পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্ৰহ্মদেশে ও আরাকানে বঙ্গ-সংস্কৃতি শ্ৰীঅজিতকুমার মুখোপাধ্যায় বাংলার সহিত ব্ৰহ্মদেশের স্থাপত্য, ভাস্কৰ্য্য এবং ধৰ্ম্ম প্রভৃতিতে পরম্পর যোগাযোগের কথা পূৰ্ব্বে আলোচনা করিয়াছি। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের অনুরূপ, পেগানের একতল ও দ্বিতল মন্দিরাবলী, তৎসমুদ্বয়ের ফ্রেকেচিত্রাঙ্কন এবং আরাকান-রাজসভায় প্রচলিত প্রাচীন বাংলসাহিত্য সম্বন্ধে এই প্রবন্ধে আলোচনা করিব। পেগানে স্ফীত ওসমগোলাকার স্তুপ কিংবা আনন্দ-মন্দিরের মত চতুভূজ মন্দিরগুলির পরে বর্তমান দক্ষিণেশ্বরের মত একতল ও দ্বিতল মন্দিরগুলিই চোখে পড়িয়া থাকে। এই ধরণের মন্দিরগুলি সাধারণতঃ দ্বাদশ শতাব্দী হইতে চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্যে নিৰ্ম্মিত এবং একটি বিশিষ্ট পদ্ধতির ফ্রেস্কো-চিত্র দ্বারা অলঙ্কত। মন্দিরগুলির বিশেষত্ব এই যে ইহার কোনটিই পেগানের চতুভূজ মন্দিরের মত বৃহদাকার নহে, প্রায় বর্গক্ষেত্রের আকৃতিতে নিৰ্ম্মিত এবং এই ধরণের প্রায় সব মন্দিরেই একই রূপ ফ্রেস্কে-চিত্র দেখিতে পাওয়া যায়। মন্দিরগুলি যে দক্ষিণ-বঙ্গের স্থাপত্য দ্বারা অনুপ্রাণিত হইয়াছিল তাহা উহাদের মাথার চূড়া, আকৃতি, আভ্যস্তরীণ খিলান-করা ছাদ এবং প্রবেশদ্বার প্রভৃতি দেখিলে স্পষ্টই বুঝা যায়। বঙ্গদেশের এই ধরণের মন্দিরে প্রায়ই খিড়কীর দ্বার দিয়া ভোগ আনিবার জন্য মন্দিরের মধ্যে এক পাশ্বে একটি কুঠরি থাকে। পেগানের অধিকাংশ মন্দিরেই ঐ ধরণের একটি করিয়া ক্ষুদ্র ভাড়ার-কুঠরি আছে। পশ্চিম- ও দক্ষিণ- বঙ্গে এই ধরণের মন্দিরগুলিই অনেক সময় দ্বিতল করা হইত। বিষ্ণুপুর এবং দক্ষিণ-বঙ্গে এইরূপ কয়েকটি মন্দির আবিষ্কৃত হইয়াছে। পেগানেও এইরূপ দশ-বারটি দ্বিতল মন্দির আছে। পেগানে অন্ত ধরণের মন্দির থাকিলেও, আশ্চর্ধ্যের বিষয়, এই মন্দিরগুলিরই সংখ্যা বেশী এবং ইহাদের ভিতরের ফ্রেস্কেচিত্র অন্যান্ড মন্দিরের ফ্রেস্কে-চিত্র হইতে সম্পূর্ণ বিভিন্ন। মনে হয় যেন একই শিল্পীর তুলিক-স্পর্শে প্রত্যেকটি মন্দির চিত্রিত হইয়াছিল। মন্দিরগুলির মাথার উপরে ব্ৰহ্মদেশীয় তিগুলি চুড়ার উপরে উনানের মত তিনটি কোণের মধ্যে অবস্থিত। দেখিলে মনে হয় যে ইহা মন্দিরের মূল অংশের সহিত টানাভাবে গাথা হয় নাই নতুব প্রায় অধিকাংশ মন্দিরের ‘তি সমানভাবে পড়িয় যাইত না । এই জাতীয় দুই-একটি মন্দির একটু বৃহদাকার ও অন্ত ধরণের হইলেও সাধারণতঃ প্রায় সবগুলিই দক্ষিণবঙ্গের মন্দিরের মতই ক্ষুদ্র। এমন কি, ফাগুসন তাহার ‘ভারতীয় ও প্রাচ্য স্থাপত্যের ইতিহাস’ পুস্তকের ৩৩৯ পৃষ্ঠা উল্লেখ করিয়াছেন যে ষষ্ঠ শতাব্দীর পূর্বের দক্ষিণ-বঙ্গের স্থাপত্য-পদ্ধতিই পেগু ও প্রোমে উপনীত হইয়াছিল । উক্ত মন্দিরগুলির ফ্রেস্কো-চিত্রগুলি বিচার করিলে ৪ ইহার প্রমাণ পাওয়া যায়। এই সম্বন্ধে কিছু বলিবার পূৰ্ব্বে প্রথমে বঙ্গের পালশিল্পের সহিত পরিচয় প্রয়োজন । খ্ৰীষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দীর মধ্যভাগ হইতে পাল-রাজাদের শেষ সময় পৰ্য্যস্ত মগধ-শিল্পের চরম উন্নতি সাধিত হয় এবং বঙ্গদেশই যে মগধের চিত্রাগার ছিল ইহা ক্রমশই প্রমাণিত হইতেছে। পাল-রাজত্বের পূর্ব হইতেই গৌড় উত্তর-ভারতের সভ্যতার কেন্দ্রস্থল ও বদ্ধিষ্ণু নগর বলিয়া বিদেশীয়দিগকে আকৃষ্ট করিত। এই সময় হইতেই বঙ্গদেশ চারুশিল্পের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন রাখিয়া গিয়াছে। দেবপালের রাজত্বকালে দুই জন প্রতিভাশালী শিল্পী ধীমান ও বীতপালের আমর পরিচয় পাই। ভিক্ষু তারানাথ তাহার গ্রন্থে লিখিয়াছেন যে, দেবপালের রাজত্বকালে বরেন্দ্রভূমিতে দক্ষ শিল্পী ধীমান ও তৎপুত্র বীতপাল ধাতুশিল্পে, ভাস্কর্ঘ্যে, চারুকলায় বহু শ্রেষ্ঠ নিদর্শন রাখিয়া গিয়াছেন। বীতপালের শিয্য মগধেই বেশী ছিল এবং ধীমানের শিল্পপদ্ধতিকে ‘পূৰ্ব্ব