পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানুষের মন শ্রীজীবনময় রায় ૨૨ সেদিন নিখিলনাথ তার খাসকামরায় বসে পড়াশুনা করছেন এমন সময় দরোয়ান একটি ছোট চিঠি তার কাছে এনে দিলে। চিঠিতে লেখ্য, “দয়া করে আমাকে এক মিনিটের জন্তে দেখা করতে দিন।" এই সময়ট বিশেষ ক'রে তার পাঠচর্চার সময় এবং কোন কারণে কেউ তাকে এ সময় যেন বিরক্ত না করে এমন হুকুম দরোয়ানের উপর দেওয়া আছে। সুতরাং দরোয়ানের দিকে চাইতেই সে বেচারা কৈফিয়ৎ দিতে মুরু করলে, “হুজুর, বই, শুনতি মহী । ময়নে বহুং কহ ; কিসী তরহ সে উস্কে হট নহী সক কহ,তি হয়, আপকে সাথ মুলাকাং নহ করৱানেসে পিছে আপ গুস্সা হোৱেঙ্গে । আওরং হয়, সাব । হুকুম মিলে তো—” হুকুম পেলে সে স্ত্রীলোকটির উপর কি জাতীয় বীরত্ব দেখাতে পারে, সে সম্বন্ধে কৌতুহল প্রকাশ না করে নিখিলনাথ তাকে ডেকে আনতে বললেন । র্তার নিজস্ব আস্তানায় স্ত্রীজনসমাগম প্রায় ঘটেই না— স্বতরাং মনে মনে অবাকৃ হয়ে যখন তিনি আকাশপাতাল ভেবে কিছু ঠিক করতে পারছেন না এমন সময় পর্দা সরিয়ে একটি অপরিচিত তরুণী এসে ঘরে প্রবেশ করলে । বিস্ময়ের উপর বিস্ময় অনুভব করে তিনি তার দিকে জিজ্ঞাসু চোখ তুলে চাইতে সে এগিয়ে এসে ক্লাস্ত ভাবে বিনা আহবানেই একখানা চেয়ার টেনে ব’সে পড়ল। নমস্কার বা কোন প্রকার বাহ ভদ্রতা প্রকাশের কোন চেষ্টাই সে করলে না। নিখিলনাথ এই তরুণীটির ব্যবহারে উত্তরোত্তর বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে তার দিকে চেয়ে রইলেন । অপরিচিত তরুণীর সঙ্গে একাস্তে কালক্ষেপ করা তার অভিজ্ঞতার মধ্যে আর কখনও ঘটে নি। তা ছাড়া এই প্রকার অভিনব বাক্যবিহীন পরিচয়ে তিনি মনে মনে অত্যন্ত অস্বস্তি বোধ করতে লাগলেন । মেয়েটির পরিধানে একটি অনতিপরিচ্ছন্ন ছাইরঙের সিদ্ধের শাড়ী তার তত্ত্বদেহ্যষ্টি সযত্নে বেষ্টন করে তার সহজ আত্মবিশ্বাস এবং কৰ্ম্মপটুতার ভাবখানিকে পরিস্ফুট করে তুলেছে। হাতে তার দুই গাছি হাতীর দণতের প্লেন শাখা ছাড়া দেহে অন্ত অলঙ্কারের চিহ্ন মাত্র নাই। অনবগুষ্টিত মাথার স্বল্পতরঙ্গায়িত কেশ প্রায় অযত্নবিন্যস্ত ; মধ্যে সরল দ্বিধা- ও ভঙ্গিমা-হীন সিধি সিন্মুরচিহ্নবিবর্জিত। অবেণীবদ্ধ কেশরাজি মাথার পিছনে অভ্যস্ত হাতে আঁট ক'রে একটা পরিপুষ্ট থেপায় বাধা । মেয়েটির পায়ে এক জোড়া রবারের ইলিশূন্ত জুতো এবং তার অৰ্দ্ধেক হাতকটা ব্লাউসের গ্রাস থেকে যে হাতখানি তার কোলের উপর এসে নেমেছে, তাতে লালিত্যের চেয়ে সতেজ সাবলীলতার আভাস সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে । মেয়েটির চেহারা, পরিচ্ছদ, বসার ভঙ্গী প্রভৃতি সব মৃদ্ধ নিয়ে তার মধ্যে যে একটি বৈশিষ্ট্য আছে এক মুহূর্তে তা চোখে পড়ে। নিজের সম্পূর্ণ অজ্ঞাতে নিখিলনাথ একদুষ্ঠে বিস্ময়াবিষ্ট চোখে দেখছিল । সে সুন্দরা কিনা সে কথা মনেই আসে না, বিস্ময়ের সঙ্গে মনে হয় সে আশ্চর্য । প্রায় আধ মিনিট নিৰ্ব্বাক থেকে মেয়েটি বিনা ভূমিকায় বললে, “আপনাকে দয়া করে এখুনি আমার সঙ্গে একটু যেতে হবে । আপনার গাড়ী নিশ্চয় আছে, কিন্তু তাতে হবে না । কষ্ট করে আমার সঙ্গে আপনাকে বাসেই যেতে হবে । দেরি করবার সময় নেই। বেশী দেরি করলে হয়ত আপনি তাকে বঁাচাতেই পারবেন না।” এ যেন অনুরোধ নয়,-- হুকুম। নিখিলনাথ কি বলবেন ঠিক করতে না পেরে একটু ইতস্তত করতে লাগলেন। তার পর বললেন, “দাড়ান, ইনচার্জ যিনি আছেন তাকে একবার বলে আসি।” মেয়েটি এবার একটু হাসল। সে হাসিতে দাক্ষিণ্যের কোন ভাষা ছিল না, বললে, “কাউকে না ব'লে গেলেই আপনার পক্ষে বেশী নিরাপদ