পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাদ্র নন্দলাল খানিকটা নড়ে চড়ে বসে বললে, বলে অকারণে এতক্ষণ পরে অকস্মাৎ করলে । তার পর বিনা প্রশ্নেই বলে “ওঁর ছেলেটিকে নিয়ে আসতে হয় কিনা ; মানে ছেলেটি আমাদের কাছেই খাকে তাই তাকে নিয়ে— মাকে ছেড়ে থাকে নি—-ছেলে মামুষ--তাকে নিয়েই উপরে গেছেন—আসবেন এখুনি। দরোয়ানকে বলব আপনি এসেছেন ?”...কথাগুলো যেন নিৰ্ব্বোধের মত শোনাচ্ছে সহসা এইরকম অনুভব ক'রে নন্দ নিজের উপর অত্যন্ত বিরক্ত হ'য়ে থেমে গেল । নন্দলালের অদ্ভুত কথাবাৰ্ত্তায় একটু অবাক হ’লেও নিখিলনাথ আর কোন বাক্যব্যয় না করে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে কমলের জন্মে অপেক্ষা করতে লাগলেন । নন্দলাল মনে মনে তার নিজের কথাগুলো আলোচনা ক'রে অত্যস্ত অস্বস্তি বোধ করতে লাগল। রাগও হ’ল নিজের উপর । ভাবলে, লেখাপড়া শিথে এত মানুষ চরিয়ে এসে একট। ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা পৰ্য্যস্ত বলতে শিখলাম ন। সে একটু ভেবেচিন্তে নিজেকে সংযত ক’রে নিয়ে সহজ ভাবেই জিজ্ঞাসা করলে “জ্যোৎস্নাকে আর কত দিন থাকৃতে হবে ? ওর কোস ত শেষ হয়ে এন্স, না ?” নিখিল বললেন “হ্যা, আর মাস চারেক । তারপর অবশু ওঁর ইচ্ছা হ’লে এইখানেই কাজ পেতে পারবেন ।” নন্দ ভালমামুষের মত জিজ্ঞাসা করলে, “এথান থেকে যার পাস করে তাদের সকলকেই আপনারী কাজ দেন বুঝি ?” “ন, তা কেমন ক’রে দেব । যারা সব চেয়ে ভাল তাদের মধ্যে দু-জনকে প্রতিবছর আমরা এক বছরের জন্তে কাজ দি । ওঁর কাজে এবং ব্যবহারে সকলেই খুব খুশী— সুতরাং কাজ যদি উনি করেন ত আমরা সকলেই খুব খুশী হব ।” এত খুশী হওয়ার খবরে নন্দর মনটা আবার ভারী হয়ে উঠল। সে অত্যন্ত সংক্ষেপে একটি মাত্র “ক” দিয়ে চুপ ক’রে রইল । সংসারে অনভিজ্ঞ নিখিলনাথ জ্যোৎস্নার আত্মীয়ের কাছে জ্যোৎস্নার গুণের কথা বললে তিনি আনন্দ পাবেন মনে ক'রে বললে, “কি আশ্চৰ্য্য অধ্যবসায় ওঁর } “আজ্ঞে হঁ্য ।” একটা নমস্কার যেতে লাগল, মানুষের মন శ్రీUS এত অল্পদিনের মধ্যে উনি এত চমৎকার ক’রে সব আয়ত্ত ক'রে নিয়েছেন—দেখলে অবাক হ’তে হয় । শেখবার ইচ্ছাও ওঁর খুব ।” নন্দলাল অনাত্মীয় একজন পুরুষের এই প্রশংসায় মনে মনে উত্তপ্ত হয়ে উঠল । কিন্তু আবার একটা “হু” বলে সে চুপ ক’রে রইল। নিখিল নদের মনোভাব বুঝতে না পেরে ভাবলে যে আত্মীয়ের প্রশংসায় যোগ দিতে বোধ হয় নন্দের বিনয়ে বাধা লাগছে । তাই সে আরও উৎসাহিত হ'য়ে নন্দর কাছে জ্যোৎস্নার গুণবর্ণনা প্রসঙ্গে বললে, “আর সকলের চেয়ে আশ্চৰ্য্য এই যে শুধু কাজের জন্য নয়, ওঁর চরিত্রের গুণে উনি সকলেরই শ্রদ্ধা লাভ করেছেন— যা এখানকার কোন নাসের ভাগ্যেই প্রায় ঘটে না ।” এইবার নন্দর কৌতুহল উদ্দীপ্ত হ’ল, বললে “কেন ?” এক নিমেষে তার বাঙালীর প্রাণ একটা কুৎসার আশায় উদ্‌গ্ৰীব হয়ে উঠল । নিথিল সেদিকে লক্ষ্য না ক’রে বলে গেল, “তার কারণ অধিকাংশ নাসাঁই ডাক্তারদের মন যুগিয়ে চলে,—অর্থাৎ তাদের চলতে হয়। তাদের চাকরি, তাদের সম্পূর্ণ ভবিষ্যৎ সবই সেই ডাক্তারদের কৃপার উপরই প্রায় নির্ভর করে । লেখাপড়া বা কালচার বলে কোন বস্তুর সংস্পর্শ এদের অধিকাংশই কখনও ত পায় না, কাজেই অন্য উপায়ে ডাক্তারদের মনস্তুষ্টি করতে তাদের বাধেও না—আর তা ছাড়া তাদের গতিই বা কি ?" নন্দ মনে মনে ভাবলে একবার জিজ্ঞেস করে, " খুব বুঝি চলে ?” এই রসাল সংবাদটা নেবার জন্যে তার মনটা লোভিয়ে উঠল । কিন্তু তার ভরসায় কুলোল না । নিরীহ ভাবে বললে, “তাই ত, নাসদের ত তাহ’লে বিপদ কম না ।” “না, সেটা অবশু যার যার চরিত্রের বা মতিগতির উপর নির্ভর করে । জ্যোৎস্ন দেবী সম্বন্ধে ও কথা একেবারেই খাটে না । দেখুন না, এখানকার একটা বদ রীতি আছে— ডাক্তারের। নাসদের ‘তুমি' বলে সম্বোধন করেন । কেবল ওঁরই বেলায় দেখি ব্যতিক্রম হয়েছে । অথচ আশ্চৰ্য্য এই যে ওঁর বয়স বেশী নয় ।” জ্যোৎস্নার প্রসঙ্গ যে এই অল্পভাষী গুরুগম্ভীর লোকটিকে বাঙ্ময় করেছে এ কথা বুঝতে নন্দলালের বিলম্ব হয় নি ।