●oB প্রবাসী SNථාHNO
- ১৯৯৩ সালের ১২ই মার্চ। আজ হরিসভায় এক পরিব্রাজক ভাগবৎধৰ্ম্ম সম্বন্ধে আলোচনা করিবেন। পরিত্রাজকটি নাকি পূৰ্ব্বে এক জন বিখ্যাত পণ্ডিত ছিলেন। সন্ধ্যায় বাহির হইব এমন সময় রসরাজ আসিয়া উপস্থিত হইল। কথাটা বলিয়া বলিলাম—চল গুনে আসি ।
রসরাজ মহা আপত্তি তুলিল, বলিল—তার চেয়ে গঙ্গার ধারে বসে চানাচুর খাই গে। বহুকষ্টে অবশেষে অভিমান করিয়া তাহাকে রাজী করিলাম। রসরাজের এই এক মহাদোষ । চেষ্টা করিয়া সে লঘুচিত্ত হইতে চায়, Eat, drink and be merry—কথাটাকে যেন সার সত্য বলিয়া মানিয়া লইয়াছে ! হরিসভায় প্রবেশ-মুখে রসরাজ দাড়াইয়া বলিল, না:– তুই যা, আমি যাব না। আশ্চৰ্য্য হইয়া বলিলাম—কেন ? অদ্ভুত একটা ভঙ্গী করিয়া সে বলিল—আমার ঠোট নাক আর কাধের কাছগুলো কেমন হুড় সুড় করছে। বিরক্ত হইয়। বলিলাম—তাতে কি হয়েছে ? মহাগম্ভীর ভাবে সে বলিল—ঠোট আর পালক গজাবার লক্ষণ পাচ্ছি । ওখানে গিয়ে জোড়হাত করে বসলেই আমি গরুড়পক্ষী হয়ে যাব । বলিয়াই সে হাসিতে হাসিতে চলিয়া গেল । আমিও আর ডাকিলাম না, দেখিলাম একছড়া বেলফুলের মালা কিনিয়া, একটা এক্কাতে সওয়ার হইয়া বলিল—চল ষ্টেশন । নীলমাধব বাৰু সে পৃষ্ঠাটা উন্টাইয়া বলিলেন—তার পরের দিন—১৩ই মার্চ । “সকালেই রসরাজ আসিয়াছিল, তাহার সহিত কথা বলি নাই । সে-ই বলিল - রাগ করেছিস ? কঠোরভাবেই বলিলাম—হঁ্যা । —কেন ? —সে প্রশ্ন করতে তোর লজ্জা হয় না ? মামুষের জীবন কি হালকা পালক যে, বায়ুমণ্ডলে ভেসে ভেসে বেড়াবে ? অনেক ক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া সে বলিল—দেখ, এটা এখন আমার অভ্যেস হয়ে গেছে। কিন্তু চেষ্টা ক'রে আমি এটা আরও করেছি। তিরস্কার করিয়া বলিলাম—জানি, কিন্তু কেন ? তার যুক্তি কি ? সে তাহার অভ্যন্ত রহস্তের ভঙ্গীতে বলিল—মাফ ! তর্কে আমি হার মানছি। তর্ক হ'তে বিরক্তি, বিরক্তি হ'তে ক্রোধ, ক্রোধ হ’তে অনর্থ ! মাফ ! আমি বিরক্তিভরে চুপ করিয়া রহিলাম। সে বলিল হাস ভাই একটু! আমি তবুও চুপ করিয়া রহিলাম। এবার সে মুদ্ধস্বরে বলিল-আমাদের বংশের রোগের কথা তুই ভুলে গেলি ? ভাবপ্রবণতাকে আমি বড় ভয় করি নীলু; সেই জন্তে বি-এ পরীক্ষাতে আমি ফিলজফি নিই নি। সে ত তুই জানিস। সম্মুখে দৰ্পণ ছিল না, দেখি নাই আমার প্রতিবিম্বের কি রূপ হইয়াছিল, কিন্তু মনে মনে বড় ছোট হইয়া গেলাম, সকরুণ বেদনাও অতুভব করিলাম।” এই সময় চাকরটা চা ও জলখাবার লইয়া আসিল । 登 登 彎 কিছুক্ষণ পর নীলমাধববাবু আবার পড়িলেন–১৯•৩, ২৭শে নবেম্বর । “আজ গজার ওপারের চরে বেড়াইতে গিয়াছিলাম । আমি ও রসরাজ। লোকে ঠাট্টা করিয়া আমাদের বলে মাণিকজোড় । গঙ্গা ও গণ্ডকের সঙ্গমস্থলে এক সাধুকে দেখিলাম। সাধুকে দেখিয়া আমার ভক্তি হইল। লোকটি প্রাচীন, ঈশ্বরকে না দেখিলেও বহুকে সে দর্শন করিয়াছে। রসরাজকে বলিলাম—যাবি সাধুর সঙ্গে আলাপ করতে ? সে গান ধরিয়া দিল, “যে যাবার যা সই রে, আমি ত যাব না জলে ” আমি বিরক্ত হইয় তাহাকে ফেলিয়াই সাধুর কাছে চলিয়া গেলাম। আমি সাধুকে প্রণাম করিলাম, তিনি প্রতিনমস্কার করিলেন। সাধু পরিষ্কার বাংলায় বলিলেন— আমুন বাবা, বম্বন । আমার ঘর নেই বাবা, আসন দিতে পারছি না ! আমি সবিনয়ে বলিলাম, না-না, কোন প্রয়োজন নেই বাবা । বেশ বসেছি আমি । সাধু বলিলেন-এপারের চরে বুঝি বেড়াতে এসেছেন ? —ই্যা বাবা, আমি আর আমার ঐ বন্ধুটি । অঙ্গুলিনির্দেশে আমি রসরাজকে দেথাইয়া দিলাম। ছোট ছেলের মত এত ক্ষণ সে বালির ঘর তৈরি করিতেছিল । হঠাৎ উঠিয়া আসিয়া আমাকে বলিল— আয় ফিরব । সাধু বলিলেন—বম্বন বাব, বহন । রসরাজ উত্তর দিল—না বাবা, ধন্য হয়ে যাব । সাধু হাসিয়া বলিলেন—খন্ত হওয়া ত সোজা নয় বাবা । ধন্ত হতে পার চাই, ধন্য করতে পারাও চাই । মণি এবং কাঞ্চন দুইই স্কুলভ বস্ত । রসরাজ এবার চাপিয়া বসিল, বলিল—আপনি ধন্ত হয়েছেন বাবা ? সাধু এ কথার কোন জবাব দিলেন না। কিছু ক্ষণ পর বলিলেন–আচ্ছা বাবা, আপনাকে একটি প্রশ্ন করব । বাধা দিয়া রসরাজ বলিল—মাক্ষ, কলেজে মাইনে দিই তাই পরীক্ষা নেয়, উপরন্তু ফাউ নেয় কি। আপনার কাছে পরীক্ষা দিতে হ'লে কিছু লাগবে না ত ? সন্ন্যাসী এক বিচিত্র হাসি হাসিলেন, বলিলেন–সংসারে