পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b-సిరి প্রবণসী $w9gve লইবার সময় তার দেওয়া পেনসিলটি ব্যবহার করিতে হইয়াছে। একটি ফাউণ্টেন পেন হইলে নোট লওয়ার স্ববিধা হয় ; প্রত্যেক ছেলের বুকের পকেটেই ঐ জিনিষটি আছে। বাড়ীতে নৃপেনও তাঁহাকে ঐ কথা জানাইয়াছিল এবং সেই সঙ্গে একটা বিখ্যাত দোকানের নাম করিয়া বলিয়াছিল—সেখান হইতে নৃপেনের নাম করিয়া লইলে কমিশন কিছু বেশী পাওয়া যাইবে। দোকানী নৃপেনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় । বার-দুই দোকানের ধারে গিয়াও মহিম ভিতরে ঢুকিতে পারে নাই । কলম লইয়া দাম দিবার সময় নৃপেনের নাম উল্লেখ করিতে গেলেই প্রবল একটা লজ্জ তাহার কণ্ঠরোধ করিবে অনুমানে মহিম সে-কথা বুঝিতে পারিয়াছে। নৃপেনের নাম লওয়া ত নহে, দোকানীকে ঠকাইবার সে যেন একটা কৌশল। এক নৃপেন সঙ্গে থাকে—সে আলাদা কথা, কিংবা তার একখানা চিঠি পাইলেও মন্দ হয় না ...যদি দোকানী সন্দেহ করিয়া জিজ্ঞাসা করে—নুপেনের সঙ্গে তোমার কত দিনের পরিচয় ? তখন সে কি বলিবে,— গ্রীষ্মাবকাশের পর কলেজ খুলিবার মুখে গোয়ালনে অতিকষ্টে ট্রেনে উঠিয়া সে বসিবার জায়গার জন্য হতাশ নয়নে চারিদিকে চাহিতেছে—এমন সময় কুড়ি বছরের গৌরবর্ণের যে ছেলেটি তাহাকে টানিয়া পাশে বসাইয়া মৃদুহাস্তে বলিয়াছিল, এই ভিড়ে কি দাড়িয়ে থাকলে চলে, ভাই, ঠেলে-ঠলে বসবার জায়গা ক’রে নিতে হয় । তারই নাম নৃপেন—সে পড়ে রাজশাহী কলেজে থাড ইয়ারে। অর্থাৎ মাত্র এগারো দিন পূৰ্ব্বে তার সঙ্গে পরিচয়। ট্রেনে যে আলাপ জমিয়াছিল তাহাতে মনে হয়-দশ বৎসর পূৰ্ব্বেও এই ছেলেটিকে যেন সে জানিত। সে পদ্মা পার হইয়া এই প্রথম এদিকের ট্রেনে চাপিয়াছে—ৰূপেনের অভিজ্ঞতা বহু দিনের। ট্রেনের গল্প আর কলেজের গল্প, রাজশাহীর কথা আর কলিকাতার বর্ণনায় বন্ধুত্ব জমিয়াছিল। পোড়াদহে গাড়ী বদল করিয়া নৃপেন যখন নামিয় গেল তখন মহিমের হাতথানি সে আপনার মুঠার মধ্যে নিবিড় ভাবে চাপিয়া ধরিয়া বলিয়াছিল, "আমায় ভুলবে না ত, ভাই ? নোট-বহিতে সে-ই নিজের হাতে ঠিকানা লিখিয়া দিয়াছিল, স্মৃতিচিহ্নস্বরূপ বুকের পকেটে সরু স্থাপ্তি পেনসিলটিও দিয়াছিল গুজিয়া। তার পর বঁাশী বাজাইয়া দু-দিকের গাড়ী যখন বিপরীতমুখী লাইন ধরিয়া অগ্রসর হইল, তখন দুটি তৃতীয় শ্রেণীর কামরা হইতে দুখানি শাদ রুমাল বস্তৃক্ষণ ধরিয়া আন্দোলিত হইয়াছিল। পথের ধারে যে অমূল্য জিনিষ কুড়াইয়া পাওয়া গেল, পথের ধারেই সে রতু ফেলিয়া আসিতে হইল ;–তরুণ হৃদয়ে এ বিয়োগ-বেদন খুব বেশী হইলেও পথের নেশাই তাহাকে আবার ক্ষণপূর্বের ব্যথা ভুলাইয় দেয়। উত্তর কালে যে অনন্ত পথ প্রসারিত হইয় পথিককে চলিবার ইঙ্গিত জানায় সে যেন এই ক্ষণকালীন ট্রেনযাত্রারই প্রতীক। কলিকাতায় আসিয়া নৃপেনকে তুলিতে মহিমের তাই বিন্দুমাত্র বিলম্ব হয় নাই - আজ পেনসিলের মধ্যে নৃপেনের ছবি ভাসিয়া উঠিল। গোয়ালন্দ হইতে পোড়াদহ ঘণ্টতিনেকের পথ—তিন ঘণ্টার স্মৃতি ! মনে পড়িল, মনোজ্ঞ ভঙ্গীতে নৃপেনের অল্প মাথা দোলাইয়। হাসা, হাত নাড়িয়া কথার ভঙ্গীকে উদ্দীপ্ত করা। সে বলিয়াছিল, এক মাসের মধ্যে কলিকাতায় আসিবে । তখন যদি সে মহিমকে দেখে ও হাসিয়ু বলে, “কি বন্ধু, ট্রেনের প্রতিশ্রুতি এত শীঘ্র ভুলিয়া গিয়াছ ? একথানা চিঠিও কি দিতে নাই ? তখন লজ্জিত মহিমের অবস্থাটা কল্পনাও করা যায় না ! কিন্তু নৃপেন যে মহিমকে চিনিতে পারিবেই তারই বা নিশ্চয়ত কি ? নৃপেনের মুখ স্পষ্ট তাহার মনে পড়ে না—কয়েকটি বিশেষ ভঙ্গির মধ্যে মাত্র চিহ্নটি জাগিয়া আছে। ঐ হাত-নাড়া বা মাথ-দোলানো হাসির মধ্যে বিকশিত সাদা ঝকঝকে দাত কয়টি, টিকলো নাকটিও যেন অস্পষ্ট মনে পড়ে। চোখের বিস্তৃতি, ভ্রর ঘন কেশত্র, কপালের দীপ্তি বা গালের গঠন—কোনটাই না। অস্পষ্ট ভাবে মানুষটিকে ধরা যায়,—রং আর তুলি লইয়া ছবি অঁাকা চলে না। নৃপেন কেন—মা’র সম্পূর্ণ মুক্তিটিই কি নিখুঁত ভাবে সে আঁকিতে পারে ? প্রত্যেক ইন্দ্রিয় স্বতন্ত্ৰ ভাবে এ-ক্ষেত্রে কোন কাৰ্য্য করে না। মা বাচিয়া আছেন কতক চক্ষুতে, কতক কর্ণে, স্রাণের মধ্যেও তিনি আছেন, মনে আছেন এবং ম্পর্শেও আছেন। সম্পূর্ণ মা’কে পাইতে হইলে সমস্ত ইঞ্জিয়ের সহযোগিতা আবশ্যক। দশ দিনের পরিচিত নৃপেনকে মহিম