শ্রাবণ এই সেই ব্যথা-তীর্থ צ"ש?) করিয়া দিয়া আবার পড়াইতে বাহির হইয়া যায় । রাত্রে সে দুই ঘণ্টার জন্য একটি ছাত্রী পড়ায় । তাহার ছাত্রী অমিতা থার্ড ক্লাসে পড়ে । তিমিরবরণের এবেলাও আবার সেই ভয় হয়। কি জানি, ছাত্রীর পিতা কি সে-বাড়ীর অন্য কেহ যদি তাহার এই দুই দিন কামাইয়ের জন্য কিছু বলিয়া বসে । শঙ্কিতত্ত্বদয়ে সে ছাত্রীর পড়ার ঘরে গিয়া প্রবেশ করিল । অমিতা তথম নিজের চেয়ারে বসিয়া টেবিলের উপরকার একখানি পোলা বইয়ের পাতার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করিয়া ছিল, আর তাহারই অল্পদুরে তিমিরবরণের চেয়ারে কে এক জন অপরিচিত যুবক অমিতার বইয়ের দিকেই দৃষ্টি রাখিয়া বসিয়া ছিল । তিমিরবরণ ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া তাই একটু থমকিয়া দাড়াইয়া রহিল। তাহার আগমন অমিত টের পায় নাই, সেই অপরিচিত যুবকটিই প্রথম টের পাইয়া জিজ্ঞাসা করিল—আপনার কা'কে চাই ? অমিতা চকিতে পিছন ফিরিয়া চেয়ার ছাড়িয়া উঠিয় দাণ্ডাষ্টয়া বলিল --অt:, উনিষ্ট ত আমার আগের মাষ্টারমশাই । তার পরে তিমিরবরণকে বলিল-মাষ্টারমশাই, আপনি ওঘরে গিয়ে একটু বসুন, বাবাকে আমি ডেকে দিচ্ছি । বাবার সঙ্গে দেখা না ক’রে যাবেন না যেন । তিমিরবরণ অমিতার পিতা জ্ঞানবাবুর সঙ্গে দেখা করার আর কোন প্রয়োজন অাছে বলিয়ু বোধ করিল না । কিন্তু অমিতা কথা শেষ করিয়াই নিমেষে বাড়ীর মধ্যে চলিয়া গেল দেখিয়া তাহার পিতার সঙ্গে দেখা না করিয়া যাওয়াটাকে সাধারণ ভদ্রতাঞ্জানের বিরুদ্ধাচরণ গুইবে বলিয়া মনে করিল ; কাজেই পাশের ঘরের উদ্দেশ্রেষ্ঠ সে পা বাড়াইল । অপরিচিত যুবকটি সহসা তিমিরবরণকে প্রশ্ন করিল— আপনারই নাম বুঝি তিমিরবরণ বাৰু? আপনি গল্পটল্পও লিখে থাকেন বুঝি ? অমিতাকে আপনি ক'বছর পড়িয়েছেন ? ও ত কিছুই জানে না দেখছি। এত দিন পাস করেছে যে কি ক'রে তাও ত ভেবে পাই না । তিমিরবরণ তাহার প্রশ্নগুলির একটিরও উত্তর দেওয়া নিম্প্রয়োজন বোধে ধীরে ধীরে পাশের ঘরে নীরবে চলিয়ু গেল । জ্ঞানবাবু কতকটা অপ্রভিডের মত আসিয়া তিমিরবরণের কাছে দাড়াইলেন । তিমিরবরণ যেন লজ্জায় মরিয় যাইতেছিল । ভাল করিয়া সে জ্ঞানবাবুর মুখের দিকে দৃষ্টি তুলিয় পৰ্য্যন্ত চাহিতে পারিল না। জ্ঞানবাবু বলিলেন--তিমির, ব্যাপারটা বড় বিশ্রী দাডিয়েছে, এতে আমার কিন্তু কোনই হাত নেই । তোমার দু-দিন কামাই হয়েছে ব’লে যে তোমাকে আর রাখছি নে তা যেন মনে ক’রে না । মানুষের শরীর যখন, তখন কামাই হওয়াটা আমি খুব দোষের মনে করি নে, আর তোমার মত কৰ্ত্তব্যজ্ঞানসম্পন্ন