o (سيN সবে ফাষ্ট বুক ধরেছে। এখনও তো কিছু বলা যায় না। তবে তোমার ছেলেটি যে নেহাৎ বোকা, তা মনে হয় না । চেষ্টা ক'রে পড়লে কিছু শিখতেও পারে । পরেশ এই সূত্রে হয়ত আর একটি গল্প ধরিতে যাইতেছিল, কিন্তু আমি আর দাড়াইলাম না। বলিলাম— আচ্ছা আসি । ---পরেশ দুই হাত তুলিয়া নমস্কার জানাইল । মনে মনে কল্পনা করিয়া লইলাম, জীবনরাম নিশ্চয়ই এত ক্ষণ ভয়ে আধমরা হইয়া রহিয়াছে । এই ভীরু গ্রাম্য বালকটিকে লইয়া আর পারা গেল না । কিন্তু কি করিব, এই নুতন স্থানটিতে এই ছেলেটি ছাড়া আর কোন সঙ্গী আমার নাই যে !-জীবনসংগ্রামে শহর ছাড়িয়া এই দূর পল্লীগ্রামে আসিয়া ভিড়িয়াছি । ছোট স্কুল । মাত্র দশটি ছেলে । মাষ্টার বলিতে আমি ছাড়া আর কেহ নাই। এই দুৰ্দ্দিনে ইহ মন্দ কি ! যাহা পাই তাহাতেই কোন রকমে চালাইয় লই । পল্লীর শাস্ত সরল জীবনযাত্রা আমার অস্তরে এক বিচিত্র রেখাপাত করিয়াছে ! এই কয় দিনের মধ্যে আমিও যেন ইহাদের এক জন হষ্টয়া গিয়াছি ... আমার অন্তমান মিথ্য নয়। জীবনরাম বারান্দার এক কোণ হইতে উঠিয়া গিয়া ঘরের দরজার সম্মুখে গিয় চোখ বুজিয়া বসিয়া আছে এবং অন্ধকারের দিকে এক-এক বার তাকাইয়া দেখিতেছে । আমাকে দেখিয়া তাহার বোধ হয় ঘাম দিয়া জর ছাড়িয়া গেল । আসিয়া রান্নার জোগাড় করিয়া লইলাম। নিজ হাতেই রাধিয়া লই । আমি আর জীবনরাম দুই জনে খাই । কাঞ্জ করিতে করিতে একবার জিজ্ঞাসা করি—জীবনরাম, তোমার আত ভয় কিসের ? এ প্রশ্নটি হয়ত জীবনরামের নিকট বড়ই বিচিত্র। পাড়াগার ছেলে—বয়সও কম, এ দুৰ্ব্বলতাটুকু তো প্রায় সকলেরই আছে । তবুও সে সাহস সঞ্চার করিয়া বলে—উই, উ দিকৃটে দিয়ে এখানকোর কেউ যায় না মাষ্টার-মশাহ ! উঠ হানা’টের ধার দিয়ে— হানা । আমার স্কুলের চালাটির অত্যন্ত নিকটেক্ট এত ‘মাছদহের হানা । ‘মাছদহের খালটি এদিক-ওদিক চারি দিক প্রবাসী $NరిgN9 ঘুরিয়া ঘুরিয়া এই আবদ্ধ স্থানটিতে আসিয়া আটক হইয়া পড়িয়াছে। বিস্তীর্ণ একটি স্থান জুড়িয়া এই হানার স্বষ্টি । মাছের জন্য এটি এখানকার লোকের বড়ই প্রিয় । কত জেলের দল ইহারই আশেপাশে আসিয়া ঘর বাধিয়া কত দিন ধরিয়া বসবাস করিতেছে। মাছ ধরিয়া তারা নৌকা বোঝাই করিয়া খালের ভিতর দিয়া কত দেশ-বিদেশে চালান দেয়। খালটি দিয়াও কম দূর যাওয়া যায় তা নয় । এটি এদিক-ওদিক ঘুরিয়া ঘুরিয়া গিয়া উলুবেড়িয়ার গঙ্গায় পড়িয়াছে। গঙ্গ একবার ধরিতে পরিলে সুবিধা কম নয় । যেখানে ইচ্ছা যাওয়া যায়। হানার জল সবুজ,—ঘন সবুজ। কখনও কখনও তার মধ্যে নৌকার হালের আঘাতে তরঙ্গের আলোড়ন উঠে । তাহ) ন হইলে মোটের উপর দেখিতে শাস্ত । আমার স্কুলের চালার বারান্দায় বসিয়া গাছপাতার ব্যুহ ভেদ করিয়া হানার খানিকটা দেখা যায়। রাত্রেও এখানে বসিয় দেখা যায় দূরে হানার জলরাশি কালে চাদরের মত পড়িয়া আছে . . . জীবনরাম আবার নিস্তব্ধত ভঙ্গ করিয়ু বলিল- মাষ্টারমশান্ত চুপ মেরে রইলেন যে ? চুপ করিয়া গিয়াছিলাম বলি য়' বোধ হয় জীবনরাম আর একটু ভয় পাঠয়া গিয়াছিল । তাই আবার অন্য দিকে মন দিবার জন্য এই কথাগুলি বলিল । আমি বলিল’ম—কি বলছিলে জীবনরাম, ওদিক দিয়ে কেউ ধায় না । কিন্তু কেন যায়ু না বলতে পাব ? জীবনরাম আমার মুখের দিকে অল্প ক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করিমু তাকাইয়া থাকিয় বলিল-- সেই যে গে ! জানেন না মাষ্টার-মশাই, সেই মফর জেলের বউ--- 'নফর জেলের বউ -- আমাক এইবার মনে পণ্ডিল । ঘটনাটি গুনিয়াছিলাম আমার পূৰ্ব্বে যে-মাষ্টর মহাশয় আমার স্থানে এই স্কুলে চাকুরি করিতেন স্টার নিকট হইতে ।--তিনি আমাকে এখানকার অনেক গল্প বলিয়। গিয়ছিলেন, তার মধ্যে এটিও একটি ... ঐ দরে শু্যাওড় গাছটির কোলে যে বাশ-ঝোপ তারই পশ্চিম দিকে এখনও একটি শূন্য জীর্ণ চালা পড়িয়া আছে । ঐ চালাটি ছিল নফর জেলের । নফর নিঃসস্তান ছিল । বউ মারা যাইবার পর আবার সে সংসার করিয়াছিল। দ্বিতীয় সংসারে আর একটি
পাতা:প্রবাসী (ষট্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।