পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আণশ্বিন পাশ মুড়িয়া রাখিতেছেন। কি একটা আসন্ন স্থখ কি দুঃখের চিন্তায় মা যেন অন্যমনস্ক হইয়া থাকেন। তাহ যে কি, ভাল না মন্দ, ভয়ের না আনন্দের, তাত মা’কে কিংবা আর কাউকে ਆਿ করিতে তাহার সাহস হয় না। এই বয়সেই মুধা বুঝিতে পারে, মায়ের এই একান্ত একলার নীরব কৰ্ম্মক্ষেত্রের মাঝখানে তাহার শিশুসুলভ কৌতুহলকে টানিয়া লইয় যাওয়া হয়ত শোভন লয় । একদিন ভোর বেলা উঠিয়া সুধা ও শিবু দেখিল, বাড়ীতে অকস্মাং রাতারাতি কিসের যেন একটা সাড়া পড়িয় গিয়াছে। উৎসবের আয়োজন বলিয়া ত মনে হয় না। সকলেরই যেন কেমন চিস্তিত মুখ, সশঙ্ক দৃষ্টি, অতি-ব্যস্ততার ভাব। সব কথায় সকলে তাহদের দুই ভাইবোনকে বেশী করিয়া বাদ দিয় দূরে ঠেলিয়া চলিতেছে। কতকটা যেন দিদিমার মহাযাত্রার দিনের মত। মুধু তবু অনেক ভয়ে ভয়ে একবার পিসিমার কাছে গিয়া বলিল, “পিসিম, মা কোথায় গেল ? কি হয়েছে বল না ?” হৈমবর্তী অত্যন্ত বিরক্ত মুখ করিয়া বলিলেন, "মায়ের . শরীর একটু খারাপ, ওঘরে আছে, তোমরা তার হাড় জালাতে ধেও না, খেলা কর গিয়ে ।” মৃধার বেশী করিয়া দিদিমার কথা মনে পড়িয়া গেল । মায়ের শরীর খারাপ ? মা তাহদের ফাকি দিয়া আমনি করিয়া পালাইবে না ত ? সকলের এমন অস্বাভাবিক গম্ভীর মুখ দেখিয় তাহাই ত মনে হয়। দিদিমা যেদিন চলিয়া যান, এমনি মুখই ত সকলের সেদিন হইয়াছিল। স্বধ পিসিমার বকুনির ভয় সত্ত্বেও বলিল, “খুব কি অমুখ ? একবারটি দেখেই চলে আসব। আমি একটু যাই ।” পিসিমা এক তাড়া দিয়া বলিলেন, “ছেলেমানুষের গিন্নিগিরি না করলেই নয় ? তুমি দেখে কি অসুখ সারিয়ে দেবে ? যাও এখান থেকে বলছি, কথার অবাধ্য হবে না।” মৃধা চলিয়া গেল, কিন্তু তাহার সমস্ত মনটা মা’কে ঘিরিয়া কাদিয়া বেড়াইতে লাগিল। সকালে উঠয়। একবারটি মাকে দেখিতে পাইল না, এমন কি অসুখ মায়ের করিয়া থাকিতে পারে? দূর হইতে লুকাইয়া দেখিতে লাগিল, ছোট ঘরের জিনিষপত্র টানিয়া পিসিমা বড় ঘরে আনিয়া অলখ-বোগরণ t;~\లి6 জড় করিতেছেন । পেয়ারী-তলার কাছে একটা কাঠের উনান জালিয় মস্ত এক ইড়ি গরম জল চড়িয়াছে। বাবাও রাত থাকিতে কোথায় যেন চলিয়া গিয়াছিলেন, বেলা করিয়া এক বোঝা ওষুধ বিষুধ লইয়া ফিরিতেছেন। তিনিও আজ সুধার সঙ্গে কথা বলিলেন না । তাহাকে সামনে দেখিয়া এমন করিয়া অগ্রাহ করিয়া বাবা ত কখনও চলিয়া যান না। আজ যেন সকলের কি হইয়াছে, সকলেই সব কথা তাহদের লুকাইতেছে। সমস্ত দিন মনের অস্থিরতায় সুধা বাহিরে খেলিতে পারিল না। বাড়ীরই আশেপাশে মুখ চূণ করিয়া ঘুরিতে লাগিল, যদি কোথাও দিয়া কোনও প্রকারে মা’কে দেখা যায় ! একবার অনেক কষ্টে জানালা দিয়া দেখিল, মা অস্থির ভাবে ঘরের ভিতর পায়চারি করিতেছেন, আবার যেন অসন্থ যন্ত্রণায় বাকিয় পড়িয়া জানালার গরাদে ধরিয়া কোন প্রকারে আপনাকে সামূলাইয়া লইতেছেন। মায়ের মুখ দেখিয়া বিস্ময়ে ভয়ে সুধার মুখ সাদা হইয়া গেল । স্বধাকে দূর হইতে দেখিয়া মা ক্ষীণ হাসির চেষ্টা করিয়া হাত নাড়িয়া তাহাকে দূরে চলিয়া যাইতে বলিলেন। স্বধা সরিয়া গিয়৷ বাহিরের বারান্দায় দুই হাতে মুখ ঢাকিয়া কাদিতে লাগিল । বাড়ীর ঝি করুণা মৃধাকে কঁাদিতে দেখিয়া কোলের ভিতর টানিয়া লইয়া বলিল, “ভয় কি স্বধী-দিদি, কাদছ কেন ? মায়ের অসুখ ওসব কিছু না, তোমার নতুন ভাই হবে দেখে এখন " কুধ বিশ্বাস করিতে পারিল না ; জন্ম, সে ত নূতন আনন্দের আবির্ভাব, তাহ! কি এমন করিয়া ভয়-ব্যাকুলতায় বিভীষিকায় সমস্ত সংসারকে অন্ধকারে ছাইয়া ফেলিতে পারে ? মা’র হাস্যচঞ্চল সুকুমার মুখে ওই যে মৰ্ম্মান্তিক যন্ত্রণার কঠিন ছায়, ওই কি নৃতনের আগমনের সূচনা ? মানুষ কি এমনই মিথ্যা দিয়া মানুষকে ভুলায়, না হষ্টি এমনই বেদনার ফল ? করুণা মৃধা ও শিবুকে কোনও রকমে স্নান আহার করাইয়া বাহিরে বেড়াইতে লইয়া গেল। চন্দ্রকান্তু বলিলেন, "দিদি, ছেলেমেয়েগুলো মুখ চূণ করে আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এ দেখলে কি রকম লাগে। এখন থেকে