পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানুষের মন । শ্রীজীবনময় রায় পূৰ্ব্ব পরিচয় শচীন্দ্রনাখ-শিক্ষিত যুবক ও ধনী জমিদার। প্রয়াগে পুস্তমেলায় স্ত্রী ও শিশুপুত্র হারিয়ে পুরাতন ভূত্য ভোলানাথের সাহায্যে বহু অন্বেষণেও তাদের কোনও সন্ধান না পাওয়ায় উদভ্ৰান্ত চিত্তে ইউরোপে বেড়াতে যায়। লগুনে অত্যন্ত অসুস্থ ও সংজ্ঞাণুষ্ঠ অবস্থায় পাৰ্ব্বতীর সেবায় প্রাণ পায় ও পাৰ্ব্বতীর গুণগ্রাহী ও তার প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ হয়। ভারতবর্ষে ফিরে পাৰ্ব্বতীর সাহায্যে একটি নারীকল্যাণ-প্রতিষ্ঠানে যত্নবান। কমলা শচীন্দ্রের পত্নী দরিদ্র পিতার সন্তান। গোরখপুরে মিশনী স্কুলে পড়া সুন্দরী । বুপ্তমেলায় হারিয়ে গিয়ে উপেন্দ্রনাথের কৌশলে তার কলকাতার বাড়ীতে বন্দী হয় । পরে মাতাল উপেন্দ্রনাথের প্রহারে জর্জরিত অবস্থায় একদা রাত্রে পাশের বাউীতে গিয়ে পড়ে ও নন্দলাল ও তার পত্নী মালতীর অক্লান্ত সেবায় প্রাণ পায় বটে, কিন্তু তার মামের স্মৃতি লোপ পাওয়ায় তার নূতন নাম হয়েছে জ্যোৎস্ব এবং শিশুর নাম অজয় । নন্দলালের কূ-পৃষ্টি থেকে রক্ষা পাবার জন্তে এক দেশীয় হাসপাতালে ধাত্রীবিদ্যাশিক্ষার্থী। এখানে চরিত্রগুণে প্রধান ডাক্তার নিখিলনাথের ও অস্থাস্থ্য সকলের শ্রদ্ধা সে পেয়েছে। লক্ষ্মলাল-সাধারণ গৃহস্থ । বি-এ বেল, ব্যবসায়ী, ভীর-স্বভাব। কমলের রূপে আকৃষ্ট । নিজেকে সংযত করতে চেষ্টা ক’রে বিফলকাম এবং তার প্রতি প্রেমনিবেদন করতে লোলুপ অথচ প্রকাতে অগ্রসর হবার শক্তি সঞ্চয় করতে পারে না । নির্থিলের প্রতি ঈর্ধাপরায়ণ । নিখিল সম্বন্ধে কুৎসিত ইঙ্গিত করে কমলকে অপমান করেছে। মালতী-মামুলী গৃহস্থবধু। নিঃসস্তান, সরল, স্নেহশীল, স্বামী নন্দ লালের উত্তরোত্তর অবস্থার উন্নতিতে পরিতুষ্ট, এবং কমলা ও সৰ্ব্বোপরি অজয়ের প্রতি অসামান্ত স্নেহসিক্ত নিখিলনাথ -বিদ্বান, চরিত্রবান, হৃদয়বান যুবক । বিলাত-ফেরৎ ভাঞ্জার । পঠদ্দশায় বিপ্লবীদের দলে পড়ে জেলে গিয়েছিল। অধুনা মানবের হিতসাধনই ব্ৰত। সামার সঙ্গে ত্রীরামপুরের অদূরে একটি আমবাগানে, পরিত্যক্ত ভগ্ন অট্টালিকায় গিয়ে তার পূর্ববনেতা সত্যবানকে মরণাপন্ন অবস্থায় দেখে এবং তার কাছে তাদের দলের লোকের মৃত্যু ও সীমার অসীম দেশভক্তি ও দুঃথকাহিনী শুনে সীমার প্রতি আকৃষ্ট হয় । সীমা-তার দাদার সঙ্গে সত্যবানের দলে এসে পড়ে এবং ভেলোয়ারের জঙ্গলে পুলিসের গুলিতে সকলের মৃত্যু হ’লে আহত সত্যবানকে নিয়ে গ্রামে জঙ্গলে, পরিত্যক্ত কুটীরে পলায়ন করতে করতে শ্রীরামপুরের প্রান্তে এক ভগ্ন