পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাদ্র ধূলামাটিতে এতই প্রচ্ছন্ন যে তাছার আসল রংটি যে কি বলা একটু কঠিন । আত্মীয়েরা কুষ্ঠিত ভাবে বলে—খ্যামবর্ণ, যাহাদের নিন্দায় স্বর্থ আছে তাহারা প্রমাণ করিয়া দেয়— —কালো। মাথাটা একটা আগ” র জঙ্গলের মত— চুল খুব ঘন, কিন্তু যত্বের অভাবে বড় নাই। কোকড়ান কোকড়ান একরাশ স্তবক পরস্পরের সঙ্গে জড়াজড়ি করিয়া পিঠের অৰ্দ্ধেকটা পৰ্য্যস্ত নামিয়া গিয়াছে। খোপা হয় না, তবে কালেভদ্রে ঘাড়ের উপর অৰ্দ্ধচন্দ্রাকারের দুইটা টান। স্বপুষ্ট বেড়াবেণী দেখা যায়। দু-এক দিন থাকে, তাহার পর কখন গ্রন্থি খুলিয়া গিয়া বিশৃঙ্খল ভাবে এলাইতে এলাইতে আবার আগেকার অবস্থায় ফিরিয়া আসে। দেখিলে মনে হয়, মাথার পিছনে কবে কি হইতেছে মেয়েটির সে লইয়৷ মোটেই মাথাব্যথা নাই । সারাদিন থেলায় মত্ত থাকে, আর ফলপাকড়ের অত্যন্ত ভক্ত, এবং খেলা ও দুনিয়ার ফলপাকড় হইতে আহত ধূলা, কাদা, রসকষ প্রভৃতি শত রকমের নোংরা সব হাতে-মুখে, কাপড়ে-চোপড়ে জমা সৌন্দৰ্য্যচর্চার মধ্যে স্নানটা মাঝে মাঝে করে ;–তাহাতে ময়লাগুলি গায়ে ভাল করিয়া বসিয়া ধায় । স্বভাব-নোংরা মেয়েদের মাঝে মাঝে একটু অমুখ-বিমুখ করা ভাল,—ম-বোনের যত্ন আৰ্ত্তি পায় তাহা হইলে—একটু নজর পড়ে। দুর্ভাগ্যক্রমে নৃত্যকালীর সে বালাই নাই ; সে অটুট স্বাস্থ্য এবং অসংস্কৃত শরীর ও বেশভূষা লইয়া দূরে দূরেই কাটাইয়া দিতেছে । গুণের মধ্যে মেয়েটির স্বভাব বড় নরম, অন্তত: তাহার চোখ দুটি এত নরম যে তাহাকে কাছে কাছে রাখিয়া নিশ্চিন্ত তৃপ্তির সঙ্গে বেশ একটি কর্তৃত্বের ভাব উপভোগ করা যায় । খেলাঘরের জগতে এ একটা মস্তবড় লোভনীয় জিনিষ - শৈল বলিল, “তোমার ছেলে ভাই হাবুলদাদার মত তিনটে পাস দিয়ে চারটে পাসের পড়া করছে বলে যে আমায় ন-হাজার টাকা তোমার ছিচরণে ঢালতে হবে সে আমি পারব না । আমার মেয়ে মুন্দর—তার একট কদর নেই ? আমি বরাভরণ-টরণ নিয়ে পাঁচটি হাজারের ওপর উঠছি নে , এইতেই তোমায় রাজী হ'তে হবে।” অথচ এই কয়দিন আগে, এই নৃত্যকালীকেই শৈলর اسماس-۹ করিয়! বেড়ায় । নোংরণ مهمی رسد অপগও ছেলেটি নগদ সাত হাজার টাক দিয়া লইতে হইয়াছে। অন্য সঙ্গিনী হইলে বাকিয়া বলিত, অন্তত: ঠেস দিয়া ছুটে কথা বলিত ত নিশ্চয়।...মৃত্যকালী সঙ্গে সঙ্গেই চুলের পুচ্ছ বায়ে হেলাইয়া বলিল, “হব রাজী ।” অকুমান হয় এই সব কারণেই, হাজার নোংরা হইলেও নৃত্যকালী অপরিহার্য্যা – নোড়াতুড়ি লইয়া খেলা চলে, তাহাতে পরিষ্কারও বেশ থাকা যায়, কিন্তু যতই অপরিষ্কার হোক না কেন কাদা লইয়া খেলায় একটা বিশেষ সুখ এবং সুবিধা আছে—যেমনটি ইচ্ছা ভাঙা-গড়া চলে । মৃত্যকালীকে বিস্তু রাখা হয় খুব সঙ্গোপনে । ঘরের যে ফালিটুকু ভিতবের দিকে চলিয়া গিয়াছে, নৃত্যকালী চুপি চুপি আসিয়া সেই দিকটায় বসিয়া থাকে । হাবুল যদি সিড়ি দিয়া উপরে যায় কিংবা নীচে আসে, ওর অস্তিত্বের খবরই পায় না। শৈলর কড় হুকুম আছে –যেন ভুলিয়াও কথন হাবুলদাদার ঘরের দিকে না যায়, কি জোরে শক নী করে । বলে, “তা যদি কর জলার পেত্নী, তো হাবুলদাদা টের পেলে সঙ্গে সঙ্গে আলসে ডিঙিয়ে তোমায় নীচে ফেলে দেবে, আর তোমার সঙ্গে খেলার জন্যে আমার দশা সে কি করবে ভেবেই পাই না ।" হাবুল অশুচির ভয়ে ঘর ছাড়িয়া কম যাওয়া-আসা করার জন্যই হোক, অথবা যেজন্যই হোক, প্রায় মাসখানেক বেশ কাটিল, তাহার পর নৃত্যকালী এক দিন হঠাৎ ধর পড়িয়া গেল । যদি বলা যায় হাবুলই ধরা পড়িল, তাহা হইলেও বড়একটা ভুল হয় না । ব্যাপারটা ঘটিল এই রকম - চৈত্র মাসের দুপুর বেলা । হাবুলদের কলেজ গরমের ছুটিতে বন্ধ হইয়াছে। হাবুল ঘরে বসিয়ু একটা কবিতার বই পড়িতেছিল ; হঠাৎ একটা ঘর-ছাড়ান ভাবে মনটা কেমন হইয়া গেল । সে বাহিরে আসিয়া, দুইটা নারিকেল গাছের মাথা একত্র হইয়া ঘরের আড়ালে যেখানে একটি নিবিড় ছায়া ফেলিয়াছে সেইথানটায় দাড়াইল । গুন্ধতাটুকু বেশ লাগিল –ঝিরঝরে বাতাস দিতেছে, তাহাতে বিশ্রান্ত পল্লীর এখান-ওখান থেকে কতকগুলা চাপা