শ্রেণৰণ সাজিয়া গুজিয়া রঙীন ফুলটির মত দীঘিতে গিয়া ফুটিয়া থাকে। অবশু জলে নহে, স্থলে— জড় নহে, রীতিমত সক্রিয় এবং চঞ্চল। গৌরীর আরও অনেক সাধী আছে । এ-পাড়া ও-পাড়া হইতে বেড়াইতে আসিয়া, লুকোচুরি খেলার স্বত্রে আলাপ জমিয়াছে । সে দিন লুকোচুরি থেলিতে খেলিতে জনাকীর্ণ গোলদীঘির চক্রপথ দিয়া ছুটিতে ছুটিতে গিয়া গৌরী নাকি এই ছেলেটির সাম্নে আছাড় খাইয়া পডিয়া গিয়াছিল। পড়িয়াই সে উঠিল, কিন্তু নিজের দেহের পানে চাহিয়া কাদিয়া ফেলিল । অমন সুন্দর জামাট কাদামাখা হইলে তত দুঃখ ছিল না, এমন ভাবে ছিড়িয়াছে যে রিপু করিলেও গায়ে দেওয়া চলিবে না। হাতের মায়াপুর মেটালের চুড়ি ক-গাছা বাকিয়া গিয়াছে আর কপালের খানিকট কাটিয়া বেশ রক্ত গড়াইতেছে । ছোট মেয়ে-- কাদিবারই কথা । ছেলেটি হয়ত থতমত থাইয়া দাড়াইয়ু ছিল, কি সাস্তুনাও দিতে গিয়াছিল কিন্তু এসব ক্ষেত্রে ক্ষতির কথাই মনে বদ্ধমূল হয়, সংস্থনার স্নিগ্ধ প্রলেপ অঙ্গারের মতই মনকে পোড়াঙ্গতে থাকে ; ক্ৰন্দনের বেগ কমে না, বাড়িয়াই চলে । তাই হয়ত ছেলেটি গেীরীর বাড়ীর ঠিকানা জানিয়; এবং বেশী দর মহে বলিয়া ভদ্রত করিয়া রোরুদ্যমান গেীরীর হাত ধরিয়া গলির মধ্যে টনিয়া আনিয়াছে । গেীরীর ক্রমনের ইতিহাস গলির মুখেই শোনা গেল এব" গেীরীর মা সুন্দর হবেশ ছেলেটিকে পলকহীন প্রশংসমান দৃষ্টিতে চাহিদা দেখা ছাড়া খোলার কুটীরে আহবান করিয়ু বসতিতে পারিল না, পরিচয় জিজ্ঞাস ত দরের কথা । গেীরী তখন গু কঁদিতেছে দেখিয় ছেলেটি সাম্ভলা দিয়৷ বলিল, কেন না খুকী, তোমায় ওর চেয়ে ভাগ জামা কাল আমি কিনে দেব। —বলিয় গেীরীর মাকে উদ্দেশ করিয়ু মুছ হাসিয়ু বলিল, ওকে বাড়ীর মধ্যে নিয়ে যাও—কাল আমি আসব আবার । ছেলেটি চলিয়া গেলে সেই প্রতিবেশিনী রহস্ত করিয়৷ বলিল, তা যাঙ্ক বল ভাই, গৌরী তোমার স্বয়ম্বর হয়ে আপনি বর ধ'রে এনেছে। দিব্যি মহাদেবের মত বর । হেমাঙ্গিনীও হাসিল, কিন্তু নামটি ওর জিজ্ঞাসা করতে ভুলে গেলাম, দিদি । প্রতিবেশিনী বলিল, নামে যাই হোক—তোদের কাছে ও গৌরীর বর-শিব । দেখে বোধ হয় অবস্থা ভাল । তোর কপাল ভাল । কাল আবার জামা না কি আনবে বললে – হেমাঙ্গিনী বলিল, দিক্ চাই ন-দিকৃ—ওই রকম একটি ফুটফুটে ছেলের সঙ্গেই দিব্যি মানাবে।--বলিয়া গৌরীকে গহয়া ভিতরে চলিয়া গেল । 