পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাদ্র গোলাকৃতি কিন্তু চিবুকের অগ্রভাগ সুহ্ম এবং নিম্ন ওষ্ঠের ঈষৎ-বক্র ভঙ্গিমায় আত্মপ্রসাদজনিত একটি দিব্যভাব ফুটিয়া উঠিয়াছে। নাসিকা ও কপাল উন্নত; কমনীয় ক্রর নিম্নে অৰ্দ্ধনিৰ্মীলিত চক্ষুর আত্মহারা ভাবে মূৰ্ত্তিগুলির মুখাবয়ব এক অনিৰ্ব্বচনীয় শাস্তশ্ৰতে মণ্ডিত হইয়াছে। বঙ্গীয় শিল্পের অম্বরূপ মূৰ্ত্তিগুলির বক্ষ সাধারণতঃ উন্মুক্ত এবং উন্নত, শুধু কটিদেশ বস্ত্রাবৃত এবং উহাও আবার মাত্র কয়েকটি রেখার সমাবেশে পূর্ণ। প্রায় সমস্ত মূৰ্ত্তিতেই মুকুট, সিথি, অঙ্গদ, বলয়, কণ্ঠহার, মুক্তাজাল, মেখল, কাঞ্চী, বাজুবন্ধ, মণিবন্ধ, কটিবন্ধ, নূপুর প্রভৃতি অসংখ্য অলঙ্কার চিত্রিত দেখিতে পাওয়া যায়। রাখালদাস বাধ্যাপাধ্যায় মহাশয় ১৩৩৪ সালের ‘প্রবাসীতে "গৌড়ীয় শিল্পের ইতিহাস” প্রবন্ধে লিখিয়াছেন যে গান্ধারের শিল্প-নিদর্শন যেমন থোটানের মরুভূমি হইতে মথুরা পর্যন্ত সৰ্ব্বত্র আদর পাইয়াছিল, মথুরার শিল্পীর রক্ত-প্রস্তরে ঠিত মুঠ যেমন লোক পূৰ্ব্বে বুদ্ধগয়া, দক্ষিণে সান্ধী ও পশ্চিমে ফুল-ঠেঙুড় পর্যন্ত লইয়া যাইত, বারাণসীর ೫. বুদ্ধ মূৰ্ব যেমন বরেন্দ্রভূমির বাঙালী নিজের সেশে স্টুয়া আসিয়া মন্দির-প্রতিষ্ঠা করিত, সেইরূপ গৌড়ীয় ভাস্করের মূর্তি খ্ৰীষ্টীয় নবম হইতে দ্বাদশ শতক পৰ্যন্ত পশ্চিমে শ্রাবস্তী, দক্ষিণে পুরী বা পুরুষোত্তম, পূৰ্ব্বে ব্রহ্ম, শ্যাম ও মলয় উপদ্বীপ এবং উত্তরে তিব্বত পর্য্যস্ত সাদরে গৃহীত হইত।* আনন্দ-মন্দিরের আর একটি বিশেষত্ব এই যে, মন্দিরের অভ্যস্তর-ভাগ বাংলা দেশের মন্দিরের মত খিলান-কর এবং উহা হইতে শব্দ করিলে তৎক্ষণাৎ প্রতিধ্বনি হয়। ইহা অনেকে লক্ষ্য না করিলেও আমার মনে হয় বাংলা দেশের মন্দিরের ইহাও একটি বিশেষত্ব। এক কথায়

  • “Possibly there was a regular manufacture of „uel, imagoa for tho Burma mnrket long after Buddhistin had died in Upper India."—Harvey, History of Burma, p li.

ব্ৰহ্মদেশে বঙ্গ-সংস্কৃতি Ag^ বলা যাইতে পারে, যদি পাহাড়পুরের পরে বাঙালী নিজস্ব কোন স্থাপত্য-শিল্প লইয়া গৰ্ব্ব করিতে চায় তবে উহ পেগানের আনন্দ-মন্দির । পরবর্তীকালে অমরাপুরে চাউকৃটজি ( Kyauktaugyi ) মন্দির (১৮৪৭ খ্ৰীষ্টাব্দ ), এবং পেগানের ধৰ্ম্ময়ন্‌জি ( Dhammayangyi ) ( ১১৬৪ খ্ৰীষ্টাব্দ ) এবং অনরথের পৌত্র আলঙসিথু (ইনিও অর্ণবপোতে ইণ্ডিয়ান ল্যাও অব বেঙ্গল’ পরিভ্রমণ করিতে আসিয়া পিতামহ অনরথ কর্তৃক স্থাপিত মূৰ্ত্তিগুলি দেখিয়াছিলেন) কর্তৃক নিৰ্ম্মিত খাট পিন্ধু (১১৪৪ খ্ৰীষ্টা) মন্দির প্রভৃতি প্রস্তুত হইয়াছিল। এই মন্দিরাবলীর স্থাপত্যবিজ্ঞান ও মূৰ্তিসমূহের সহিত বিশেষ ভাবে আরাকানের মহামুনি-প্যাগোডার নাগরাজ ও দেব মূৰ্ত্তি এবং পেগানে ats His siste (Nat-Hlaung Gyaung ) (fraz কল্কি, স্বৰ্য্য, রামচন্দ্র, পরশুরাম প্রভৃতি মূৰ্ত্তিগুলির গঠনপদ্ধতির একটি পরস্পর ঐক্য লক্ষিত হয়। ডক্টর কুমারস্বামীও তাহার 'হিষ্টি অব ইণ্ডিয়ান এণ্ড ইণ্ডোনেশিয়ান আর্ট পুস্তকের পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন যে নানাপায়৷ ( Nan-paya ) ফলকগুলি ও প্লাং গ্যাং মন্দিরে উৎকীর্ণ দশ অবতারের প্রস্তরমূৰ্ত্তি থাটি ভারতীয়, এবং একাদশ শতাব্দীর ব্রোঞ্জ ও বিশেষতঃ প্রস্তর মূর্তিগুলি বঙ্গ অথবা বিহার হইতে আমদানী হইয়াছিল। স্থাপত্য-শিল্পে মাত্র বুদ্ধগয়ার অনুকরণে পেগানে নন্দাঙ-মিৎ-মিন ( NanMia Min ) কর্তৃক ১১৯৮ খ্ৰীষ্টাব্দে নিৰ্ম্মিত মহাবোধি প্যাগোডাই দেখিতে পাই । মন্দিরটি সমচতুর্তজাকার এবং ইহার দুই-তিনটি শ্রেণীবদ্ধ কুলুঙ্গি-বিশিষ্ট একতলের ভিত্তি খুব উচ্চ। মধ্যে গোলাকৃতি বেদী বাদ রাখিয়; ইহা পিরামিডাকৃতি সমতল মন্দির । এই মন্দিরটির সহিত বঙ্গদেশের বুদ্ধগয়া মন্দিরের প্রকৃতিগত সাদৃশ্ব আছে * X \e daung

  • রাঙ্গ আলসির সময়েই যুদ্ধগয়-মন্দির সংস্কৃত হয় এবং উহার উৎসর্গীকৃত একখানি খোদিত লিপি বুদ্ধগয় মন্দিরে পাওয়া গিয়াছে।

এই প্রবন্ধের সহিত মুঞ্জিত চিত্রগুলি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সৌজকে প্রাপ্ত ]