পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অnষাড় দিকে চাহিয়া একটু হাসিলাম। তখনও দূরে গঙ্গার তীরভূমিতে প্রতিধ্বনি উঠিতেছিল—ফু-ফু—ফুঃআরে ফু: ! বিরাম নাই, বিশ্রাম নাই, পাগল প্রাণপণে ফুংকার দিয়া কি ষে উড়াইয়া দিতে চায় ন-বুঝিয়া আবার একবার হাসিলাম । সেদিন হইতে পাগল সম্বন্ধে সাবধান হইয়া গেলাম। তবে প্রায় দেখিতাম পাগল চলিত আর ফুৎকার দিয়া কি ধেন উড়াইয়া দিবার:চেষ্টায় চীৎকার করিত—ফু-ফু—আরে ফুঃ ! 輸 鬱 登 ইহার পর অনেক দিন এখানে আসা ঘটিয়া উঠে নাই । চার-পাচ বৎসর পর পর কয়েকবার আসিয়াছি কিন্তু পাগলকে আর দেখি নাই। জিজ্ঞাসা করিয়া জানিয়াছিলাম, পাগল কোথায় চলিয়া গিয়াছে। গতবার, এই এক বৎসর পূৰ্ব্বে আবার পাগলের সহিত দেখা হইয়াছিল। মনে পড়িল অপরাহ্লে বাহিরের বারান্দায় বসিয়া মামাদের সহিত গল্প করিতেছি, এমন সময় এক বৃদ্ধ ধীরে ধীরে আসিয়া নীরবে বরাদার এক পাশ্বে বসিয়া পড়িল । বড়মামা বলিলেন- ওরে কে আছিল, মাকে বল রসরাজদা এসেছেন । সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুচ্চমকের মত আমার মনের মধ্যে রসরাজ পাগল জাগিয়া উঠিল। আমি তীক্ষ দৃষ্টিতে বৃদ্ধের দিকে চাহিলাম। ই্য। সেই ; কিন্তু অনেক পরিবর্তন ঘটিয়া গিয়াছে । দীর্ঘ সবল দেহ জরায় ভারে যেন ভাঙিয়া পড়িয়াছে ; সুদৃঢ় পেশীগুলি শিখিল-শীর্ণ, পাগলের ভাবও যেন অনেকটা শাস্ত সুস্থ ! দেখিলাম আজ আর সে প্রায়-উলঙ্গ নয়, খাটো হইলেও পরিধানে পূরা একখানি কাপড়ই রহিয়াছে। পাশে একটি ছোট পুটুলী দেখিলাম, একখানা কম্বলও বেশ ভাজ করিয়া অন্য পাশে রহিয়াছে দেখিলাম । পাগল অত্যন্ত মুদ্ধস্বরে আপন মনেই বিড় বিড় করিয়া কি বলিতেছিল । মনে হইল ইংরেজী, একটা লাইনও যেন বুঝিতে পারিলাম—“There heaven and earth than are dreamt of in your Philosophy.* বড়মামা বলিলেন–চিনতে পারছিল ? উনি সেই পাগল রসরাজবাবু! পাগলকে দেখিতে দেখিতেই বলিলাম—ই্যা । এখন অনেক শাস্ত হয়েছেন দেখছি ! বড়মামা বলিলেন—হঁ্যা। লোকে বলে উনি সিদ্ধ হয়েছেন। জানি না, তবে এখন অনেক শাস্ত । ওই, দিনে একবার কোন বাঙালী ব্রাহ্মণের বাড়ী যাবেন, বিছুক্ষশ অপেক্ষ করবেন, তাতে যদি গৃহস্থ খেতে দিল ত খেলেন, নইলে উঠে চ লৈ যাবেন । are more things in প্রতিস্থনি 経●● মেজমামা বলিলেন—বাঙালীর সকলেই ওঁকে ভালবালে। পরবার কাপড়, শীতে কম্বল অনেকে কিনে দেন । কিন্তু উনি সবচেয়ে কমদামী জিনিব ভিন্ন কিছু নেন না। বুঝিলাম পাগল অনেকটা প্রকৃতিস্থ হইয়াছে, মৰ্য্যাদাবোধ সে কতক পরিমাণে ফিরিয়া পাইয়াছে । এই সময় খাবার হাতে করিয়া নিজে দিদিমা আসিয়া উপস্থিত হইলেন। পাগল খাবারের থালা সম্মুখে রাখিয়া কি যেন ভাবিতেছিল। বড়মামা বলিলেন—খান রসরাজদা ! পাগল বলিয়া উঠিল—বিষ । সকলে চকিত হইয়া উঠিল, দিদিমা বলিলেন—বিষ কি বলছেন ? পাগল বলিল—সংসারে সমস্ত খাদ্যের মধ্যে— অৰ্দ্ধপথে নীরব হইয়া যেন আরও থানিকটা ভাবিয়া লইয় বলিল—সংসারের সমস্ত-কিছুর মধ্যে ক্ষয়শক্তি বিষ আছে। খাদ্যেও আছে, পুষ্টিও করে আবার ক্ষয়ও করে । আমি বলিলাম—তাহলে বিষামুত বলুন, শুধু বিষ বলবেন কেন ? পাগল আমার মুখের দিকে চাহিয়া বলিল—ইা । আর একজন বলেছিল ।...কিন্তু এ ভদ্রলোকটি কে রবি ? রবি আমার বড়মামার নাম । বড়মামা বলিলেন— আমার ভাগ্নে—মেজদিকে মনে আছে—তারই ছেলে । পাগল বলিল—মেজদি তোমার মরে গেছে ? দিদিমা শিহরিয়া উঠিলেন । বডমামা বলিলেন—ন, মরবেন কেন ? এই ত সেদিন এসেছিলেন, আপনাকে খাবার দিলেন—-মনে পড়ছে না ? পাগল আহারে মনোনিবেশ করিয়া বলিল—বেশ-বেশবেশ ।...আচ্ছ, তোমার মেজদি কি অনেক দিন বেঁচে আছেন--এক-শ দু-শ বছর—হাজার বছর ? সকলে এবার হাসিয়া উঠিল । বড়মাম বলিলেন – হাজার বছর কি মাতুম বঁাচে রসরাজদ' ? পাগল উত্তর দিল না। একটা গ্রাস মুথে পুরিয়া চোখ বুজিয়া চিবাইতে বসিল । মুখের গ্রাস শেষ হইয়া গেল, সে তেমনি ভাবে বসিয়া রহিল। ক্ষণকাল পর সহসা মাথা নাডিয়া ফুৎকার দিয়া উঠিল—ফু-ফু:–আরে ফু: ! কিন্তু পূর্বের সে বলিষ্ঠতা বা তীক্ষতা নাই—এবার দেখিলাম ক্লাস্ত ভঙ্গীতে শ্রাস্ত কণ্ঠস্বর । কিছুক্ষণ পর আবার সে শাস্ত হইয়া খাইতে বসিল । আহার শেষ করিয়া হাত-মুখ ধুইয়া আপনার পুটুলীটি ও কম্বলখানি লইয়া বহির দরজার পথ ধরিল । কিন্তু কি খেয়াল হইল, সে ফিরিয়া দাডাইয়া আমার দিকে চাহিয়া বলিল কি কথাটি বললেন আপনি ? কি বিষ-? —বিষামৃত ! —ই্য, হ্যা, বিষমৃত! কথাটা জানি কিন্তু মনে থাকে