ভট্টালিকায় মৃত্যুমুখী সত্যবানকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। ‘দেশ ছাড়া সে কিছুজানে না। অত্যন্ত ঋজু, ক্ষিপ্র, একাগ্ৰ, অনন্তচিত্ত । সত্যবান-মরণোন্মুখ বৈপ্লবিক নেতা। এতগুলি মূল্যবান এা এই পথে টেনে এনে বলি দেওয়ায় অনুতপ্ত। সীমাকে এই পথ থেকে কেরাষার জন্তে নিখিলকে অনুরোধ করতে মৃত্যুকালে তাকে স্মরণ করেছে । 次a一br পাৰ্ব্বতী—লগুনপ্রবাসী বাঙালীর মেয়ে । তার পিতার ইংরেজ-ঐতি ও বাঙালীবিদ্বেষে তাদের পরিবারে যে সৰ্ব্বনাশ ঘটেছিল তারই ফলে ইংরেজবিমুখ এবং বাংলা ভাষা ও বাঙালীর জন্ত তৃতিচিত্ত। সৰ্ব্বস্বাস্ত পিতার মৃত্যুর পর লগুনে চাকুরিজীবী। সুদৰ্শন, সংজ্ঞাণুগু, পীড়িত, নিঃসহায় শচীন্ত্রের প্রতি করুণায় তার শুশ্ৰুষার ভার গ্রহণ করে এবং তাঁকে বিবাহিত ন-জেনে তার প্রতি আসক্ত হয় । সুস্থ হ’য়ে শচীন্দ্রনাথ এ কথা জানতে পারে এবং পাৰ্ব্বতীকে তার দুঃখের ইতিহাস ব’লে তার প্রেম-গ্রহণে নিজের অক্ষমত জানায় । স্থিরচিত্ত সংযতথভাব পাৰ্ব্বতী শচীন্দ্রের অনুরোধে তার সঙ্গে ভারতবর্ষে এসে এক পরিত্যক্ত নীলকুঠি দু-জনে পরিদর্শন করতে যায় -- নারী-প্রতিষ্ঠান সেখানে স্থাপন করবার উদ্দেশ্যে। শচীন্ত্রের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পাৰ্ব্বতী নিজেকে উৎসর্গ করে। তারপর চার বৎসর অতীত হয়েছে । & 4 গ্রামের নাম দেওয়া হয়েছে কমলাপুরী। প্রমীলার রাজ্য যেন বিস্মৃত ইতিহাসের কল্পনার আশ্রয় থেকে সজীব হয়ে উঠেছে। নদীর ধারের এই ছোট গ্রামখানি পুরুষের সম্পর্কশূন্য। গ্রামের ভিতরে প্রবেশ করলে মনে হয় আলাদিনের প্রদীপের মন্ত্রে হঠাৎ জেগে উঠেছে পাতালপুরীর ঘুমের রাজ্য থেকে। লাল স্বরকির রাস্তাগুলি সরলরেখায় সমকোণে বিভক্ত করেছে পরস্পরকে । ছোট ছোট কুটীরগুলি পরিচ্ছন্ন, মুরুচিসঙ্গত। নদীটির ক্রোড় থেকে একটা চওড়া রাস্তা গেছে সোজা একটা দোতলা অট্টালিকার দরজা পৰ্য্যন্ত । আমাদের পূর্বপরিচিত এই অট্টালিকাটি এই গ্রামের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যনিবাস। নদীর ঘাটের কাছে একটি ছোট বাড়ীতে নেত্রীর বাসস্থান। কিছু দূরে একটি প্রকাও প্রাঙ্গণের চতুদিক বেষ্টন করে বড় বড় ঘর—কোনটাতে অনেকগুলি তাত, কোনটাতে বই বাধাবার ব্যবস্থা, কোনটায় শেলাইয়ের কল চলছে, কোনটায় চিত্রকলা শেখাবার ব্যবস্থা আছে— ইত্যাদি অনেক । সমস্ত গৃহ যেন কর্মের চঞ্চলতায় সজীব । গ্রামের বাইরে ক্ষেতগুলিকে বেষ্টন করে একটি চওড়া বাধানে রাস্ত দুই দিকে দুটি ঘাটে গিয়ে নেমেছে। এইখান থেকে গ্রামের শিল্পদ্রব্য বাইরে রপ্তানি হয়। নারীরাজ্যের