পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গলি, গরু ও গৌরী স্ত্রীরামপদ মুখোপাধ্যায় খোলা জানালা হইতে নীল আকাশের অনেকখানি দেখা যায়। এতখানি অনাবৃত আকাশ দেখা বিশেষ করিয়া অট্টালিকা-অটবীময়ী কলিকাতার মত শহরে দুলভ বস্তু ত বটেই, সৌভাগ্যও তাহাতে অনেকখানি । সে সৌভাগ্যের একমাত্র কারণ নীচের অধিবাসীরা ; কাঠ-কতক জমিতে খোলার চালা বাধিয়া তাহারাই আলো, বায়ু এবং উন্মুক্ত আকাশ-সৌন্দৰ্য্যকে আমাদের এই নাতিউচ্চ দ্বিতল গৃহে প্রবেশ করিবার অবধি অধিকার দিয়াছে । আমরা সৌন্দর্য্যই উপভোগ করি । খোলা জানাল দিয়া চাদের আলো আসিয়া বিছানায় পড়িলে অতি-পুরাতন কয়েকটি সরস কথা লইয়া হাস্ত-পরিহাস করি কিংবা অন্ধকার রাত্রিতে তারাভরা আকাশের পানে চাহিয়া অনুচ্চারিত কবিতার কয়েকটি লাইন মনে করিয়া দীর্ঘনিশ্বাস ফেলি। এই সৌন্দর্যবোধের মধ্যে যে সেীকুমাৰ্য্য, যে রসোচ্ছ্বাস সেই পরম ক্ষণটিতে উদ্বেল হইয়া মনকে কল্পলোকে উধাও করিয়া লইয়া ধায়, মৰ্ত্তবাসীর সে এক শ্রেষ্ঠতম বিলাস ছাড়া আর কি ! কিন্তু বিলাসী মন ও মাঝে মাঝে আকাশ ছাড়িয়া সঙ্কীর্ণ গলির উপর বিচরণ করিতে থাকে । সেখানে সৌন্দয্য উপভোগের লেশমাত্র নাই, তথাপি মতি রূঢ় বাস্তবকে সে চাহিয়া চাহিয়া খানিকক্ষণ দেখে । দেপে মিউনিসিপ্যালিটির কৃপাবর্জিত অসমতল গলিটার উপর একটি গরু বাধা রহিয়াছে, জাব খাইবার গামলার চারি পাশে বহু মাছি মশা উড়িতেছে, গরু লেজ নাড়িতেছে এবং সৰ্ব্ব দেহ আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গে গলার ঘণ্টা বাজিতেছে ঠং-ঠুং-ঠুং । গরু থাকিলেও গলিট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, উপরে আমরা ব্রাহ্মণ আছি বলিয়া নহে—গরুরই স্বাস্থ্যের খাতিরে মলমূত্রাদি সেখানে জমিতে পায় না । কিন্তু আপাততঃ গো-দেবতার অনুসরণ করিয়া আমরা যেখানে পৌছিয়াছি সে একটি অতি সঙ্কীর্ণ গলি ; গলির গায়ে নাতিউচ্চ গোলার চাল এবং চালায় যাহারা বাস করে তাহারাও সম্ভবত ভক্তিমান । তাহার মানে প্রায়ই দেখি একটি অনতিক্রাস্তযৌবন নারী ছেড়া চটের পর্দা ঘেরা দুয়ারের বাহিরে আসিয়। দাড়ায় । গোমাতার গায়ে গোবরের একটি ফোট লাগিলে আপন স্বাচল দিয়া সযত্নে মুছিয়া লয়—এ-ধারে ৪-ধারে খড়ের ফুট পড়িয়া থাকিলে সেটি স্কুড়ান্টয়া গামলায় রাখিয়া দেয়— খালি বা ঝালরওয়াল গলায় হাত বুলাইয়া অ-বোলা দেবতাকে আদর করে। গরুর চেহারাটি বেশ নাদুসনুদুস ; গামলায় যে বিচালী পরিপাটি করিয়া কুচানো থাকে কুন- ও খোলগোলা জলের সঙ্গে ঐ মেয়েটি চুড়ি-পর। হাতে যখন জীবন মাখিয়া দেয় তখন মৰ্ত্তোর মানুষও সে-দিকে চাহিয়া যে লোভাতুর হইয়া উঠিবে—সে আর এমনই কি বিচিত্র ! গরুর যত্ন লইতে অনেকগুলি প্রাণীকেই তৎপর দেখিতে পাই । বছর চল্লিশের একটি পুরুষ যখন-তখন গলির প্রাষ্ঠে দাড়াইয় গলি এবং গরুকে তীক্ষ দৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করিতে থাকে । গামল ধধি অপরিস্কার থাকিল, বিচালী যদি আপয্যাপ্ত দেওয়া হইয়া থাকে কিংবা গরুর গায়ে কাদাগোবর লাগিয়া থাকে ত নেপথ্যচরিণীর উদ্দেশে আরম্ভ হয় তীক্ষু বাক্যবাণের বর্ষণ । ঋণটা হাতে লইয়ু সে নিজেই একবার গলিটার এ মুড়া হইতে শু-মুড়া পৰ্য্যষ্ঠ ঝাট দিয় গামলায় পানিকটা জল ঢালিয় দেয় এবং মাখ ইষ্টতে পুচ্ছ পৰ্য্যন্ত হাত বুলাষ্ট্ৰয় গরুকে পানিক আদব ক ম বাড়ীল মধ্যে গিয়া টোকে । তার পর অসতর্ক মুহূর্বে গো দেবতার কাছে যাহার আবির্ভাব হয় - সে একটি আট বছরের ফুটফুটে মেয়ে খোলার ঘর তহঁতে বহির হইতে না দেখিলে তাঙ্গকে শুপাশের সৌধবাসিনী কল্পনা করিলে কিছুমার অশোভন হইবে না। অস্থর্যাম্পশু সৌন্দৰ্য্যময়ীর তাহা । অতি কোমল দেহ, বর্ণে প্রভাত-স্থয্যের আশীৰ্ব্বাদ এবং ললিত্যে বৈষ্ণব কবির পদবলীর মতই সে তযুসম্পদশালিনী । কোকড় চুল কাধের উপর ফণীশিশুর মতই দৌরাত্মশীল, ভাসা-ভাস টানু চোথ গৌর মুখে উজ্জ্বল মণির মত শোভাময়।.কবে যে ক্ষুদ্র কোরক বুন্ত-সংক্স হইয়া অঙ্কুরিত হইয়াছে সে খবর আমাদের অগোচর এবং কবেই কুঁড়ির বন্ধন মুক্ত হইয় পূর্ণ গৌরবে সে ফুল হইয়: ফুটিবে তাহাও হয়ত আমরা দেখিব না, কেবল এই মধ্যবৰ্ত্তী কাল বিকচোমুখ ক্রমবর্ধমান কুঁড়িটির লাবণ্যে আমরা তার অনাগত গৌরবময় ভবিষ্যতের একট। সৌন্দৰ্য্য অনুমান করিয়া লইতেছি ।-- মেয়েটির আসিবার কোন নির্দিষ্ট সময় নাই । সে প্রায়ই আসে । আলিয়া গরুর তৈলনিষিক্ত পিঠে ছোট হাতখানি রাথিয় কত কি আদরের কথা বলে। গদগদ কণ্ঠের সেই অফুট আবৃত্তির ধ্বনি অর্থময় না হইলেও আমাদের মতই