধ চিত্তে যে শাস্তি ও তৃপ্তিদান সে করতে পেরেছিল উত্তরকালে মায়ের স্বল্পাবশিষ্ট স্মৃতিভাণ্ডারে ঐটুকুই ছিল তার সান্থনার কথা । প্রবাসী SNSの総ー পাৰ্ব্বতীর মা যখন মারা যান পাৰ্ব্বতী তখন নিতান্ত বালিকা। বয়স মাত্র তের বৎসর । কস্তার জুনিয়ার কেম্‌ব্রিজ পরীক্ষা পাসের সংবাদ জেনে যাবার অবসর আর তার হ’ল না। তার পর ভূপতি বেশীদিন আর দেশে বাস করেন নি। টাকাকড়ি যা ছিল সব গুটিয়ে মেয়েটিকে সঙ্গে নিয়ে তার চিরবাঞ্ছিত স্বৰ্গধাম বিলেত অভিমুখে রওনা হ’লেন । এখানে বছর-ছুয়েক তাদের খুব আরামেই কেটেছিল। পড়াশুনা নিয়ে ও লাইব্রেরী, মিউজিয়ম এবং নানা দেশ দেখে বেড়িয়ে দুটো বছর যে কোথা দিয়ে বেরিয়ে গেল, নূতনত্বের আকর্ষণে পাৰ্ব্বতীর তরুণ চিত্ত তার সন্ধানই করে নি । এখানে এসেও ভূপতি যথারীতি তার স্বদেশবাসীদের এড়িয়েই চলতেন। পাৰ্ব্বতীর মন মাঝে মাঝে ক্ষুধাতুর হয়ে উঠত। ভূপতিকে বলত, “বাবা, এখানে ত অনেক বাঙালী ভদ্রলোক আছেন । তোমার কি কারুর সঙ্গেই চেন নেই ? নেমস্তয় কর ন দু-এক জনকে । নিজের হাতে ডাল-ভাত রোধে খাওয়াই—আমার ভারি ইচ্ছে করে।” ভূপতি হেসে বলতেন, “আরে পাগলী, যদি এখানে এসেও বাঙালীদের খুজে-পেতে আলাপ করতে হয় তাহলে বাংলা দেশটা কি দোষ করেছিল ? এত খরচপত্র কাপে কি বাঙালীদের সঙ্গে আলাপ করবার জন্তে সাতসমুদ্র পেরিয়ে এলুম ? আর এক্ট ঠাও। দেশে কি ভাত খায় রে পাগলা । নিউমোনিয়া ধরবে যে ; ইচ্ছে হয় বরং একটু সাগুর পুডিং ক'রে আজ থাস্। জানিস্ত ধান জলাভূমির শস্ত, খেলে একেবারে পুরিসি, নিউমোনিয়া, হাইড্রোফোবিয়া-যা খুশী হতে পারে-- সৰ্ব্বনাশ!” বলে কৃত্ৰিম ভয়ে চক্ষু বিক্ষরিত করে তুলতেন। তার বাবার বলার ভঙ্গীতে তার ভয়ানক হাসি পেয়ে যেত। হি হি ক'রে হাসতে হাসতে সে বলত, “তোমার যে রকম জলের আতঙ্ক দেখছি, শীগগির ডাক্তারকে ডাক । বাংলা দেশে এতদিন কাটানোর দরুন তোমার ইতিমধ্যেই হাইড্রোফোবিয়ার বাজ শরীরে ঢুকেছে কি ন পরীক্ষা কর। দরকার ।” মোট কথা, পাৰ্ব্বতীর পিছনের টান বড়-একটা ছিল না। ছেলেবেলা থেকে মা বাবা ছাড়া অন্য আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে বেশী আলাপ করার তার স্বযোগ হয় নি। আর চিরকাল সে