পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8(?ー、 লিখেছি, কারু নকল করতে যাই নি। অল্প বয়সে প্রথমট কিছুকাল অন্যের অমুকরণ অবশ্ব করেছি—আমাদের বাড়িতে যে কবিদের সমাদর ছিল মনে করতুম তাদের মত কবিতা লিখতে পারলে ধন্ত হব—তাই তখনকার প্রচলিত ছন্দ অনুকরণের চেষ্টা অল্পকাল কিছু করেছি। অকস্মাৎ এক সময় খাপছাড়া হয়ে কেমনভাবে নিজের ছন্দে পৌঁছলাম। শুধু এইটুকু মনে আছে, একদিন তেতলার ছাদে শ্লেট হাতে, মনটা বিষয়-কাগজে পেন্সিলে নয়—শ্লেটে লিখতে অভ্যাসের পরিবর্তনেই হয়ত ছন্দের একটা পরিবর্তন এল যেটা তৎকালপ্রচলিত নয়, আমি বুঝতে পারলুম এটা আমার নিজস্ব । তারই প্রবল আনন্দে সেই নূতন ধারাতে চললাম। ভয় করি নি । অনেক বিদ্রুপবাক্য শুনতে হয়েছে, বলেছে এ ত কাব্য নয়, এ কাব্যি –কিন্তু তাতে আমাকে নিরস্ত করতে পারে মি । ছুটি একটি লোক অবশু বললেন, এ ত আশ্চৰ্য্য, পূর্বের লেখার সঙ্গে ত এর কোনোই মিল নেই দেখছি—এদেরই আমার মনে হ’ত একমাত্র যোগ্য ব্যক্তি ৷ ভাগ্যক্রমে ক্রমণ লোকেও আমাকে সহ করলে । সন্ধ্যাসঙ্গীত ছেড়ে প্রভাতসঙ্গীতে নিঝরের স্বপুভঙ্গে যখন পৌছলুম তখন তৎকালীন অনেক ভাবুক লোক তার মধ্যে রস পেয়েছিলেন ; ধীরে ধীরে পাঠকরাও সহ্য করলে ৷ আমার কাব্যজীবনে দেখছি ক্রমাগত এক পথ থেকে অন্য পথে চলবার প্রবণতা, নদী যেমন ক'রে বাক ফেরে । একএকটা ছন্দ বা ভাবের পর্ব যথন শেষ হয়ে এসেছে বোধ হয় তখন নুতন ছন্দ বা ভাব মনে না এলে আর লিখিই নে। সন্ধ্যাসঙ্গীতের পর এল প্রভাতসঙ্গীত, তার পর কড়ি ও কোমল, তিনের মাত্রার ছন্দে একটা নূতন প্রসার হয়েছিল, হৃদয়াবেগের তীব্রতা ও প্রকাশ পেয়েছিল—কৈশোর ও ঘেীবনের সন্ধিক্ষণে তখন শুরুতর পরিবর্তন এনেছিল । মানসীতে আবার মুতন ভাঙন লেগেছিল, অন্য পথে চলেছিলাম, ছন্দেরও কতকগুলি বিশেষ ভঙ্গী চেষ্টা করেছিলাম । একথা মনে রাখতে অনুরোধ করি যে কৌতুহলবশত বাহাদুরি নেবার জন্য আমি কখনও নূতন ছন্দ বানাবার চেষ্টা করি নি, সেটা আমার কাছে অদ্ভুত বলে মনে হয়। মানসীতে যে ছন্দের পরিবর্তন এসেছিল সেটা ধ্বনির দিক থেকে। লক্ষ্য করেছিলাম, বাংলা কবিতায় জোর পাওয়া প্রবাসী SN○8へ● যায় না, তার মধ্যে ধ্বনির উচ্চনীচতা নেই, বাংলা কবিতা অতি দ্রুত গড়িয়ে চলে যায় । ইংরেজিতে য়্যাকসেণ্ট, সংস্কৃতে তরঙ্গায়িতত আছে—বাংলায় তা নেই বলেই পূর্বে পয়ারে স্বর ক'রে পড়া হ’ত, টেনে টেনে অতি বিলম্বিত ক'রে পড়া হ’ত, তাই অর্থবোধে কষ্ট হ’ত না ৷ লক্ষ্য করেছি, বাংলা কবিতা কানের ভিতর ধরে না, বোঝবার সম্ভাবনাও ঝাপসা হয়ে যায় । এর প্রতিকার চাই । বাংলায় দীর্ঘ-হ্রস্ব উচ্চারণ চালানোট হস্তকর, সেট হাস্যরসেই প্রযুক্ত হতে পারে। যেমন আমার বড়দাদা চালিয়েছিলেন বিলাতে পালাতে ছটফট করে নবাগেীল্ডে । কিন্তু সাধারণ ব্যবহারে সেটা অচল । এজন্য আমি যুক্তাক্ষরগুলিকে পূরো মাত্রার ওজন দিয়ে ছন্দ রচন। মানসীতে আরম্ভ করেছিলাম। এখন সেট চলতি হয়ে গেছে ; ছন্দের ধ্বনিগাষ্ঠীয্য তাতে বেড়েছে । পরে পরে নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চলেছি । যখন লিখলুম তখন লোকের ধাধা লেগে গেল, গাল দিতেও তাদের মন সবুল না। তাতে ধে হাস্যরসের ছিট ছিল লোকে মনে করলে, লেখক ভদ্রলোক কি পাঠকের সঙ্গে কৌতুক করছেন, না কি ? আগে লোকে ভাল বলেছে মন বলেছে—এমনতর নিস্তব্ধতা আমি আশা করি নি । এমনি ক’রে নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এসেছি । বলাকায় নূতন পৰ্ব্ব এসেছে, ভাব ভাষা ও ছন্দ মৃত্তন পথে গেছে । দেখেছি, কাব্যের নূতন রূপ স্বীকার ক'রে নিতে সময় লাগে, অনভ্যস্ত ধ্বনি ও ভাবের রস গ্রহণে মন স্বভাবতই বিমুখ হয় । এইটে অনুভব করি বলেই রচনা পড়ে শোনবার যে স্বাভাবিক ইচ্ছ, সেটা চলে গেছে । আমি জালি স্বীকার ক'রে নিতে সময় লাগবে । দীর্ঘকাল আমাকে লিখতে হয়েছে, কখনো একঘেয়ে ধরণে লিখি নি, বিচিত্রভাবে লিখতে চেষ্ট৷ করেছি, কথনও একটা পথ অনুসরণ ক'রে নিরস্ত থাকি নি । অনেকে বলেন, উনি “সোনার তরী"র মতন আর কিছু লেখেন নি। অবশ্য সোনার তরী যখন লিখেছিলাম তথম সীমানাট আরও পিছনে নিদিষ্ট ছিল । যদি এখনও সোনার তরীর মতই লিখতে থাকতাম, হয়ত তারা বলতেন, ই্য, লিখতে পারে । এখন বলেন, এবার খামলে ভাল হয় । সুতনকে ক্ষমা করা সহক্ত নয় । ধার-বার বিভিন্ন কাব্যে এই রকম ক্ষণিকা