আশষাঢ় বঙ্গে মাৎসভ্যতায় مع لايقاعN করিয়াছিলেন। গুজরাটে চালুক্যগণ এবং রাজপুতানা ও মধ্যপ্রদেশে যশোধৰ্ম্মদেব নৃতন রাজ্য স্থাপিত করিয়াছিলেন। স্থান্ধীশ্বরে ( থানেশ্বর ) পুষ্পভূতী-বংশীয় রাজগণ, কান্তকুঞ্জে মৌখরী-রাজগণ নিজ নিজ প্রাধান্ত বিস্তারের চেষ্টায় ব্যাপৃত হইলেন । মগধে ও মালবে সমুদ্রগুপ্ত ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের হতভাগ্য বংশধরগণ লুপ্ত গৌরব পুনরুদ্ধারের বৃথা চেষ্টায় প্রাচীন পাটলিপুত্রের জীর্ণ প্রাসাদে কাল যাপন করিতে লাগিলেন । গুপ্ত-সাম্রাজ্যের অধঃপতনের সঙ্গে সঙ্গে পূৰ্ব্বভারতের রাষ্ট্রীয় গগন ঘনঘটাচ্ছন্ন হইয়া উঠিল। শক্তিশালী দণ্ডধরের অভাবে সমস্ত বঙ্গ, বিহার ও উড়িষ্যায় অরাজকতা উপস্থিত হইয়াছিল। তিব্বত-দেশীয় লাম তারানাথ তাহার বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন যে তৎকালে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে প্রত্যেক ক্ষত্রিয়, ব্রাহ্মণ এবং বৈশু নিজ নিজ অধিকারে রাজা হইয় উঠিয়াছিল ; কিন্তু সমগ্র দেশে কেহ একাধিপত্য কমিতে পারেন নাই। অরাজকতার প্রাচীন নাম মাৎস্তন্যায়। খালিমপুরে আবিষ্কৃত পাল-বংশের দ্বিতীয় সম্রাট ধৰ্ম্মপালদেবের তাম্রশাসনে দেখিতে পাওয়া যায় যে, পূৰ্ব্বভারতের প্রজাপুঞ্জ অরাজকত হইতে রক্ষা পাইবার জন্য গোপালদেবকে রাজা নিৰ্ব্বাচিত করিয়াছিলেন । ૨ অরাজকতার সম্পূর্ণ অর্থ হৃদয়ঙ্গম করিতে হইলে আমাদের খ্ৰীষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর প্রথম ভাগ হইতে ভারতের রাষ্ট্ৰীয় ইতিহাস কিঞ্চিৎ অমুশীলন করিতে হইবে। এই সময়ে যশোধৰ্ম্মদেবের বিশাল সাম্রাজ্য অনন্তে বিলীন হইয়া গিয়াছিল। রেব-তীর হইতে লৌহিত্য পৰ্য্যস্ত বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডের অধীশ্বর দৃঢ় ভিত্তির উপর রাজসিংহাসন স্থাপিত করিতে পারেন নাই। পঞ্চনদে পুষ্পভূতী-বংশীয় নৃপতিগণ প্রবল হইয়া উঠিয়াছিলেন । কান্তকুক্তের মৌখরী-বংশের শেষ নরপতি গ্রহবর্মণ মালবের দেবগুপ্ত কর্তৃক নিহত হইলে, স্থার্থীশ্বর হইতে মগধ পৰ্য্যন্ত সমস্ত দেশ হর্ষবৰ্দ্ধনের করতলগত হইয়াছিল । মগধের স্বপ্রাচীন রাজসিংহাসনে তখন কে যে উপবিষ্ট ছিলেন তাহা এখনও স্থির হয় নাই। বঙ্গদেশে শশাঙ্ক নামে এক জন ক্ষুদ্র ভূস্বামী কিংকালের এই বঙ্গ, বিহার ও উড়িষ্যার উপর একাধিপত্য বিস্তার করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন ; কিন্তু তাহ বেশী দিন স্থায়ী হয় নাই। নিদাঘের প্রবল উতপ্ত বায়ুর সংঘাতে বালুকণার ন্যায় হর্ষের সাধের সাম্রাজ্য কোথায় যে উড়িয়া গেল তাহ কেহ বলিতে পারিল না। র্তাহার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তদীয় সচিব সিংহাসনে আরোহণ করিলেন । ইহার পরে পূর্বভারত বার-বার শত্রু-আক্রমণে পযুদস্ত হইয়াছিল। ডক্টর রমেশচন্দ্র মজুমদার ও স্বৰ্গত সিল্ভী লেভি দেখাইয়াছেন যে ৫৮১ হইতে ৬৭৯ খ্ৰীষ্টাব্দ পৰ্য্যস্ত বঙ্গ বিহারের কতকাংশ তিব্বতদেশীয় নৃপতিগণ কর্তৃক অধিকৃত হইয়াছিল । ইহা ব্যতীত গউড় বহো নামক বাকৃপতিরাজ কর্তৃক প্রাকৃত ভাষায় রচিত একথানি কাব্যে কান্তকুজরাজ যশোবর্মী কর্তৃক সমগ্ৰ পূৰ্ব্বভারত-জয়ের প্রচেষ্টা বর্ণিত আছে। ইহা হইতে আমরা জানিতে পারি যে, যশোবর্ষ। বিন্ধ্যপৰ্ব্বত অতিক্রম করিলে পর 'মগধনাথ’ ভীত হইয়া রাজধানী হইতে পলায়ন করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন ; কিন্তু মগধনাথের সমস্তগণ তাহাতে বাধা দিয়া আক্রমণকারীর সহিত যুদ্ধে প্রবৃত্ত হন । যুদ্ধান্তে যশোবর্ম পরাজিত ও পলায়নপর মগধরাজকে হত্য করিয়া নিজ শৌর্য্যের পরিচয় প্রদান করিয়াছিলেন । এই মগধনাথ গৌড়েরও অধীশ্বর ছিলেন । রায়-বাহাদুর রমাপ্রসাদ চন্দ ও vরাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে মগধনাথ, গুপ্ত-বংশীয় রাজা দ্বিতীয় জীবিতগুপ্ত ব্যতীত আর কেহই নহেন। মগধেশ্বরকে পরাজিত করিয়া যশোবর্ধদেব সমুদ্রতীরে বহু হস্তিযুক্ত বঙ্গাধিপতিকে স্বীয় অধীনতা স্বীকার করিতে বাধ্য করিয়াছিলেন। এখানে বলা প্রয়োজন, প্রাচীনকালে বঙ্গ অর্থে সমগ্র বাংলা দেশকে বুঝাইত না—ইহা পূৰ্ব্ববঙ্গের নামমাত্র । কান্তকুঞ্জের গৌরবরবি অতি শীঘ্রই অস্তমিত হয়। কাশ্মীরের চিত্তমুগ্ধকর উপত্যকা হইতে বহির্গত হইয়া ললিতাদিত্য-মুক্তপীড়ের বিজয়বাহিনী যশোবর্খাকে পরাজিত করিয়াছিল । যশোবর্ষণ যে এক জন ঐতিহাসিক ব্যক্তি সে-বিষয়ে কোনই সন্দেহ নাই। চীনদেশের ইতিহাসে উল্লিখিত আছে যে ৭৩১ খ্ৰীষ্টাব্দে যশোবর্ষণ চীন-সম্রাটের নিকট এক দূত প্রেরণ করিয়াছিলেন । কয়েক বৎসর পূৰ্ব্বে নালন্দা মহাবিহারের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে যশোবর্ষদেবের একটি তাম্রশাসন বাহির হইয়াছে। কান্তকুক্তরাজ পরাজিত
পাতা:প্রবাসী (ষট্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।