ছেলের পক্ষে । যাক সে কথা, এখন যা হয়েছে তাই বলি। এই যে অমিতার নূতন মাষ্টার-— এটি আমার শ্বশুরবাড়ীর সম্পর্কে কি যেন লতায় পাতায় জড়িয়ে কি একটা হয় । গ্রাম থেকে এখানে এসেছে একটা চাকরির সন্ধানে—অবস্থা নাকি খুবই খারাপ। আমার স্ত্রীর অনুরোধে তাই এত বড় অপ্রিয় কাজও আমাকে করতে হচ্ছে । অকারণে এই যে তোমাকে ছাড়িয়ে দিতে হ'চ্ছে এর জন্তে আমার চেয়ে বোধ করি কেউ বেশী দুঃখিত বা লজ্জিত হয় নি । দু-দিন পরে একবার এসে আমার সঙ্গে দেখা ক’রে, তোমার মাইনে যা এ ক'দিনের হিসেবে পাওনা হয় ত! আমি বুঝিয়ে দেব। তিমিরবরণ বিদায়ু লইয়া রাস্তায় নামিয়া আসিল । জ্ঞানবাবুকে একটা কথাও সে বলিয়; উঠিতে পারিল না এবং বলার প্রয়োজন ছিল বলিয়াও সে অনুভব করিল না । পথে সে সমস্ত ব্যাপারটা একবার আদ্যোপস্ত ভাবিয়া দেখিতে চেষ্ট পাইল, কিন্তু ভাবিয়া কিছুষ্ট ঠিক করিয়া উঠিতে পারিল না । একটা সহজ অন্সকম্পায় হৃদয় তাহার ভরিয় উঠিল ;–সে যে নিজের জন্য, না জ্ঞানবাবুর জন্ত তাহা সে ভাল করিয়া ধরিতে পারিল না । তার পরে জো করিয়া একবার সে সমস্ত তুলিতে চেষ্ট পাইল, কিন্তু সন্থ নয় জানিয়া সে রাস্তার দুই পাশের সব জিনিষষ্ঠ একান্তভঃ দেখিতে লাগিল এবং চিস্ত: সেই দিকেই চালিত কারে প্রয়াসী হইল । নিজের ঘরে ফিরিয়া আসিয়া তিমিরবরণ অালো জাীি এবং আবার তাহা লিবন্তিয়া দিল্প শয্যায়ু শুইয়া পড়ি একাস্তুে অন্ধকারে চিস্ত যেন তাহার আরও সৰ্ব্বগ্রাসী হ উঠিল । চোখের পাতা আর তাহার বুজিতে পাইল নিখিল পৃথিবীর বেদন যেন আজ তাহার কাছে মূৰ্ত্তি পাই জন্ত ব্যাকুলতা জানাইতেছে । রামায়ণের শ্রীরামচন্দ্র হ: সামান্ত বনের বানর, মহাভারতের ভীষ্ম-সোণ-কর্ণ-যুf হক্টতে তৃণাদপি যে তৃণ, সকলের ব্যথা-সমুদ্র তরঙ্গ বি পুরাণ-ইতিহাসময় ঘুবিয়া মরিতেছে কত মামুষের দীর্ঘ তার পরে আজিকার এই পৃথিবী --চিরদিনের ব্যথা-তীৰ্থ- আজও সেই ব্যথা-তীৰ্থ হ রহিয়া গিয়ু যুগে যুগে তাই শ্রীরামচন্দ্র হইতে শ্ৰচৈতন্ত আসিয় এ মহাতীর্থে–নর-মারীর অশ্ৰ মুছাহঁতে নয়, কমণ্ডলু করিয়া লইতে তাহদের আশ্রতে। কিন্তু সে ত পূর্ণ হ নয়—যুগে যুগে মানুষ অশ্র ডালি পিয়াই চলিয়ছে, চf অনন্তকাল ধরিয়া, তবু সে-কমণ্ডলু কোন দিন পূর্ণ হইবে ন তিমিরবরণ আর শয্যায় পীড়য়া থাকিতে পffরল উঠিয়া বসিল । ঘরের আলোটা আবাব জালিল । সে অসমাপ্ত গল্পটা আবার চোখের সামনে মেলিয়া ধরিল।
পাতা:প্রবাসী (ষট্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৮৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।