পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাদ্র ভিতর থেকে চশমা বার করতে করতে বললেন, “শুধু সাদা নয়, রঙীনও বের কর দেথি ।” স্বধীর চটে গিয়ে ভাবলে, ও বুড়োর সখ দেখ! অনিচ্ছার সঙ্গে উঠে গিয়ে সে আরও কতকগুলো শাড়ী নিয়ে এল । ভদ্রলোকের পছন্দ আর হয় না । অনেক ক্ষণ ধ'রে অনেকগুলি শাড়ী নেড়েচেড়ে তার পছন্দ হল একথান নরম রেশমের স্নিগ্ধ সবুজ শাড়ী, ঘন লাল পাড়। দাম শুনে তার শুষ্ক মুখ আর একটু শুকিয়ে গেল। অনেক ক্ষণ দরকষাকষির পরও কিছুতে সুবিধে হ'ল না, বৃদ্ধ অগত্য একথান কম দামের আলপাকা শাড়ী নিলেন । পুরনো চামড়ার থলিটি নিঃশেষ ক'রে দাম দিয়ে স্নান মুখে চলে গেলেন । এত চেচামেচির পর স্ত"-রর মেজাজ আরও বিগড়ে গেছে । অনর্থক বুড়োর সঙ্গে বকবকি ক'রে সময় নষ্ট হ’ল, খুব ত এক শাড়া কিনলেন তার জন্তে এতক্ষণ ধ'রে বাছাবাছি, —যেন দোকানটাই কিনতে চান । শেষকালে শাড়ী যদি বা পছন্দ হয় ত দাম পছন্দ হয় না ! ঘরে আছে বোধ হয় চতুর্থ পক্ষের স্ত্রী, কাপড় পছন্দ হ’লে তবেই ত ভাল করে মিঠে পান ছেচে দেবে, পাক চুল তুলে দেবে, তাই বুড়োর এত বাছাবাছি, অথচ পয়সাখরচটি সম্বন্ধে সাবধান। প্রণয়ও চাই এবং ব্যয়সঙ্কোচণ্ড চাই । হিসাবী প্রেমিক--- আর এক জন খদের দোকানে ঢুকে ক্লাস্তভাবে সতরঞ্চের ওপর বসে পড়ল, বললে, “দেখি কাপড় ।” বয়স তার পয়ত্ৰিশও হতে পারে, পঞ্চায়ও হতে পারে, ময়লা শাটের ওপর আধময়লা জিনের কোট, বেঁটে চেহারা, বুদ্ধিদীপ্তিহীন মুখ । কতকগুলো কাপড় দেখেশুনে একখানা চওড়া জরিপাড় ঢাকাই শাড়ী তুলে নিয়ে দাম জিজ্ঞেস করলে । “আটাশ টাক বারো আন৷ ” লোকটির মুখ একেবারে নিম্প্রভ হয়ে গেল । সে বললে, “কিছু কম হবে না ?” সুধীরের মেজাজ বিগড়ে ছিল, সে বললে, “জিনিষ সরেশ হ'লে তার দাম এই রকম হয় । এই নিন না কম দামের কাপড় "...সে কতকগুলো গামছার মত জ্যালজেলে কাপড় ফেলে দিলে। লোকটি সেই চওড়া পাড় শাড়ীখানা আবার তুলে নিয়ে অনেক ক্ষণ ধ'রে নাড়াচাড়া ক’রে দেখলে । শাটের হাতের বোতামগুলোর দিকে চেয়ে বহুক্ষণ সে অহমনস্ক হয়ে বসে রইল । সুধীর ভাবলে, আচ্ছা জালাতন ত! উঠবে না নাকি । লোকগুলো ঘরে গিয়ে যত পারে ভাবলেই ত পারে, তা নয়, ভাবনা যত দোকানে এলেই ! স্ত্রী বোধ হয় মস্ত ফ্যাশনেবল, দামী কাপড় না হ'লে মন উঠবে না, এদিকে লোকটিকে দেখে ত মনে হয় স্বদখোর মহাজন, দেনদারের গলা টিপে টিপে স্বদ আদায় ক’রে করে অভ্যাস হয়ে গেছে সব জিনিষ টিপে চিত্ৰলেখা ^o్స টিপে দেখা। মহাজন যখন, তখন টাকার কুমীর নিশ্চয় । চশমূখের আর. কাকে বলে ! মুখে বললে, “এখানাই নিয়ে নিন, এ-জিনিষ্ণু আর কারও অপছন্দ হবার জো নেই ।” লোকটি কি ভাবলে, তার পর উঠে পড়ে বললে, “আচ্ছা এখানা আলাদা করে রাখ, আমি একটু পরে এসে নিয়ে যাব ।’’ সুধীর ভাবলে, আরও পাচ দোকানে দাম যাচাই করতে গেল নিশ্চয় ! ঘণ্টাদুয়েক বাদে সে যখন এসে শাড়ীখানা নিয়ে গেল, স্বধীর যদি কাজের ভিড়ে লক্ষ্য করত তাহ’লে দেথত তার শার্টের হাতার সোনার বোতামগুলো অদৃশু হয়ে গেছে। সুধীর ভাবছিল এবার একটু ছুটি মিলবে, কিন্তু ছুটি তার ভাগ্যে নেই সেদিনে। এক জন যুবক রৌপ্যশুভ্র একথান স্বচালিত মোটর হতে নেমে এল । মহীশূরী জর্জেট দেখাতে বললে দোকানে এসে । স্বধীরের ব্যবহার তৎক্ষণাৎ সসন্ত্রম হয়ে উঠল । এ নিশ্চয়ই বড়লোকের ছেলে, বাপ অনেক পয়সা রেখে মরেছে, ছেলে তার সদ্ব্যবহার করছে । এর স্ত্রী নিশ্চয় আজকালকার মেয়ে, মাসিক পত্রিকায় ভাল ভাল উপন্যাসে যাদের ওপর অনবরত গালি বষিত হয় । আরামচেয়ারে বসে টেবিলের ওপর পা তুলে সিগারেট খেয়ে থেয়ে সে মেয়ের বোধ হয় বাত হবার উপক্রম হয়েছে, তৃত্যপরিজন মক্ষিকার মত অনুক্ষণ তার চার পাশে ভন ভন করছে আর সেলাম করছে, সমস্ত সংসার তার অনিয়ন্ত্রিত, চারি দিকে কেবল অশুদ্ধাচার আর অপরিচ্ছন্নত । আতিথেয়তার সে ধার ধারে না, সংসারের কাজে ফুটাটি ড়ে না, স্বামীভক্তি তার একেবারে নেই, কেবল অস্বাভাবিক স্বরে কথা বলে, বাইরের লোক নিয়ে হৈ হৈ করে আর ককটেল পার্টিতে যায়। ককটেল পার্টটা কি বস্তু সে সম্বন্ধে স্বধীরের ধারণ; ধূসর । দু-এক বার সে মাসিক পত্রের গরে কথাটা পড়েছে, কিন্তু লেখক-লেখিকাদের ও-সম্বন্ধে ব্যক্তিগত জ্ঞান না থাকাতেই বোধ হয় জিনিযটা রহস্যজড়িত হয়ে দেখা দিয়েছে। দু-চার জনকে জিজ্ঞেসও করেছে জিনিষটা কি। কিন্তু সকলেরই ধারণ তার মত ধূসর, তবে এট যে ভয়ঙ্কর দোযবহ একটা ভীষণ ব্যাপার এ-বিষয়ে সকলেই স্থিরনিশ্চয় । অনেক কাপড়ের স্তুপ হতে যুবক একখানা বেছে নিলে। সোনালী স্বন্দর রং । স্বধীর কাগজ মুড়ে কাপড়খানা গাড়ীতে তুলে দিয়ে এল। সমস্ত কাজ সেরে যখন তার ছুটি হ’ল দোকানের ঘড়িতে তখন বারোটা প্রায় বাজে । ছ-শ টাকা দামের বেনারসী শাড়ী ততক্ষণে যথাস্থানে পৌছেছে। বাহাদুরপুরের মল্লিকবাৰু তার দেহের অনুযায়ী