পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাদ্র এতদ্ব্যতীত আগ্নেয়গিরির উদগীরণ, জাগতিক পদার্থসমূহের নিয়ত সংঘাত এবং নানা অবস্থায় বিভিন্ন কারণে পরস্পরের সংঘর্ষের ফলে ধূলির উৎপত্তি। বাত্যাতাড়িত বৃক্ষলতা-গুল্ম হইতেও কিৎপরিমাণ ধূলির উৎপত্তি হয়। (খ ) মানুষের কৃত ধূলি যান্ত্রিক যুগে মানবের অন্যতম প্রধান কৰ্ম্মকেন্দ্র শ্রমশিল্পাগারসমূহে ; কলকবজাগুলি প্রতিনিয়ত প্রভূত ধূলির উৎপাদন করে। সভ্য জগতের রাসায়নিক প্রক্রিয় ও রসায়নাগারসমূহ ধুলিহষ্টির অপর স্থান। চাষবাসের নিমিত্ত ভূমি-কর্ষণ প্রত্যেক ঋতুতেই পৃথিবীর কোন-না-কোন অংশে চলিতেছেই ; ঘর-বাড়ী তৈয়ারি, করাত-ফাড়া, কাঠকাটা ইত্যাদি কত কারণে যে ধূলির উৎপত্তি হয় তাহ বলিয়া শেষ করা যায় না । এইরূপ নানা প্রকার কার্য্য-কারণের ফলে পৃথিবীব্যাপী সৰ্ব্বত্র সকল সময়ে পুঞ্জীভূত ধূলিরাশি বিস্তৃত ও সঞ্চিত হইয়৷ চলিয়াছে। কিন্তু ইহার নির্দিষ্ট সংযোজনা নাই, নিশ্চিত বস্তুস্বাতন্ত্র্য নাই—সৰ্ব্ব প্রকারের সকল শ্রেণীর ধ্বংসমুখী প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম পদার্থসমূহের অধঃপতিত বা সংযোগবিচ্ছিন্ন বস্তুকণাসমূহের সম্মিলনে স্তুপীকৃত ধূলিরাশি নিত্য সঞ্চিত হইতেছে ; অসম বস্তর মিলনে ইহার স্বষ্টি, সেই হেতু ইহা নিজেও অসমাবয়বী। ধূলির বিভিন্ন বস্তুকণাগুলির রাসায়নিক সংযোজন হয় না বটে, কিন্তু তাই বলিয়া বিভিন্ন স্থানের ধূলির মধ্যে শ্রেণীবিভাগ করাও সহজ ব্যাপার নহে। ধূলিতে নাই কি, এ কথা যেমন সত্য, ধূলিতে আছে কি, তাহা নিরূপণ করাও ঠিক তেমনই কঠিন। স্বর্ণকার যেখানে বসিয়া সোনার কাজ করে সেই ঘরে মেঝের ধুলা-বালি সযsে সংগ্ৰহ করিয়া রাখে, ঝাড়িয়া ধুইয়া যত্নে তাহা হইতে স্বর্ণকণা সংগ্ৰহ করিয়া লয়। হাতের আংটী ক্রমশ ক্ষয় হইতে থাকে, এ ত আমরা নিতাই দেখিতেছি । কিন্তু হাতের ঘষায় বা নিয়ত নানা কাৰ্য্যব্যপদেশে বিভিন্ন বস্তুর সংঘাঙে আংটার স্বর্ণকণাগুলি যে বিচ্ছিন্ন হুইয়া পড়িতেছে, তাহা কোথায় যায়, কোন অবস্থায় থাকে, কি হয় ? কৰ্ম্মকার ছুরি, কঁচি, দ, প্রভৃতি লোহার জিনিষ প্রস্তুত করে ; তপ্ত লৌহের উপরে হাতুড়ির অনবরত আঘাতের খুলি ও ব্যাধি ৭২৫ ফলে যে কত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র লৌহকণা ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত হইয়া পড়িতেছে তাহার ইয়ত্ত নাই। এমন কত ঘটনা প্রতিদিন প্রত্যেক মুহূৰ্ত্তে আমাদের চতুষ্পার্থে ঘটিতেছে তাহার সীমাসংখ্যা নাই। কিন্তু বিভিন্ন পদার্থের বস্তুকণাগুলি কোথায় যায় ? তাই বলিতেছিলাম, ধূলির শ্রেণী নিৰ্দ্ধারণ এবং স্থানবিশেষের ধূলির স্বরূপ নিরাকরণ স্বকঠিন। কিন্তু এই সকল লইয়া যুক্তি-তর্ক তুলিতে গেলে মাত্র একটি ক্ষুদ্র প্রবন্ধে সম্পূর্ণ করা সম্ভব নহে। বর্তমান প্রবন্ধের প্রধান উদ্দেশু ধূলির সহিত ব্যাধির কি সম্বন্ধ তাহার আলোচনা ৷ ধূলি ষে সময়ে সময়ে কিরূপ বিপদজনক এবং অপ্রীতিকর হহয় উঠে তাহা সকলেই অল্প-বিস্তুর অবগত আছেন । গ্রামাঞ্চলে ধূ-ধূ মাঠের মধ্য দিয়া পথ চলিতে দমকা বাতাসে যখন ধূলির ঝাপটা আসিয়া চোখে মুখে লাগিয়া অন্ধ করিয়া দেয়, তাহার অভিজ্ঞতা অজ্জন হয়ত শহরবাসীর জীবনে অনেকেরই ঘটে নাই। কিন্তু পথ চলিতে চলিতে পিছন হইতে একথান অতিকায় বাস আসিয়া তাহার ত্রস্ত সম্মুখগতির পশ্চাতে যখন ধূলি ও পেট্রোলের ধোয়ার পর্দা ছড়াইয়া দিয়া পথচারীর সন্মুখ-দৃষ্টিকে বিড়ম্বিত করিয়া তোলে, তাহ শহরবাসী প্রত্যেকেই নিত্য ভোগ করিয়া আসিতেছেন । কিন্তু এ ছাড়াও যে কি পরিমাণ ধূলি বায়ুমণ্ডলে নিয়ত ভাসিয়া বেড়াইতেছে, যাহা শুধু চোখে দেখিতে পাওয়া যায় না, তাহার কথা কেহ কোন দিন ভাবিয়া দেখিয়াছেন কি ? ঘরের মধ্যে আলমারির বইয়ে, দেওয়ালের ছবির কাচে, আশিতে, বিছান-পত্রে, চেয়ারে টেবিলে যে অনবরত ধূলি জমিতেছে, নিত্য ঝাড়িয়া মুছিয়াও কিছুতেই জিনিষপত্রগুলি ধূলিমুক্ত করা যায় না—এত ধুলা কোথা হইতে আসে ? আজ অবগু বর্তমান সভ্যতার বৈজ্ঞানিক যুগে শ্রমশিল্প বাণিজ্য প্রভৃতি দুই চারিটি প্রয়োজন পরিপূরণে ধূলি নিয়োগ ও ব্যবহার সম্বন্ধে কেহ কেহ চিস্তা করিতেছেন । কিন্তু লোকে প্রথমে অপ্রীতিকর দৃষ্টিতে ধূলিকে দেখিতে আরম্ভ করিয়াছিল ; বস্তুতপক্ষে ধূলি যে ব্যাধির স্বষ্টি করে তৎপ্রতিই লোকের দৃষ্টি প্রথম আকৃষ্ট হয় এবং তন্নিমিত্তই ধূলি সম্বন্ধে লোকে সৰ্ব্বপ্রথম বিশেষ অবহিত হইয় উঠে।