পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আগষণচ ভাল, কোনও মাড়বাড়ী শেঠের দান-পাক ঘরবাড়ী, কৃপ, রন্ধনশালা, দ্বারের কাছে হালুয়াই, চালডালের দোকান, এমনি সব ব্যবস্থাই আছে, স্বতরাং দু-এক দিন এখানে থাকা মনস্থ করিলাম। মুখ-হাত ধুইয়া পুরভোজনে মনোনিবেশ করা গেল। ফিরিয়া দেখিলাম কুঠরীটি এক বরযাত্রী দলের ভিড়ে ভরিয়া গিয়াছে। কাজেই অন্য ঘর দেখিতে হইল । একল৷ দিন কাটানো ভার। রাত্রি কোন প্রকারে কাটিয়া গেল। পরদিন মথুরাবাবুর সঙ্গে দেখা হইল। শুনিলাম তিনি রাত্রেই আসিয়াছেন । আমার অল্প জ্বর হইয়াছিল। এখানে ভাতের ব্যবস্থা নাই, মথুরাবাবু তাহার এক বন্ধুর বাড়ীতে প্রাত্যহিক ভাতের বা , gা করিয়া দিলেন । অনেকক্ষণ কথাবার্তা-গল্পের পর দশটার সময় মথুরাবাবু ফিরিয়া গেলেন। এখন আমাকে নেপালযাত্রার সঙ্গী বন্ধুদের প্রতীক্ষা করিতে হইবে । বিকালে এক জন আসিলেন, অন্য সঙ্গীদের সম্বন্ধে শুনিলাম এক জন অসুস্থ এবং আর এক জন ধাৰ্থ স্থগিত করিয়াছেন । ধিনি আসিয়াছেন তাহারও দৌড় এইথান পৰ্য্যস্তত্ব। মুতরাং আর প্রতীক্ষা একাকীই করায় কোন লাভ নাই, - আমার কাব্যের গতি 8&S অগ্রসর হইতে হইবে। যাহা হউক, ইহাতে নিরাশ হইবার কোনও কারণ দেখিলাম না, কেননা একাকী পথ চলাই ত আমার অভ্যাস । যে বন্ধু আসিয়াছেন তাহার এতটুকুর জন্য ছাপ রা হইতে এতদূর আসার কষ্ট ভোগ করিতে হইল, কিন্তু উপায় ছিল না, কেননা আমার পাথেয় এবং যাত্রার পক্ষে প্রয়োজনীয় সব জিনিষপত্রই তাহার কাছে ছিল। বন্ধুবরের ইচ্ছা বিকালের গাড়ীতে রক্সেীল ফিরিয়া যাওয়া । আমিও এখানে অপেক্ষা না করিয়া তাহার সঙ্গে রক্সৌল চলিলাম, কেননা তাহার সঙ্গে আরও কিছুক্ষণ থাকাও হইবে এবং রক্সেীলে গাড়ি চড়াও সহজ হইবে, যাত্রীর যেরূপ ভিড় তাহাতে মাঝপথে বীরগঞ্জে ওঠা সম্ভব হইবে না । এই ভাবে বন্ধুর সঙ্গে পুনৰ্ব্বার ভারতসীমানার এপারে আসিলাম, এবং সেখানে তাহার নিকট দীর্ঘকালের বিদায়ু লইয়। অমলেপগল্পের গাড়ীতে উঠিলাম । গাড়ীতে ষাত্রা আরামেই হইল কিন্তু পদব্রজে যাওয়ার আনন্দ ত্যহাতে ছিল না। সন্ধ্যার সময় গাড়ী ঘোর জঙ্গলের ভিতর দিয়া চলিল এবং একটু বেশ রাত্রেই অমলেথগঞ্জ পৌছিলাম । আমার কাব্যের গতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক সময় বয়স যখন অল্প ছিল তখন নুতন কবিতা লিখে ন-শুনিয়ে স্থির থাকতে পারতুম না, লোকের উপর অনেক অত্যাচার করেছি। মনে বিশ্বাস দৃঢ় ছিল যে প্রশংসা পাব । ধেীবনের শেষ প্রাস্ত পৰ্য্যস্ত এই উৎসাহ ছিল ; আমার বন্ধুমণ্ডলীতে যারা তখন ছিলেন, তাদের আমি নূতন লেখা পড়িয়ে শোনাতুম ; এমন কি গাড়ীভাড়া করেওঁ শুনিয়ে এসেছি । সে উৎসাহ অনেক দিন চলে গেছে । অনেক দিন ধরে, যেটা লিখি তা লোককে শোনাবার আগ্রহ জন্মায় না ; এখন এই পরিবর্তন হয়েছে, একলা লিখে সেটা রেখে দিই। মনে হয় কবিতা যখন ছাপা হত না তখনই তার স্বরূপ উজ্জল ছিল ; কারণ কণ্ঠে আবৃত্তিতেই ছনের বিশেষত্ব ভাল ক'রে প্রকাশ পায়। ছাপায় আমরা চোখ দিয়ে কবিতাকে দেখি, তার পংক্তি, গঠন লক্ষ্য করি । মনে মনে ধ্বনি উচ্চারণ ক'রে কবিতাকে সম্ভোগ করতে আমরা আজকাল শিখেছি । কিন্তু কবিতা নি:শবে পড়বার বস্ত নয়, কণ্ঠস্বরের মধ্য দিয়েই তার রূপ ভাল ক'রে প্রকাশ পায়, স্পষ্ট হয়ে ওঠে । বাল্যকালের সেই ইচ্ছাই ছিল স্বাভাবিক—শোনালেই কবিতার সম্পূর্ণ রস পাওয়া যায়, নইলে অভাব ঘটে। ইদানীং পড়ে শোনাবার আগ্রহ যে কমে গেছে তার কারণ আছে । বহুকাল ধরে কবিতা লিখছি, আপনার মেজাজ অনুসারে শস্ব-নির্বাচন করেছি, আপনার ভাবে