পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

بسيN-26xt প্রবাসী $N98\రి সে কি অনিৰ্ব্বচনীয় আনন্দ । মৃতদেহে নবতর প্রাণস্থষ্টির অপরিমেয় আত্মপ্রসাদ। শুধু কি তাই ? তার এই বিধাতৃত্বের অন্তরালে তার চিত্ত কি অভূতপূৰ্ব্ব কোনও অভিনব চেতনায়, কোনও নবতর উষায় অরুণালোকের রসমাধুর্য্যধারায় প্লাবিত হয় নি ? আপনার দেহমনের ক্ষুদ্র জগতের পরিমিত আবেষ্টনের মধ্যে নিজেকে যেন সে আর ধরে রাখতে পারে না । বৃহৎ একটা আনন্দময় সৰ্ব্বনাশের জুম্মদ প্লাবনে, সমস্ত নিশ্চিন্ত সুনিয়ন্ত্রিত সংসারযাত্রার বিরুদ্ধে নিজেকে ভাসিয়ে না দিয়ে যেন তার তৃপ্তি নেই। মানুষের সঙ্গে মানুষের, পুরুষের সঙ্গে নারীর সর্বপ্রকার বিচিত্র সম্পর্কের অনাস্বাদিতপূৰ্ব্ব মধুর রসে তার চিত্ত বেদনাময় পরিপূর্ণতায় ওতপ্রোত হয়েছে । মানবপ্রেমের বিচিত্র রূপকে সে তার অস্তরের রসোপলব্ধির মধ্যে গভীরভাবে অমুভব করেছে—কথন রোগতাপক্লিষ্ট অসহায় শিশুর জননী রূপে, কখনও স্নেহপরায়ণ সেবানিরতা , দিদির মত, কখনও বা দুঃসময়ের অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত। কিন্তু ফন্তুপ্রবাহের ধারা যেমন সংগোপন অথচ সুনিশ্চিত তেমনই এই সমস্ত সম্পর্কের উপলব্ধির অন্তস্তলে, আরও কি এক অনিৰ্ব্বচনীয় মধুরতর রসের আবেশে তার চিত্তলোক অমৃতময় হয়ে উঠেছে । তার সমস্ত প্রাণের বেদনায়িত আকুলত দিয়ে সে রোগীর মৃতকল্প শরীরে নবপ্রাণ সঞ্চার করেছে । সে অকুভব করেছে—এই ত তার জীবনের চরম চরিতার্থতা। তার প্রিয়তমকে সে আপনার শরীর মন আত্মার স্বনৃততম অংশ দিয়ে স্থষ্টি করে নিয়েছে । সংসার-বিপণিতে বাছাই ও যাচাই করা পণ্যশ্রেণীর নির্বাচন তার নয় । সে তার অন্তরলোকের রসোপলব্ধি, সে তার বহিলোকের অভিনব আত্মোপলব্ধি, সে তার অন্তর-বাহিরের একান্ত সৃষ্টি । এই স্বষ্টির অমৃতময় আনন্দে সে সম্পূর্ণ ভুলে বসেছিল নিজেকে । ভুলেছিল যে, যাকে স্বষ্টি করা সহজ তাকে ফিরে পাওয়া সহজ নয়। স্বষ্টির রহস্যই এই । সে এই ভেবেই পরম নিশ্চিন্তে নিরুদ্বিগ্ন ছিল যে যা একাস্ত করে তারই স্বষ্টি তাতে একাস্ত ক'রে তারই অধিকার। রূঢ় আঘাতে একদিন তার এই মূঢ় বিশ্বাস চুৰ্ণ হয়েছিল। কিন্তু সে কথা পরে হবে। St অনেক ক্ষণ দু-জনে চুপ করেই ছিল। কি বলে এর পর কথা আরম্ভ করবে, কি কথায় পরস্পরের মনের এই গুমোটু কেটে গিয়ে চিত্ত আবার দক্ষিণ-সমীরণের স্নিগ্ধস্পর্শে আনন্দময় হয়ে উঠবে, দু-জনের মধ্যে কেউই তা নিজেদের অস্তরে ঠিক করে উঠতে পারছিল না। শচীন্দ্ৰ ভাবছিল যে, যে-সম্পর্ক তাদের মধ্যে কোনদিন সত্য হয়ে ওঠবার রূপ ও সম্ভাবনা সে কিছুতেই কল্পনা করে উঠতে পারে না সেই সম্পর্কের সম্পদকে জীবনে যে পরমসম্পদ ব’লে গ্রহণ করেছে, তার বঞ্চিত অভিশপ্ত জীবনের জন্তে শচীন্দ্রও কি দায়ী নয় ? তবে এমন কোন অভিনব আত্মদান সে করতে পারে যাতে ক’রে পাৰ্ব্বতীর এই অপরিমেয় ঐশ্বৰ্য্যময় চিত্তে নির্ভরপূর্ণ শাস্তি ও আনন্দের সঞ্চার হয় ! পাৰ্ব্বতীর প্রতি স্নেহ ছিল তার অপরিসীম, বন্ধুতার নিরুচ্ছল রসমাধুর্ঘ্যে সে-স্নেহ অমৃতময় করেছিল তার বিরহক্ষত অস্তরকে । এমন কোন পার্থিব সম্পদের কথা সে চিস্ত করতে পারে না, পাৰ্ব্বতী সম্বন্ধে যা তার অদেয়। তবু যা তার নিতান্ত অস্তরতম, যে বেদন তার নিভৃত হৃদয়ের গোপনে থেকে তার সমস্ত কৰ্ম্মপ্রচেষ্টার মধ্যে প্রাণসঞ্চার করেছে, তার জীবনের নিগূঢ়তম উদেশ্বকে প্রেরণা দান করেছে সেই পবিত্রতম, কঠিনতম, মধুরতম বেদনার গোপন কক্ষে পাৰ্ব্বতীকে সে কেমন করে আহবান করবে ? তবু ত সে তার দু:সময়ের অতুলনীয় বন্ধু, তার প্রাণদাত্রী । দিনে দিনে মুহূৰ্ত্তে মুহূৰ্ত্তে অপরিচিত প্রবাসের একাস্তে পাৰ্ব্বতীরই অস্তরের স্বমধুর পরিচয়ে শচীন্দ্র তার অপরিমেয় দু:খের মধ্যে আনন্দলোকের পরিচয় লাভ করেছে । সেই পাৰ্ব্বতীকে এমন দুঃখ সে কেমন ক’রে দেবে যার আঘাতে পাৰ্ব্বতীর নিঃসঙ্গ সংগ্রামক্লিষ্ট জীবন সমূলে ধূলিসাৎ হয়ে যায়। পাৰ্ব্বতীই প্রথম সেই দুৰ্ব্বিষহ নিস্তব্ধত ভঙ্গ করলে । বললে, “দেখুন, আমাকে বুদ্ধিমতী ব’লে আপনার অনেক প্রশংসা করেছেন, কিন্তু যদি আমার মনের মধ্যে একবার ঢুকৃতে পারতেন তবে আমার অমার্জিত আদিম জড় মনের অপরিসীম নিৰ্ব্বদ্ধিতা এবং বিবেকহীন দুর্জয় অন্ধ মুঢ়তা