棣 橡 * পরদিন জাম লইয়৷ ছেলেটি সত্যসত্যই আসিল । গলি, গরু ও গৌরী ԱԵՎ) দুয়ারে দাড়াইয়া কি বলিয়া ডাকিবে ভাবিতেছে, এমন সময় গৌরী ছুটিয়া আসিয়া জামার মোড়কটিতে হাত দিয়া বলিল, এটাতে কি আছে ? কই, আমার জাম আনলে ন ? ছেলেটি ডান হাতের আঙলে তাহার ছুটি গালে জল্প একটু চাপ দিয়া হাসিমুখে বলিল, ক-টা জামা তোমার চাই, খুকী ? গৌরী ঘাড় বাকাইয়া বলিল, ব: রে । আমি বুঝি খুকী ? আমি ত গৌরী —বলিয়া এ-দিক ও-দিক চাহিয়া সমর্থনযোগ্য কাহাকেও না পাইয় গরুটাকে উদ্দেশ করিয়া বলিল, কি রে বুধি, আমি গৌরী নয় ?— গরু গামলা হইতে মুখ তুলিয়৷ গৌরীর পানে চাহিতেই গৌরী খিল-খিল করিয়া হাসিয়া বলিল, দেখলে, বুধি কেমন আমার কথা বুঝতে পারে ? w গৌরীর হাসির শব্দে হেমাঙ্গিনী বাহির হইয়া আসিল । ব্যস্ত হইয়া বলিল, ঙম, তুমি দাড়িয়ে আছ, বাবা । অা বলি কার সঙ্গে না করে সঙ্গে গল্প করছে । যা না গেীয় টুলথান। এখানে এনে দে । যে ঘর, বসবার জায়গা ত নেই! ছেলেটি ব্যস্ত হইয়া বলিল, থাক্, থাক, দাড়িয়েই বেশ আছি । এই দেখ—গেীরীর জাম! এনেছি—একবার গায়ে দাও ত দেখি । হেমাঙ্গিনী হাসিমুখে জামার বাগুিলট হাতে লইয়া সঙ্গিত স্বরে বলিল, এ আবার কেন, বাবা ?— ছেলেটি বলিল, আমি জাসি, একটু কাজ আছে। গৌরী টুল আনিয়া বলিল, ব’স । ছেলেটি হাসিল, আজ বসব না, আর একদিন আসব। হেমাঙ্গিনী আজও বসিবার অনুরোধ করিতে পারিল ন। ছেলেটির বেশবাসে ও চেহারায় আভিজাত্য অতি মাত্রায় পরিস্ফুট ছিল বলিয়াই হয় ত দরিদ্র বন্তিবাসিনীর কণ্ঠে সহজ জাতীয়তার সুরটুকু ফুটিতে পারিল না । ছোট একটু দীৰ্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া সে গৌরীকে বলিল, টুলখন নিয়ে আয় ত, মা ! জাম গেীরীর পছন্দ কুইয়াছে, গায়েও বেশ মানাইয়াছে ! জাম: গায়ে দিয়া আননে লাফাইতে লাফাইতে কতবার সে বুধির কাছে আসিয় গড়াইল, অকারণে কতবার গলির এ-প্রাস্ত হইতে ও-প্রস্ত পৰ্য্যস্ত ছুটাছুটি করিতে লাগিল । পূৰ্ব্বোক্ত প্রতিবেশিনী বলিল, কি লে গৌরী, জাম কে দিলে ? তোর বাপের দখছি আজকাল পয়সা হয়েছে ! গৌরী হাত তুলিয়া বলিন্স, ইস্ বাবার আর দিতে হয় না! পরে দু-হাতে জামার প্রাস্তভাগ তুলিয়া বলিল, দেখছ, এ সিদ্ধের—স্বতোর নয় ।
পাতা:প্রবাসী (ষট্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৬৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।