مسياجع مسيا সেই লোকটি তার বাবাকে জোর করিয়া চাপিয়া ধরিল— তার পরিচিত একটি লোক অর্থাৎ ভিক্ষুর সহিত তার বিবাহ দিতে হইবে। এমনি ভাবে সত্য সত্যই এক দিন তার বিবাহ হইয়া গিয়াছিল—তাহার পর বহু বৎসর ধরিয়া তাহদের অবিচ্ছিন্ন জীবনযাত্রা নির্বাহ হইয়া আসিতেছে । দেখিতে দেখিতে মাঠের পথ ফুরাইয়া আসিল। কিছু দূরেই ডিট্রিক্ট বোর্ডের লাল রঙের বাড়া দেখা যাইতে লাগিল। পথেই একটি মেয়ের সহিত দেখা—সেও একটি কলসী লইয়া আসিতেছে জল লইয়া যাইবার জন্য । আর একটু অগ্রসর হইতে দেখা গেল আরও দু-এক জন তাদেরই মত জল লইবার জন্য কলসী লইয়া আসিতেছে। যখন বউ আপিসের ফটকের সামনে আসিয়া দাড়াইল তখন সে দেখিল সেখানে রীতিমত এক মেলা বসিয়া গিয়াছে। কত যে নরনারী আসিয়া সেই উঠানটিতে ভিড় করিয়াছে তাহার সংখ্যা নির্ণয় করা যায় না। ভিক্ষুর বউ অবাক হইয় গেল । উঠানের এক দিকে একটি উচু বাধান স্থানে নলকূপটি। নলকূপটির সহিত একটি প্রকাও চাকা লাগান। চাকাটিতে একটি চাবিতাল ঝোলান আছে । কেহ জল লইতেছে না। বউ একটু ভয় খাইয় গেল। নিশ্চয়ই একটা কিছু এক জনের নিকট সে ব্যাপারটা কি জিজ্ঞাসা করাতে জানিতে পারিল—সরকার নলকূপ বন্ধ করিয়া দিয়াছেন । দারুণ গ্রীষ্মে নাকি নলকূপ দিয়া আর জল উঠিতেছে না। যা উঠিতেছে তা ঘোলা পাকগন্ধ জল—তা থাইলে গ্রামের সবার স্বাস্থ্যহানি হইবে, এই ভয়ে সরকার নলকূপ বন্ধ রাখিয়াছেন। আজ আর কাহাকেও জল দেওয়া হইবে নী । কথাটা ভিক্ষুর বউয়ের পক্ষে নিতান্ত মৰ্ম্মাস্তিক। তাহা হইলে এত কষ্ট স্বীকার করিয়া যে সে আসিল তাহ একদম বৃথা হইয়া যাইবে ? সে গিয়া স্বামীকে কি কৈফিয়ৎ দিবে ? সে যে জল আনিতে গিয়া জল পায় নাই একথা শুনিলেই তার স্বামী দুখে যরিয়া যাইবে । ভিক্ষুর বউয়ের কান্না আসিতে লাগিল। প্রবাসী ないこ8へご মনের তার যখন এই শোচনীয় অবস্থা এমন সময় এক জন গ্রামের চেনা লোকের সহিত তার দেখা হইয়া গেল । এ-লোকটি তাদের গ্রামের হরে শুশকরার ছেলে নন্দ। নন্দকে সে ইহার কারণ জিজ্ঞাসা করিল । নন্দ কথাটা শুনিয় একটু হাসিল, তার পর বলিল—ও-সব বাজে। দুটো পয়সা খয়রাং করতে পার ত আমি এখুনি ব্যবস্থ৷ করে দিই। নলকূপের জল যদিও এখন খারাপ হয়ে গেছে, কিন্তু তার আগে আমরা আপিসের ভেতর ভাল জল তুলে রেখে দিয়েছি। দুটি পয়সা মাশুল দিলে এনে দিতে পারি—সরকারের হুকুম যাদের বিশেষ দরকার তার পাবে। বউ তার কথা শুনিয়া অবাক হইয় গেল । সে অনেক কষ্টে বাক্স উজাড় করিয়া মাত্র দুটি পয়সা আঁচলে বাধিয় আনিয়াছে তাহা দিয়া যাইতে হইবে । কিন্তু কি করিবে সে, জল তার চাই ; জল না পাইলে তার স্বামী বঁচিবে না । তাই একটি দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়িয়া বহুকষ্টে সে অণচল হইতে পয়সা দুটি খুলিয়া তাহার হাতে দিল । নন্দ পয়সা দুটি লইয়া তাকে সেইথানে এক জায়গায় বসিয়া থাকিতে বলিল । যাইবার সময় বলিয়া গেল— কিন্তু ব’লে দিচ্ছি দু-তিন ঘটার বেশী হবে না—বডড জলের টান কিনা ! ভিক্ষুর বউ সেখানে কিছুক্ষণ বসিয়া রহিল । কিছুক্ষণ বসিয়া থাকিবার পর নন্দ কলসী লইয়া আসিয় তাহাকে দিল, বলিল—অনেক জল হয়েছে, এবার বেরিয়ে পড়— যেতেও ত হবে অনেকখানি । ভিক্ষুর বউ কলসীটির দিকে তাকাইয় দেখিল, প্রায় আধ কলসীটাক জল ।—যাক, এই দুদিনে ইহাই যথেষ্ট মনে করিতে হইবে । বউ আবার বাহির হইয়া পড়িল –আবার সেই রুক্ষ বিবর্ণ পথরেখাটি তার দিকে ক্ষুধার্ভ দৃষ্টিতে চাহিয়া রহিয়াছে। চারি দিকে আবার রৌদ্রের অসহ উত্তাপ— উষ্ণ বাতাসের দাপাদাপি । আকাশ, বাতাস, পথ, প্রাস্তর সবাই যেন তার মুখের দিকে তৃষ্ণাৰ্ত্ত দৃষ্টিতে তাকাইয়া আছে। সবাই যেন জিহ্বা বাড়াইয়া তাহার কলসী হইতে জল শুষিয় লইতে চায়। এই অগ্নির রাজ্যে, তৃষ্ণার রাজ্যে, শোষণের
পাতা:প্রবাসী (ষট্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৯৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।