পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশষাঢ় তৈরি হবে বোধ হয়। মহিলাটি সেই খেলনা-কুকুরের পেট থেকে একটি রূপার জালে বোন ছোট্ট ব্যাগ বার ক'রে নিলেন-কুকুর-ব্যাগটি আধখোলা অবস্থায় তার কোলের উপর পড়ে রইল। আন্না দেখলে তার মধ্যে সোনার মত চকচকে গোল একটা কেীট রয়েছে, এক থোলে চাবি, আর একটা স্বন্দর রেশমী রুমালের আধখানা দেখা যাচ্ছে । ব্যাগ খুলতেই মূছ একটা সুগন্ধ উঠে ট্রেনের কামরা যেন ভরে গেল । মহিলাটি সেই রূপার বাগ খুলে একটা দু-আনি বার ক’রে ভিখারীর দিকে ছুড়ে দিলেন । আট পয়সা ভিক্ষ একটি মাত্র ভিখারীকে ! না জানি ও কার মুখ দেখে উঠেছিল স্থ,ঞ্জ । আন্ন ভাবলে ঐ ছোট্ট ব্যাগটাতে না জানি কতগুলে। দু-আনিই আছে—কিংবা হয়ত দু-আনি আর নেই, শুধু টাকাই আছে এবার । এইবার মহিলাটি তাকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন--- এখানে বাড়ীতে আমার আর কে আছেন, স্বামী কি করেন, কত দিন হ'ল ওরা এ জায়গায় আছে, ছেলেমেয়ে আছে কিনা, জায়গাটা আল্লার কেমন লাগে হত্যাদি । এক জন সাদা ধবধবে পোষাক-পরা ও মাথায় পাগড়ী-বাধ খানসাম: এসে সেই গাড়ীর কামরার মাঝখানে কোথা থেকে একট। ছোট টেবিল এনে রাখলে । তার পর সেই টেবিলের উপর একটা সাদ। চাদর বিছিয়ে তার উপর সাদা সাদ বাসন, গেলাস, রূপার, কাচের কত কি সব জিনিষপত্র সাজাতে লাগল। আন্ন সঙ্কুচিত ভাবে সেই দিকে আঙ ল নির্দেশ ক'রে মহিলাটিকে জিজ্ঞাস করলে, “এতে কি হবে ?” মহিলাটি হেসে উত্তর দিলেন, “আমার স্বামী এই ষ্টেশনে কাজে নেমেছেন ; তিনি ফিরে এলে আমরা দু-জনে খাব কি না, তাই চাকরট টেবিল ঠিক করছে।” আন্না বৰ্দ্ধিত বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল। দুটো মানুষ শুধু থাবে তারই এত আয়োজন ! ছয়খানা বাসন লাগবে দু-জনের খেতে ? অার ঐ সব রূপার জিনিষপত্র ? ওগুলি দিয়ে খাবার সময়ে এদের কোন প্রয়োজন সাধিত হবে, সঙ্কোচে আন্না জিজ্ঞাসা করি-করি করেও করে উঠতে পারলে না | একটু চুপ ক’রে থেকে আন্না জিজ্ঞাসা করলে, “তোমরা কি বাঙালী ?” 8>一》四 তুলনায় Nరిషాన్బి মহিলাটি হেসে উঠলেন । “বাঙালী না হ’লে এতক্ষণ ধরে বাংলায় আপনার সঙ্গে কথা বলছি কি ক’রে । আমরা একেবারে বাঙালী ! এই আপনি যেমন বাঙালী হিন্দুর মেয়ে, আমি ঠিক তেমনি বাঙালী হিন্দু ঘরেরই মেয়ে, একটুও তফাৎ নেই।” ট্রেনের বঁাশী বেজে ওঠাতে মহিলাটি নিজের বা-হাতের দিকে তাকালেন । আন্না দেখলে তার কবজীতে সোনার ছোট্ট ঘড়ি চেন দিয়ে বাধা, তাহতে তিনি সময় দেখছেন । কি ছোট ঘড়িটা ! ওতে কি কাটা দেথা যায় ? আল্লার হচ্ছে হ’ল তার হাতখানি ধরে ঘড়িট একবার ভাল ক’রে দেখে নেয়। অতটুকু ঘড়ি টুং টুং ক'রে বাজে কিনা কে জানে । মহিলাটি মুখ তুলে বললেন, “সাড়ে সাতটা হ’ল, আমাদের ট্রেন এইবার ছেড়ে দেবে । চলুন, আমি আপনাকে আপনার বাড়ী অবধি পৌছে দিয়ে আসি ।” আন্ন। তার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ী থেকে নেমে এল । বাড়ীর দরজায় তাকে পৌছে দিয়ে তিনি বললেন, “আচ্ছা, আসি তাহ’লে, নমস্কার । বেশ লাগল অনেক দিন পরে সঙ্গে দুটো বাংলা কথা কয়ে । হাজার হোকৃ বাঙালী আমরা—বাঙালীর মুখ কিছুদিন না দেখতে পেলেই প্রাণ হাপায় । আমাকে মনে রাখবেন ত ?” আল্লা প্রতিমমস্কার করলে না, কিন্তু ঘাড় নেড়ে জানাল ধে মনে রাখবে | মহিলাটি আবার খুটপুট করে গিয়ে নিজের গাড়ীতে উঠলেন । গাড়ীর সেই আরসার সামনে দাড়িয়ে চিরুণী দিয়ে চুলে কি সেন করতে লাগলেন । তার মাথার উপর থেকে ট্রেনের কামরার উজ্জল আলো পড়ে তার সেই হাতের ঘড়ি ও চুড়িবালার গোছ ঝকঝকৃ করতে লাগল। একটু পরেই আর একবার বাঁশী বাজিয়ে ট্রেন ছেড়ে দিলে— মহিলাটি আয়নার সামনে থেকে সরে এসে জানল দিয়ে মুখ বাড়িয়ে কি যেন দেখতে লাগলেন। প্লাটফর্মের প্রাস্তে একটি সাহেব দাড়িয়ে ছিলেন-আল্লা দেখলে সেই সাহেবটি ঐ চলন্ত ট্রেনে সেই কামরায় উঠে পড়লেন । দেখতে দেখতে ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছাড়িয়ে চলে গেল ; আমার ঘরের সামনে আবার অন্ধকার ও নিস্তব্ধতা আপনার প্রসাধনরত