পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

A. o 以 * ভোরে ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গেই তিমিরবরণ তাহার ঘরের সম্মুখের বারান্দায় চোথ রগড়াইতে রগড়াইতে আসিয়া দাড়ায় । এই বারান্দাটি ছোট—অতি ছোট একেবারে, এবং ঠিক তাহার একার পক্ষে কষ্টে বাসযোগ্য ঘরেরই মাপসই— একচুলও বড় হইবে না। বারান্দাটি বড় রাস্তারই ঠিক উপরে অবস্থিত—এখানে দাড়াইলে রাস্তার বহুদূর পর্য্যন্ত দৃষ্টি চলে। ত্রিতলের বারান্দ এটি—কাজেই বহু উচ্চে অবস্থিত হওয়ার ফলে রাস্তার একটা নূতন রূপ এখানে দাড়াইলে চোখে ধরা পড়ে। তিমিরবরণ সে রূপ আজ তিন বৎসর ধরিয়া দেখিয়া আসিতেছে ; কখনও জনবিরল নিষ্পাণ, কখনও জনাধিক্যে অস্থির চঞ্চল, কখনও আবার একেবারে উন্মাদ...কখনও হয়ত এমন আবার যে, তিমিরবরণ তাহ। প্রকাশের যোগ্য ভাষা খুজিয়া পায় না। এখানে দাড়াইয়া নিত্য ভোরে তিমিরবরণ অনারব্ধ-কৰ্ম্ম শহরের মূৰ্ত্তিটা একবার দেখিয়া লয়, তার পর দৃষ্টি আরও প্রসারিত করিয়া দিয়া দেখে এই পৃথিবীর একটা মূৰ্ত্তি । আর ভাবে, এই সেই ব্যথা-তীৰ্থ! পৃথিবীর পানে চাহিয়া নির্জন মুহূৰ্ত্তে তাহার এই একমাত্র কথাই মনে জাগে। আর এই পৃথিবীর মানুষের কথাটাও সেই সঙ্গে একবার সে না ভাবিয়া পারে না,—এই সেই ব্যথা-তীর্থের যাত্রীদল ! তার পর একে একে মনে জাগে বহু কথা।--সেই রাজার দুলাল বুদ্ধের কথা ! এমন আরও কত কথা ! গোটা ভারতবর্ষের একটা ব্যথা-কাতর রূপ জাগিয় উঠে তাহার চোখের সম্মুখে । তার পর নিজের কথা । এই তীর্থের সেও ত এক জন যাত্রী। সামান্ত যাত্রী সে—আর তাহারই সম্মুখে বিস্তৃত পড়িয়া রহিয়াছে আদি অনস্ত কাল ধরিয়া সেই মহাতীর্থ– যুগে যুগে যেন সে ঐ একই নামে পরিচয় দিয়া আসিতেছে. ব্যথা-তাৰ্থ ! এই সেই ব্যথা-তীর্থ শ্রীরাধিকারঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায় ভোরের পৃথিবীর রূপ নিবিষ্ট হইয়া দেখিবার মত সময় তিমিরবরণের নাই। সকলে তাহাকে দুইটি বাড়ীতে ছাত্র পড়াইতে যাইতে হয় ; তার পর নিজের কলেজ আছে, সে বি-এসসি পড়ে। তাড়াতাড়ি ছাত্র-পড়ানোর কাজটা তাহাকে সমাধা করিতে হয় । সে কোনও রকমে চোথ-মুথ ধোওয়ার কাজ শেষ করিয়া রাস্তার দিকের দরজাট বন্ধ করিয়া দিয়া এবং ভিতরের দিকের দরজায় তাল লাগহয়! বাহির হইয়া পড়ে । তিমিরবরণের বাসটি একটি হোটেল – নীচের তলায় হোটেল ও রেষ্টরেট এবং উপরের দুষ্ট তলায় স্থায়ী ভাবে ভদ্রলোকদের থাকিবার ব্যবস্থাও আছে । বারে! জন নানা বয়সের অধিবাসী প্ৰায় স্থায়ী ভাবেই আজ বহুদিন ধরি... এখানে বসবাস করিতেছে । তিন বৎসর কাল অতিবাহিত করিয়া দিব এই হোটেলের ত্রিতলের ঐ ছোট ঘরটিতে থাকিয়া। এখন এই ঘরটিই তবু তাঙ্গার কাছে আপনার হইয়া গিয়াছে, কারণ এত বড় পুথিবীতে আর দ্বিতীয় স্থান তাহার জান! মাত যেখানে জ্ঞানত: সে ইহার অধিক কাল একযোগে বসবাস করিয়াছে। তাহার নিকট-আত্মীয়ের মধ্যে একমাত্র তাতার মধ্যম মাতুল সপরিবারে বর্তমান । তিনি ধনী, কাজেই তিমিরবরণ আত্মশ্লাঘার পক্ষে হানিকর মনে করিয়া তাহার সঙ্গে আত্মীয়তা বজায় রাখে নাই । অবশু সে-পক্ষও ইহার প্রতিবাদকল্পে এমন কিছু কোন দিন করে নাই যাহার জন্য তিমিরবরণের প্রতি কোন দোষারোপ করা যাইতে পারে। দুঃখ-দৈন্য-দারিদ্র্য ভীষণ মূর্দুি ধরিয়াই বহুবার জীবনে তাহাকে দেখা দিয়াছে, কিন্তু কোন অবস্থাতেই সে ধনী মাতুলের কাছে প্রার্থীরূপে গিয়া দাড়াঙ্গতে পারে নাই, এবং سميكة Pi তিমিরবরণ৪ জীবনে হয়ত আর পরিবেও না—যদিও সে জানে যে আমরণ এই ব্যথা-তীর্থে তাহাকে দুঃখদৈন্ত চরণে জড়ান্টয়া পথ চলিতে হুইবে ।