পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b〜べつE প্রবণসী SNご8Nつ সমস্ত বা দিকটা একটানা ব্যথা হয়ে রয়েছে, একবারও ছাড়ে না।” হৈমবতী গালে হাত দিয়া বলিলেন, “তবেই হয়েছে ! ও-ব্যথা কি আর আজ ছাড়বে ? ও এথন রইল সাত মাসের মত শরীর জুড়ে। সব ব্যথা এক সঙ্গে শেষ হবে ।” পুরাতন আবেষ্টনে ফিরিয়া আসিয়া মহামায় অনেকখানি প্রকৃতিস্থ বোধ করিতেছিলেন, সংসারের যত কাজকৰ্ম্ম তাহার জন্য অপেক্ষা করিয়া ছিল, সকলে যেন ভীড় করিয়া আসিয়া বলিতেছে, “মৃত্যুর চেয়ে জীবনের দাবী বেশী। অবসর কালে রাত্রির অন্ধকারে তুমি মৃত্যুর মুখ চাহিয়া কাদিতে পার, কিন্তু এখন জীবনকে প্রতি মুহূৰ্ত্তে তাহার পাওনা মিটাইয়া দিতে হইবে। মৃত্যু দস্থার মত এক মুহূৰ্ত্তে তাহার সমস্ত লুণ্ঠন শেষ করিয়া লইয়াছে, কিন্তু জীবন সুদখোর মহাজনের মত পলে পলে তাহার স্বদের হিসাব মিটাইয়া মিটাইয়া অগ্রসর হয়। তাহাকে এতটুকু ফাকি দিবার উপায় নাই। যেখানে দুই দিনের দেনা জমিয়াছে সেখানে স্বদের হারে তাহ দ্বিগুণ হইয়া উঠিয়াছে। চন্দ্রকাস্ত বলিতেন, “তোমার মন ক্লাস্ত, শরীর অসুস্থ, তুমি এত কাজের বাধনে নিজেকে জড়াচ্ছ কেন ?” মহামায়া ভাবিতেন, “কাজে আমি কি সাধ করে জড়াই ? এ বয়সে কাজের সহস্ৰ বাহু হয়, সে আপনি আমাকে জড়িয়ে তার গহবরে পুরে নিচ্ছে, আমার মুক্তি কোথায় ? জীবনে যে-কাজের বীজ বপন করেছি, তার ফসল কাটা পৰ্য্যস্ত কাজ আমায় ছাড়বে কেন ?” গৃহিণীর ক্লাস্ত শরীরমন দেখিয়া চন্দ্রকান্তের মন দুশ্চিস্তায় চঞ্চল হইত ; কিন্তু আবার তিনিই হয়ত আসিয়া বলিতেন, "ছেলেটার বড় সন্দির ধাত হচ্ছে, ওকে স্নানের সময় ভাল ক'রে রোদে বসে তেল মাখিও । সুধা বড় হয়ে উঠল, এখন একটু লেখাপড়া ত শিখতে হবে। যখন আমি বাড়ী থাকব আমিই দেখব, অন্য সময় তুমি রোজ যদি ওকে একবার বইখাতা নিয়ে না বসাও ত সব ভুলে যাবে।” মহামায়া হাসিতেন, বলিতেন, “আমার বিশ্রামের ভাল ব্যবস্থা করে দিচ্ছ। এইবার শরীর ঠিক সারবে।” চন্দ্রকান্ত নিজে একহাতে সংসারের সমস্ত কৰ্ত্তব্য করিতে পারেন না বলিয়া মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিয়া নীরবে চলিয়া যাইতেন । মহামায়ার কাজ কমিবার বদলে প্রত্যহই বাড়িয়া চলিত। সংসার আছে, স্বামী আছেন, দুইটি পুত্রকন্যার শরীরমনের সকল অভাব মোচন আছে, তাহার উপর তৃতীয়টির অভ্যর্থনার জন্যও ত কিছু আয়োজন করা প্রয়োজন আছে ! সমস্ত দিনের কাজের শেষে বাঞ্চ আলমারী ঘাটিয়া কোথায় কত ছোট ছোট বিস্মৃতপ্রায় জাম-কাপড় আছে, সেইগুলি সংগ্ৰহ করিয়া মেরামত করিয়া আলাদা একটি ছোট বাক্সে জমা করা চলিত। একটার ছেড়া হাত কাটিয়া, আর একটার হাত জুড়িয়া, লাল কালো সাদা কাপড়ের তালি দিয়া কত বিচিত্র পোষাকই তৈরি ইত, অবশেষে সবগুলি সেই ক্ষুদ্র বাক্সে গিয়া আশ্রয় লষ্টত । এত বয়সেও মহামায়া ভাবী সন্তানের জন্য আয়োজন ননদের চোখের সম্মুখে করিতে সঙ্কোচ বোধ করিতেন । আপনার ঘরের কোণে লুকাইয়া একান্ত একলার তাহার ছিল এ সমস্ত কাজ । হৈমবতী মাঝে মাঝে অকস্মাৎ আসিয়া পড়িলে তিনি বাক্সের ডাল ফেলিয়া দিয়া যেন অন্য কাজে মাতিয়া যাইতেন । র্তাহার সঙ্কোচকে অগ্রাহা করিয়া হৈমবর্তী বলিতেন, “বে, এই শরীরে রাত জেগে জেগে কি ফকিরের আলখাল্লা সব সেলাই হচ্ছে ? ওসব কেন মিছে করছ ? ছেড়া ন্যাকড়ায় ছেলে জন্মালে কোনও দুঃখ নেই, তার উপর সব করা যায়। কিন্তু ভগবান না করুন, যদি বিপদ আপ কিছু হয় তখন ত বসে বসে ঐ সব পোষাক কোলে ক’রে র্কাদতে হবে । ও দূর করে ফেলে একটু গা মেলে শোও দিখি ” মহামায়া ননদের মুখের উপর জবাব দিতে পারিতেন না, কিন্তু রাত্রির নীরবতার আড়ালে প্রত্যহই তাহার নূতন ও পুরাতন কাপড়ের ভাণ্ডার বাড়িয়া চলিতে লাগিল। ছোট ছোট কাথ, ছেড়া শালের টুকরায় শাড়ীর পাড় বসাইয়া ঢাকা, মোজা, টুপি, জাম, কোনওটাই একেবারে বাদ পড়িল না। স্বধা কত রাত্রে ঘুম হইতে উঠিয়া দেখিয়াছে, মা ছোট ছোট পুরানো জামার পিঠগুলা চিরিয়া দুই ফাক করিয়া