প্রতিদ্বনি স্ত্রীতারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার বাহিরে বেহারে পাটনায় আমার মামার বাড়ী। দিদিমা আম খাইবার নিমন্ত্রণ করিয়াছিলেন । পৌছিলাম বেলা সাড়ে দশটায়ু । সঙ্গে সঙ্গে বড়মাম সোরগোল তুলিলেম—আরে বংশীয়, শিবুর জন্যে দোতলার সিড়ির পাশের ঘরট সাফ ক'রে ফেল। ওর আবার একটু নিরিবিলি চাই। সঙ্গে সঙ্গে নিজেও উঠয় পড়িলেন । দিদিম। আমার সৰ্ব্বাঙ্গে স্নেহ-কোমল হস্ত বুলাহয় বলিলেন- বডড রোশ হয়ে গেছিস শিবু-র তোর বড় ময়লা হয়েছে। কি উত্তর দিতে গেলাম, কিন্তু বড়মামার কণ্ঠস্বরে বাধা পড়িল । তিনি বলিলেন–ওরে, তোর রসরাজ পাগল মারা গেছেন। আমাদের বাড়ীতেই মারা গেলেন। দিদিম৷ বলিলেন--রসরাজ সমান্ত লোক ছিলেন না ; তিনি সিদ্ধ হয়েছিলেন। পাগল তিনি সেজে থাকতেন । বড়মামা বলিলেন–শিবু রসরাজ পাগলকে বড় ভালবাসত ম! । আমি রসরাজ পাগলের কথাই ভাবিতেছিলাম। ভালবাসিতাম কি ন জানি না, কিন্তু তাহার পাগলামি আমার বড় ভাল লাগিত । পাগল, সংসারে একান্তভাবে আপনার-জন-হীন পথচারী পাগল ছিল সে, অহরহ ফু-ফু করিয়া ফুৎকার দিয়া ফিরিত । কি যেন উড়াইয় দিতে চাহিত। বহুবার বুঝিবার চেষ্টা করিয়াছি, বুঝিতে পারি মাই ! আপনার অজ্ঞাতসারেই একট। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিলাম । বড়মামীম জলখাবারের ডিস নামাইয় দিতে আসিয়া আমাকে লক্ষ্য করিয়! মুম্বুকণ্ঠে প্রশ্ন করিলেন - পাগলের মৃত্যু-সংবাদে দুঃখ হ'ল নাকি বাবা ? স্নান হাসি হাসিয়া বলিলাম -দুঃখ একটু হ'ল বইকি মামীম । মৃত্যুসংবা এমনি একটা সংবাদ যে, দুঃখ না করে মানুষ পারে না ! আশ্চয্যের কথা--আমার কথা সমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গেই উপস্থিত সকলেরই বুক হইতে এক একটি দীর্ঘনিশ্বাস সমবেত খেদের প্রকাশ করিয়া ঝরিয়া পড়িল । তার পর একটা বিয4 নিস্তব্ধতায় সকলেই কয়েক মুহূৰ্ত্তর জন্য আচ্ছন্ন হইয়া পড়িলেন। —বড়াবাবু, উ পাগল বাবুকে চিজবিজের গঠরীঠো 6 o' ---> y কোথা রাখবে ? -বংশীয় চাকর আসিয় প্রশ্ন করিয়া নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করিল। বড়মামা বলিলেন—ও, রসরাজদা’র পুট্লীটা বুঝি ওই ঘরেই আছে । আঃ, আমারও মনে হয় নি, গঙ্গায় শুটা আর ফেলেও দেওয়া হয় নি ...আচ্ছ একপাশে রেখে দে, কাল ওটাকে গঙ্গায় বিসর্জন দিয়ে আসব। 肇 變 亲 স্নান-আহার শেষ হইতেই বড়মামা বলিলেন—যাও একটু শুয়ে পড় শিবু । সমস্ত রাত্রি ট্রেনে এসেছ, একটু বিশ্রাম করা দরকার } বিশ্রাম করিতেই গেলাম, আগে হইতেই বিছানা প্রস্তুত ছিল, হাত পা ছড়াইয়া শুছয় বেশ আরাম পাইলাম । আষাঢ় মাসের দ্বিপ্রহর, বেহারে এখনও বৃষ্টি নামে নাই । বাতাস প্রথর উত্তপ্ত । রাস্তার দিকের খোলা-জানালা দিয়া তপ্ত বায়ুপ্রবাহ আসিয়া ঘরে প্রবেশ করিতেছিল। এ উত্তাপে গায়ে ঘাম হয় না, সৰ্ব্বাঙ্গে কেমন দাহ অনুভূত হয়। জামালাট বন্ধ করিয়া দিলাম । গরমে ঘুম কিছুতেই আসিল না। মনে পড়িয় গেল রসরাজ পাগলকে । মাটিকুলেশন পরীক্ষা দিয়া সে-বার যখন এখানে আসি তখনই তাহাকে প্রথম দেখি । সে আঞ্জ বাইশ বংসর হইয়া গেল। এই বাড়ীরই বাহিরে রাস্তত্ব ধারের ফালি বারানার্টীয় দাড়াহয়ছিলাম। পথে তখনও গঙ্গাস্নান-যাত্রীদের ভিড় চলিতেছিল । ওদিক ইহঁতে ষ্টেশন-ফেরৎ এক্কাগুলি দ্রুতবেগে শহরের ভিতর ছুটিয়া চলিয়াছে। —অরে হায়-হায়-হায় ! কতকগুলি পথিক আক্ষেপেক্তি করিয়া উঠিল । অন্তদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল, চকিত হইয় মুখ ফিরাইয় দেখিলাম ছোট একটি কুকুরের ছান এক চাপা পড়িয়ছে। এক্কাখানা দ্রুতবেগে অদৃগু হইয় গেল । আহত জীবশিশুটার মরণার্তমাদে স্থানটা অসহনীয় করণ হইয়া উঠিল । তবুও ছুটিয়৷ সেইখানেই নামিয়া গেলাম। হতভাগ্য পশুটির ঠিক কোমরের উপর দিয়া একটা চক চলিয়া গিয়াছে। মরণ যন্ত্রণার আক্ষেপে সম্মুখের পা দুইটি ছুড়িয়া অবিরাম আৰ্ত্তনাদ করিতেছে । মুখ দিয়া রক্তও গড়াইয়া পড়িতেছিল। দেখিতে দেখিতে তাহাকে ঘেরিয়া ছোট একটি ভীড় জমিয়া
পাতা:প্রবাসী (ষট্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪১১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।