পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সন্ন্যাস ও সন্ন্যাসী ঐউমেশচন্দ্র ভট্টাচাৰ্য্য, এম-এ টুপিওয়াল বিনা ফরমাইসে যে-সব টুপি তৈয়ার করে তার কোনটা কারও মাথার মাপ লইয়া নয় ; অথচ সব টুপিষ্ট কারওনা-কারও মাথায় লাগেই । যার মাথায় যে টুপি লাগে, সে যদি মনে করে যে ঐ টুপি তারই উদ্দেশ্বে তৈয়ার হইয়াছিল তবে সেটা কি সত্য হইবে ? ১৩৪২ সনের অগ্রহায়ণ মাসের 'প্রবাসীতে আমি মঠ ও আশ্রম’ নামে একটি প্রবন্ধ লিখিয়াছিলাম । তাহাতে কোন মঠবিশেষ বা আশ্রমবিশেষ ঠিক আমার আলোচ্য বিষয় ছিল না । কিন্তু আমার বর্ণনার কোন-লা-কোন অংশ কোন-নাকোন মঠ ও আশ্রমের সম্বন্ধে নিশ্চয়ই প্রযোজ্য হইয়া থাকিবে । টুপিধারীর মত কোন-কোন আশ্রমবাসীও মনে করিয়া বসিয়াছিলেন যে ঐ সব বর্ণনা তাহাদিগকে লক্ষা করিয়াই লিথিত হইয়াছে, এবং তাহাই মনে করিয়া কঁহাদের কেহ কেছ আমার উপর এত রোয প্রকাশ করিয়াছিলেন যে ভাবিলে বিম্মিত হইতে হয় । সংসারে আসক্তি যাহার কমিয়াছে তাহাকেই আমরা বলি সন্ন্যাসী । মাতারা সমালোচনায় অসহিষ্ণু ঠুনকে মানের দায়ে যাহারা সহজেই উত্তেজিত হইয় পড়ে যাহারা যশের কাঙ্গাল এবং অর্থের লোভী, তাহারাও সন্ন্যাসের ভেক বহন করে কোন লজ্জায় ভাবিয়া পাই না । ধনীর অনেক সময় অর্থের গৰ্ব্ব প্রচ্ছন্ন রাখিয়া বিনয়ের ভান করিয়া চারতলা বাড়ীর নাম দেন 'কুটার । তেমনই ষড়রিপুর লীলাক্ষেত্র ধাদের মন তাহারা তাহাদের বিলাসের আবাস-ভূমি গৃহের নাম দেন 'আশ্রম’ ইহার ভিতর একটা প্রচণ্ড প্রতারণা আছে ; কে প্রতারক এবং কে প্রতারিত তাত অনেক সময় ঠিক করা কঠিন । নীতিশাস্ত্রের দিকৃ দিয়া দেখিতে গেলে পরকে প্রতারণ করা সব সময়ই শেষ পৰ্য্যস্ত আত্ম-প্রতারণায়ই পৰ্য্যবসিত হয় । আর যেখানেই অনাবশ্যক এবং অন্যান্ত ভান রহিয়াছে সেইখানেই প্রতারণা রহিয়াছে, এ কথাও বলা চলে । আমার পূর্ব প্রবন্ধে একটা কথা আমি বলিয়াছিলাম যে, বর্তমানে ভারতবর্ষে বাড়েয় ছাতার মত এত যে সব মঠ ও আশ্রম গঙ্গাইয়া উঠিতেছে, সেগুলি হিন্দুর শান্ত্র প্রুতি-স্মৃতি ঠিক অনুমোদন করে না। আর যে-কোন ব্যক্তি যখন খুশী সন্ন্যাসী সাজিয়া বসেন ইহাও ঠিক শান্ত্রাঙ্গুমোদিত নহে । হিন্দুর শাস্ত্র সকলেরই শান্ত্র নহে, এ-কথা আমি জানি ; আর, সকল হিন্দুই যে সকল শাস্ত্র মানেন না, এবং মানিতে বাধ্যও নন, ইহাও আমি জানি । তথাপি শাস্ত্রের কথা তুলিয়াছিলাম এই জন্য ষে অনেকের ভ্রাস্ত ধারণ আছে যে, সকল সাধু-বাবারাষ্ট শাস্ত্রীয় পন্থা অনুসরণ করিয়া থাকেন। শাস্ত্র না-মানিয়৷ এই সকল সাধুদিগকে মানিবার স্বাধীনতা সকলেরষ্ট আছে । কিন্তু আমার বক্তব্য শুধু এই যে শাস্ত্র এবং এরূপ সাধু, দুইকেই মান অযৌক্তিক । এই সম্পর্কে আমার দুই-এক জন সমালোচক শাস্ত্রের তর্কের য-কোন সময় সন্ন্যাস ও ক্রণের পক্ষে ইঙ্গার বিরুদ্ধে অবতারণা করিয়াছেল । একমাত্র শ্রুতি জাবাল-উপনিষদের একটি বচন । এত শ্রুতি-স্মৃতি রহিয়াছে যে ইঙ্গকে ইতিহাসের দিক্ দিয়া দেখিলে একটা বিরুদ্ধ মত প্রতিষ্ঠার স্বীণ চেষ্ট বলিয়াই মনে হয় । প্রচলিত সাধারণ রীতি উঠা অনুমোদন করে নাই । আমার এই মস্তবে বিচলিত হইয়া কত কত মনে করিয়াছেন আমি শ্রুতি মালি না, উতাকে ভ্রাস্ত মনে করিয়াছি, ইত্যাদি । আমি কি মানি কিংব: মানি না. তাহা আমাদের আলোচ্য নয় । সন্ন্যাস সম্বন্ধে হিন্দুর শাস্ত্রবিধি কি, তাহাঙ্গ আমাদের বিবেচ্য । শুধু ভারতের নয়, সমগ্র সভ্য-জগতের ইতিহাসেই সন্ন্যাস ও সন্ন্যাসী-সম্প্রদায়ের ইতিহাস একটি চিত্তাকর্ষক অধ্যায় । আর সৰ্ব্বত্রই আমরা এই একটি সত্য উপলব্ধি করি যে, সন্ন্যাসীদের ভিতর নানা প্রকার সম্প্রদায়ভেদ ঘটিয়া যায় ; কাজেক্ট তাহাদের শাস্ত্রও এক থাকে না । আমার সমালোচকের শ্রীতিতে অগাধ বিশ্বাসের ভান না করিয়া যদি একটু ইতিহাস চর্চা করিতেন, তাঙ্গ হইলে হয়ত আমার প্রতি এতটা কুষ্ট হইতেন না এবং নিজেরাও উপকৃত হইতেন । বিশেষণের প্রতিবাদে বিশেষণ প্রয়োগ তর্কযুদ্ধের একটা রীতি হইলেও ওটা ঠিক আমাদের অভ্যাস নয় । কাজেই আমার প্রতি প্রকাশ্বে এবং ইঙ্গিতে যে-সব বিশেষণ প্রযুক্ত হইয়াছে তাহার কোন প্রতিবাদ আমি করিব না । কেবল যে-সব পণ্ডিতৰ্ম্মষ্ঠ সমালোচক জাবাল-শ্রুতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা দেখাষ্টয়াছেন, তাছাদের অবগতির জঙ্ক কয়েকটি কথা এখানে নিবেদন করিব । হিন্দুর শ্রদ্ধা করে, শান্ত বলিয়৷ মানে এট রকম সকল গ্ৰন্থই