পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سواچ۹ মালিক কি আমি, ভুবন ? তোমার কাছে আমি নিজেই কত অপরাধ করেছি তার লেখাজোখা নেই। শাস্ত হওঁ, ওসব কথা ভেবে মনকে অকারণ কষ্ট দিও না ।” গ্রামের বৃদ্ধ কবিরাজ আসিতে আসিতে ভোরের মুক্তাস্বচ্ছ আলো ফুটিবার উপক্রম করিল। নাড়া দেখিয় তিনি একটাও কথা বলিলেন না, ঘরের বাহিরে আসিয়া একটা বড়ির ব্যবস্থা করিয়া নিঃশব্দে তখনই চলিয়া গেলেন। স্বরধুনী চোখে আঁচল দিয়া অশ্রুরোধ করিবার বৃথা চেষ্টা করিতে লাগিলেন । যে মৃত্যু প্রথম যৌবনে তাহার মুখস্বর্গের মন্দনকানন দুই পায়ে বিদলিত করিয়া চলিয়া গিয়াছিল, সেই মৃত্যু আজ আবার শিয়রের কাছে হানা দিয়াছে, যে-গৃহে প্রথম পৃথিবীর জালে৷ চোখে পড়িয়াছিল, যে-পৃহে মৃতপ্রায় প্রাণ দ্বিতীয় জন্মলাভ করিয়াছিল, সে-গৃতের মূলও আজ যমরাজ উপাড়িয়৷ লইয়া যাইবেন । ভুবনেশ্বরীকে যাইতে হইবে, আর দেরী নাই । মহামায়ার প্রাণ শঙ্কিত হইয়া উঠিল, ব্যগ্র হইয়। বলিলেন, “কিছু একটা কর । আর কিছুদিন, অন্ততঃ কিছুক্ষণ যাতে ধ’রে রাখা যায় তার উপায় করা যায় না ? এই বড়ি ছাড়া আর কিছুই কি করবার নেই ?" অকস্মাং কালপ্রবাহের তুচ্ছ মুহূৰ্ত্তমালার প্রত্যেকটি প্রস্থি যেন অনন্ত ঐশ্বৰ্য্যের ভারে ভারাক্রাস্ত হইয়া উঠিল । পলায়নপর প্রাণশক্তিকে তাহারাই যে ধরিয়া রাখিয়াছে । এই সুদীর্ঘ অতীতকাল ধরিয়া যে-জীবন এতবড় গোষ্ঠীর প্রত্যেক ছোট-বড়র কাছে মহাসত্য ছিল, এই কয়েকটি মুহূর্বের পর ভবিষ্যৎ কালপ্রবাহে সে চিরদিনের জন্য মিথ্যা হইয়া যাইবে । যত দিন যাইবে, ততই তাহার স্মৃতির কণা পৰ্য্যস্ত অতীতের অতল অন্ধকারে নিশ্চিহ্ন হইয়া মিলাইয়। যাইবে । এই যে কয়েকটি মুহূৰ্ত্ত মাত্র প্রাণময়ীকে চোখে সত্য বলিয়। দেখা যাইতেছে, স্পর্শে সত্য বলিযা অতুভব করা যাইতেছে, কর্ণে সত্য বলিয় শোনা যাইঠেছে, ইহার পরেই সব মিথ্যা ! এই কয়েকটি মুহূর্তের মধ্যে অতীত স্মৃতির ও বর্তমানের সমস্ত সত্য পুঞ্জীভূত হইয়া উঠিয়াছে । ইহার মূল্যের কি তুলনা আছে ? ভুবনেশ্বরী স্বামীর কোলের উপর মাথা রাথিয় হাসিতে হাসিতে পুত্রকন্যাদের মুখের দিকে সস্নেহ স্থিরদৃষ্টি তুলিয়া চলিয়া গেলেন । কন্যারা কাদিয়া মায়ের বুকের উপর শিশুর প্রৰাসী NNHONA মত আছড়াইয়া পড়িল । মায়ের তুষারের মত শীতল দেহ এই বুকফাট বিলাপে কোনও সাড়া দিল না। ছেলেরা মাখার কাছে দাড়াইয়া অভ্ৰমোচন করিতে লাগিল । লক্ষ্মণচন্দ্র ঘর ছাড়িয়া চলিয়া গেলেন, তাহার জীবনের অবসান যেন তিনি চোখে দেখিতে লাগিলেন। জীবনের পঞ্চান্নট বৎসর যে স্বত্রে এই মুহূৰ্ত্ত পয্যন্ত পর্তমানের সহিত গাথা হইয়া ছিল তাহ ছিড়িয়া অতীতের গহবরে বিলীন হইয়া গেল কিন্তু কই, জীবনে যাহা-কিছু করিবেন মনে করিয়াছিলেন তাহার অনেক কিছুই ত করা হইল না। আর সময়ও ত নাই। ভবিষ্যতের তুচ্ছ কয়েকটা দিন মাত্র এখন জীবন বলিয়া চোথের সম্মুখে উর্ণনাভের জলের মত দুলিতেছে। কত সাবধানত, কত যত্ন, কত হিসাব করিয়া যে-জীবনকে এতদিন ধরিয়া রাপা হইয়াছে, আজ এক মুহুর্তে মনে হইতেছে এই সাবধানত, এই আগলানে, এ কি অদ্ভুত হাস্যকর ছেলেমান্তী! এই ক্ষণভঙ্গুর কাচের মত জীবনপাত্র দুই-চার মুহূৰ্ত্ত বেশী থাকিলেই বা কি, কম থাকিলেই বা কি ! অনন্ত অতীতের সমাধিস্থলে সেই কমবেশীর মধ্যে তারতম্য কিছু আছে কি ? কত সহজে কত অনায়াসে সকলের জাগ্রত দৃষ্টির পাহারার উপর দিয়া মৃত্যু তাহার পাওনা নিঃশবে অদৃপ্ত হস্তে লইয় গেল । কেহ ত বাধা দিতে পারিল না ! মেয়ের ভুবনেশ্বরীর সীমস্তে সিছুর ঢালিয়া রাঙা করিয়া দিল, চরণে অলক্তক লেপিয়া দিল । ছোটবড় শিশু যুবা বৃদ্ধ সকলে পায়ের ধূলা মাথায় লইয়া গৃহলক্ষ্মীকে মহাযাত্রার পথে অগ্রসর করিয়া দিল । বেদনায় সকলের মুখ বিকৃত হইয়া গিয়াছে, বিস্ময়ে ভয়ে শিশুদের কচিমুখে ডাগর চক্ষু বিস্ফারিত হইয়া উঠিল । সুধা মায়ের আঁচল চাপিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “মা গে, দিদিমাকে কোথায় নিয়ে গেল ? অার দিদিম ফিরে আসবে না ?” মহামায় অশ্রীকৃদ্ধ কণ্ঠে বলিলেন, “নাম, আর কেউ আসে না ; স্বর্গে চলে গেলেন যে !” স্বধী বিস্মিত চক্ষে পথের দিকে তাকাইয়ু ভাবিতে লাগিল, “এই কি স্বর্গের পথ ? এত সহজ ! এই ধাহার দিদিমাকে স্বর্গে পৌছাইতে যাইতেছে, তাহারা ত আবার আসিবে, তবে কেন দিদিমা আসিবেন না ?” কিন্তু