পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আণশ্বিন নেই, রাজপ্রেয়সী নেই। কিন্তু দিল্লীর কাছে নূতন দিল্লী হয়েছে ; নূতন রাজপুরুষদের, পশন্ধে রাজপথ মুখরিত হতে পারে যদিও ওমরাহদের সব চিহ্ন ধুয়ে মুছে শেষ হয়ে গেছে। এস্কোরিয়াল ফতেপুর সিক্রির মত অতীত যুগের চিহ্নগুলিকে সগৌরবে বহন করে আসছে ; সে-যুগের পারিপার্থিক অবস্থারও বিশেষ পরিবর্তন হয় নি। এ ধারণাটি সবচেয়ে বদ্ধমূল হয় এখানকার লোকদের সঙ্গে আলাপে। এদের চিন্তা ও স্বপ্ন এখনও মধ্যযুগ ছাড়িয়ে বর্তমানে এসে পৌছয় নি। এখানে কালর্স কিস্তে (পঞ্চম চালর্স) ও ফিলিপ সেগুন্দো ( দ্বিতীয় ফিলিপ ) সম্বন্ধে এমন ভাবে কথা কয় যেন তারা গতকালের বিদায়-নেওয়া বন্ধু ; সিয়েরা গুয়াদারাম পৰ্ব্বতের নীলাঞ্জন ছায়ায় যেন এখনও তাদের অশ্বখুরের ধুলা মিলিয়ে যায় নি। এস্কোরিয়ালের সঙ্গে বহিজগতের কোন সম্বন্ধ নেই। মাদ্রিদ-প্যারিস এক্সপ্রেসে মাদ্রিদ থেকে মাত্র এক ঘণ্টার পাড়ি ; কিন্তু মাদ্রিদের কোন অসস্তোষের বা চাঞ্চল্যের ঢেউ এখানে এসে পৌছয় না। দ্বিতীয় ফিলিপ চেয়েছিলেন যে তার জীবনের ধৰ্ম্মময় শেষদিনগুলি শান্তিপূর্ণ ভাবে এখানে কাটবে ; সেই বৃদ্ধ সম্রাটের জীবন বৃহৎ সাম্রাজ্যরক্ষা ও বিস্তৃতির টানা-পড়েনে অশাস্তিতে ভরে উঠেছিল কিন্তু তার সন্ন্যাসের প্রাসাদটি এখনও শাস্তিতে অক্ষুণ্ণ রয়েছে। এখানে সেন্টদের উৎসবগুলি এখনও ধূলিধূসরিত কিন্তু আড়ম্বরময় মঠের ভিতর নিয়মিতভাবে পালিত হয় । সেগুলিই এখানকার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার। সিয়ের গুয়াদারামার নীল চিত্রপটের সামনে ধূসর, ধূপস্থরভিত, উপাসনাননিত এই সৌধের চারি দিকে একটা অনষ্ঠুভবনীয় সৌন্দৰ্য্য আছে। শহরতলীও এমন চমৎকার মাধুৰ্য্যে ভরা যে-মাধুর্য্য মধ্যযুগের ইতিহাসের পাতা থেকে নেমে এসে এখানে রয়ে গিয়েছে। যুবরাজের প্রাসাদের উদ্যানপথে ছোট ছোট ছেলেরা পাথরে বঁাধান সিড়ির তৈরি রাস্তায় এমন ভাবে আধটি পেসেত চায় ষে তাকে ভিক্ষা বলা চলে ন—এ যেন কামাখ্যার পাহাড়ে কুমারীদের পয়সা চাওয়া। ঐ বিশাল পৰ্ব্বতের তলায় জলপাইকুঞ্জে যখন ছায় দীর্ঘতর হয়ে নেমে আসে, যখন রাখালবালক তার ছাগলগুলি নিয়ে ঘরের দিকে ফিরে যায়, গাধার গলায়-বাধা-ঘণ্টা শ্রাস্ত স্বরে বাজতে থাকে তখন

  • --سويbr

স্পেনের সন্ধানে b*aఫి মনে হয়, এই মধ্যযুগের শহরটি এখনও পদবী ও আভিজাতের মধ্যাদায় গৰ্ব্বিত বিচিত্র পোষাকে সজ্জিত ম্পলি অভিজাতদের প্রতীক্ষা করছে—যারা সপ্তসমূত্রের পারের দুর্গম অজ্ঞাত দেশের ভাগ্যাম্বেষীদের দ্বারা আহত রত্ব গুয়াদিল কিভার নদীর তীরে সেভিলের বন্দর থেকে নিয়ে সম্রাটকে এই ভোগবিলাসহীন প্রাসাদে অভিবাদন করতে আসবে। চারি দিকের পাথরের বাড়ীগুলির জানাল সকৌতুকে উন্মুক্ত করে নাগরিকার চেয়ে দেখবে; এসে তার প্রত্যাশিত বীরের সদ্ধানে রত কালে কাজল আঁখি একবার প্রকাশিত করেই সরে যাবে। মাল্টার কথা মনে পড়ে। সেখানেও এমনি স্বাকার্বাক্য রাস্তায় হরিণাক্ষী তরুণীর চকিতে চেয়ে সরে পড়ে ; আর স্থিরাক্ষী গৃহিণীর কালো রেশমী শালে ঘাড় ঢেকে বিজয়গৰ্ব্বে চলে যায়, বিদেশী পথিককে তারা গ্রাহের মধ্যেই আনে না। মঠের বিশাল দক্ষিণ তোরণ যেখানে সৰ্ব্বদা দৃষ্টি আকর্ষণ করছে, রাজর্ষি ফিলিপের স্মৃতি যেখানে বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেখানে বুঝি চপলতার কল্পনাই এরা করতে চাইবে না। প্যাম্বিয়ন বা রাজকবর গৃহের শবাধারগুলির মর্শ্বরের অসম্ভব রকম ঔজ্জল্য হয়ত আমাদের তাজমহলকেও হার মানায়। এখানকার অন্ধকারপ্রায় ভূগৃহে পঞ্চম চালর্স থেকে প্রায় সব রাজারই শেষভন্ম রক্ষিত আছে, শ্মশানের শূন্যতায় নয়, ঐশ্বর্ষ্যের পূর্ণতায়। এখানে একটি শবাধার দেখিয়ে গাইড বলল, “এট রাজা আলফন্সোর জন্য ছিল ; কিন্তু খাচায় পোরবার আগেই পার্থী আমাদের কল্যাণে পালিয়ে গেছে।” এই রসিকতা করার সঙ্গে সঙ্গে তার চোখদুটি চক্চক্ ক’রে উঠল ও মর্শ্বরভূতিতে উজ্জলপ্রায় সেই ভূগর্তে সে নতজান্থ হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করল ও বুকে ক্ৰশচিহ্ন আঙুল দিয়ে একে দিল। মনে মনে বুঝলাম যে সোশ্বালিজমের উপরও রাজৰ্ষির জয় হয়েছে। ইতিহাসের দিক দিয়েও এখানে চিত্তাকর্ষক বস্তুর অভাব নেই। যে-বিলাসহীন কক্ষে যে-টেবিলে, যে-ঘড়ির সামনে অক্লাস্তকৰ্ম্মী ফিলিপ সাম্রাজ্যের কাজ করতেন তা সব তেমন ভাবে সাজান আছে। ফিলিপ ও ইংলণ্ডের রা মেরীর বাসরশয্যা ও শয়নকক্ষ এখনও সযত্নে সাজান আছে