পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশষণঢ় ছাড়িয়া দিয়া আবার সেই মৃত্যশীল কোমল পা-দুখানি চাপিয়া ধরিল । অবোলা ছোট ভাইটির অমুনাসিক অসম্মতি প্রকাশে বাহু মজ দেখিতেছে ঠিক এমনি সময়ে মলিনা ঘরে ঢুকিল । ক্রীড়ামত্ত বাস্থ তাহা টের পায় নাই । মলিনার মুখে-চোখে আনন্দের চাপা হাসি। ডাকিল, “কি হচ্ছে রে চোর !” বাস্থ মুখ তুলিয়া মাকে দেখিয় ছুটিয়া আলমাবার আড়ালে গিয়া মুখ লুকাইল । “এr, তুই এমনি রোজ লুকিয়ে লুকিয়ে চোবের মত ভাইয়ের সঙ্গে খেলা করিস। দাড়া, সবাহকে বলে দিচ্ছি।” মলিন হামিতে হাসিতে আলমারীর কাছে অগ্রসর হইল । দণ্ডায়মান বাস্থ বসিয়া পড়িয়া দুষ্ট ঠাঢ়র গকে মুখ গুজিল । ম! অ’দর করিয়া তাহার মাথাটি তুলিবার চেষ্টা করিতেই সে মেঝেতে উপুড় হইয় গুইয়ু পড়িয়া হাতের কনুইয়ের ভজে মুপ লুকাইল । মলিন গল ছাড়িয় ভকিল, “ম, একবার এ-ঘরে এস, তোমার নাতির কীর্তি দেখে যাও।” ন সু সহসা উঠিয় শক্ত করিয়া দুই হাতে জননীর ং টু জড়াইয়া তাঙ্গার শাড়ীর ভাজে সলজ্জ মুখখানিকে গোপন করতে চাহিল । মা তাহার জনে জামুক, আর কেহ যেন এই অপযশের কথা ন শুনিতে পায় । “লুকিয়ে মাগো, কি ঘেমার কথা !" মলিন তাহাকে কোলে তুলিয়া হাসিতে হাসিতে বাহির হইয় গেল । কিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে ভাব ! তবু বাহ সম্পূর্ণ ধর দেয় না। সমস্ত খেলন সে ভাইকে দিয়াছে। রাত্রে আজকাল ভাইটির পাশেই মা'র বিছানায় শোয় । ভাইয়ের জন্য যে মোটেই দরদ মাষ্ট এমন নহে । খোকাকে একলা ঘরে ফেলিয়৷ দৌড়িয় রান্নাঘবে গিয়া জননীকে পবর পৌছায়, শিগগির এম মা, খোকন যে কাছে " তথাপি উপার্জনের অংশ ভাইকে এখনও দিতে রাষ্ট্ৰী || গ্রামে খুব বানরের উপদ্রব। এই জীবগুলিকে বহির পিঠ পিঠি 8ー2。 সবচেয়ে বেশী ভয়। ঘুমের চোখে যখন সে কিছুতেই খাইতে চায় না, ঐ এল রে’ বলিলেই তাহার তন্দ্র ভাঙে, সকল আপত্তি টুটিয়া যায়। মলিন ভয় দেখায়, এবার সেই যে বড় লালমুখো বাদরটা—মনে আছে ত ?—সেটা আবার যখন আসবে, ভাইকে তোর দিয়ে দেব। নিয়ে যে চলে যাবে, আর ফিরিয়ে দেবে না। তুই রাতদিন কেবল হিংসে করিস।” বাস্থ হাসে। মা যথাসাধ্য গম্ভীর হইয়া বলে, “হাস্ছিস্ কি, সত্যি সত্যি দেব।” থানিক ক্ষণ চুপ করিয়া মলিন জিজ্ঞাস করে, “বাদরটাকে দিয়ে দেব-কি বলিস্ ?” বাস্ত সম্মতি জানায় । আর একদিন ডাইনীর মত কদাকার কালে বুড়ী পাগলীট ভিক্ষা করিতে আসিলে ঠাকুরম ছোট থোকাকে তাহার কাছে লইয়া গিয়া বামুকে দেখাইয়া কহিলেন, “ওকে দিয়ে দিই। ওই ঝুলির মধ্যে ক’রে নিয়ে যাবে।—কি গো, আমাদের রাঙা টুক্‌টুকে ছেলেটি নেবে তুমি ?” বুড়ী রহস্য বুঝিতে পারিয়া হাসিয়া বলিল, “মেব-দাও এই ঝুলির মধ্যে ।” বাল্প পিছন হইতে ঠাকুরমার অাচল টানিয় তাহাকে ঘরের মধ্যে আনিতে চাহিল, অথচ মুখ ফুটিয়াও বলিবে না,— ভাইকে দিও না । ও-ঘর হইতে মলিন হাসিয়া কহিল, “দীও মা, দিয়ে দাও, ওর আপদ-বালাই চুকে যাকৃ।” ঠাকুরমা নাতির দিকে মুখ ফিরান। নাতি আমনি লজ্জায় চৌকাঠের আড়ালে অদৃশ্ব হয়। সেদিন রবিবার । স্কুল নাই । বিনয়ভূষণ ঘরে চৌকির উপর বসিয়া ত্রৈমাসিক পরীক্ষার খাত দেখিতেছে। মুখুজ্জেগিল্পী তরকারী ফুটিতে বসিয়াছেন । মলিন রান্নাঘরে । বাস্থ আজ সারা সকাল পুকুর-পাড়ে ও-বাড়ীর টুনি ও টেপীর সঙ্গে জলকাদা লইয়া ঘর-বাড়ী থেলিয়া এইমাত্র ঘরে ফিরিয়া আসিয়াছে । হঠাৎ তাহার ভাইয়ের কথা মনে জাগিল । কিন্তু থোকা তাহার বিছানায় নাই। ও-ঘরে গেল, সেখানেও নাই ।