পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্পেনের সন্ধানে শ্ৰীদেবেশচন্দ্র দাশ y কাল শেষরাত্রে শেষ শুক্লপক্ষের জ্যোৎস্নার মধ্যে বোর্দে থেকে হিস্পানীদের গান শুনতে শুনতে পীরেনীজ পর্বতমালার ইরুণ গিরিবক্সে এসেছি। এই গান খুব পরিচিত মনে হ’ল ; দু-মাস ইংলণ্ডর শীতের জড়তার মধ্যে এতটা সহৃদয়ত, এতটা আকর্ষণ পাই নি। লণ্ডনের কন্সাট হলের স্থ শীলতা ও মুকঠিন আচারনিষ্ঠ প্রথম প্রথম বিদেশীকে অভয় দিতে পারে নি; কিন্তু কাল রাত্রে পাৰ্ব্বত্য হিম্পানীদের গান আমাদের রাখালদের গানের মত জ্যোৎস্নার আভাসে ভরা আকাশে মিলিয়ে গিয়ে আমায় আশ্বাস দিচ্ছিল। তাই শেষরাত্রে সীমান্তের ষ্টেশনে অপরিচিত গ্রাম্য ও পাৰ্ব্বত্য লোকগুলির দুৰ্ব্বোধ্য ভাষা সত্ত্বেও স্পেনকে বিশ্বাস ক’রে হৃদয়ে বরণ ক'রে নিলাম। আলে, আলো ! কত মাস পরে জীবনের সাড়া পেলাম বলে মনে হ’ল। ইংলণ্ডের মান, মেঘাচ্ছন্ন, কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশের একটা রূপ আছে । সে-রূপ উপভোগ করতে হ’লে বহু ধৈর্য্য ধীরে ইংলণ্ডের অবগুণ্ঠন মোচন করতে হবে। কুয়াশায় পথ হারিয়ে ঘুরে ঘুরে অজানার সন্ধানের আনন্দ পেতে হবে ; আণ্ডারগ্রাউণ্ডে সময়মত কলেজে না গিয়ে শীতের প্রভাতে ‘বাসে গিয়ে রক্তস্বর্ষ্যের হরিদ্রাভ অপমান দেখতে দেখতে দেরি করে ফেলে এবং ক্লাস কামাই ক’রেও বিষণ্ণ ভাব দূর করে ফেলতে হবে ; রাত্রে বিজলী বাতি বা জ্যোংস্কার আলোয় স্কেটিঙ করতে হবে দূর প্রাস্তরে। সব মানি, মানি যে অন্ধকারের অন্তরালে আকাশ ও পৃথিবীর যুগল তপস্যার মধ্যে একটা স্তন্ধ গাম্ভীৰ্য্য আছে ; কিন্তু তার মধ্যে একটা ক্লাস্তির চিহ্ন ধরা পড়ে বলে মনে হয়। তাই স্পেনের আলো আমার কাছে জীবন এনে দিল । পীরেনীজ শৈলমালার কয়েকটা চুড়াতে একটা অপূৰ্ব্ব নীল আভা মূচ্ছিত হয়ে রয়েছে, যেন নিশাস্তের মুখস্বপ্নের আবছায়া স্মৃতিখানি। কত যুগ এমন স্নিগ্ধ নীল আলোয় ভরা উষার মোহন রূপ দেখি নি। আজ প্রথম কৈশোরের আনন্দের মত একটা অকারণ আনন্দ মনকে মাতিয়ে তুলল। পরীক্ষার চিন্তাভারাক্রান্ত মন নয়, আকাশের পার্থীর লঘু সরল অস্তিত্বের মত মন নিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লাম । উষা যে নিঃশ্বাসরুদ্ধ হৃদয়ে প্রভাতের জাগরণের ভাষা’ শুনতে শুনতে মৃদু চরণক্ষেপে এখনই চলে যাবে। পথে ঘাটে শীতকাতর হিস্পানী কলে-মোড় অবস্থায় জড়সড় কুয়ে চলেছে ; একটা গাধা রাস্তার পাশ দিয়ে যাচ্ছে ; একটা ছোট ঘোড়ায়-টানা গাড়ী অনর্থক দাড়িয়ে আছে ; একটা দোকানের সামনে খানিকট কাদা, জল দিয়ে. সে জায়গাটা পরিষ্কার করবার শ্লথ চেষ্ট হচ্ছে। লণ্ডনের প্রভাতের চাকরাণীর কৰ্ম্মব্যস্ততা, দুধওয়ালার ক্ষিপ্রপদে দ্বারে দ্বারে দুধ রেখে যাওয়া, কুলি-মজুরের আওরিগ্রাউণ্ড বা ট্রামের পথে উর্দ্ধশ্বাসে দৌড়ান, এ-সব পেলাম না, তাই পথগুলি বড় খালি মনে হতে লাগল। হঠাৎ দেশের কথা মনে পড়ল ; আবার ইংলণ্ডে সদ্যোলব্ধ উল্লাসের প্রাচুর্যের কথাও ভাবলাম, বুঝলাম ইংলণ্ডের শিক্ষার ফল আমার উপর ফলছে, তাই সে দেশের কৰ্ম্মবহুল, চঞ্চল, সফল জীবনের স্পর্শ পেয়ে এত ভাল লাগে। মনের মধ্যে রৌদ্রের উত্তাপ অনুভব করতে পারছি। ইংলণ্ডেও এই উত্তাপ দেখেছি। যেদিন একটু স্বর্ঘ্যের আলো অপ্রত্যাশিত ভাবে দেখা দেয় অমনি দলে দলে লোক শহরের বাইরে চলে যায়, ছেলেরা খেলতে যায় ; লণ্ডনের মাঠগুলি স্বর্ধ্যোপাসকের দলে ভরে যায়। লওন কলকাতা নয়, সেখানে প্রত্যেক পাড়ায় নিঃশ্বাস ফেলবার ও আরামে বেড়াবার বাগান আছে। প্রকৃতির সৌন্দৰ্য্য মাধুর্য ও প্রয়োজনীয়তার কথা অত বড় কর্মচঞ্চল, গতিম শহরও ভোলে নি। শুধু ধনী লণ্ডনই বা কেন ? ছোট শহ ও গ্রামগুলিতেও সেকথা সবাই মনে রাখে ; গ্রামটিকে তার চারি পাশকে সাজিয়ে রাখবার কত ইচ্ছা ও চেষ্ট্র