আণশ্বিন গোয়ালঘরও যে এত পরিষ্কার হতে পারে বাংলা দেশে তা আশ্চর্যের বিষয় বইকি ? যাবার পূৰ্ব্বে বৃদ্ধ পাৰ্ব্বতীকে তার প্রতিষ্ঠান এবং আতিথেয়তার জন্য বহু ধন্যবাদ দিয়ে বললেন, “এত বড় একটা প্রতিষ্ঠানকে নিয়মাম্ববর্তী রাখেন কি করে? ধরুন কেউ যদি রীতিমত নিয়ম না মানে!" পাৰ্ব্বতী হেসে বললে, “না মানবার উপায় নেই। প্রতিজ্ঞাপত্র আপনি দেখছি ভাল করে পড়েন নি। অবাধ্যতার এখানে কোন শাস্তি নেই। একেবারেই আশ্রম হতে নিৰ্ব্বাসন। সেই নিৰ্ব্বাসন এর চায় না। তার দুটি কারণ আছে। প্রথম, এত সস্তায় নিজেকে মানুষ ক'রে তোলবার জায়গা আর নেই। দ্বিতীয়ত এথানে হাতের কাজ বেশী শেখানে হয় বলে ভৰ্ত্তি হবার অল্প কিছুদিন পর থেকেই এর প্রত্যেকেই নিজের এবং প্রতিষ্ঠানের আয়ের দিকে কিছু-নকিছু সাহায্য করতে পারে। নিয়ম আছে যে প্রত্যেকটি উৎপন্ন দ্রব্যের বিক্রয়ের মূল্যের কিয়দংশ শিল্পীর নামে ব্যান্ধে জমা হয়। পাচ বৎসর এমনি করে তার কিছু কিছু অর্থ সঞ্চিত হতে থাকে এবং এই প্রতিষ্ঠানটি পরিত্যাগ ক’রে যাবার সময় সুদসমেত তাকে তার অর্জিত অর্থ দিয়ে দেওয়া হয়—যাতে সে বেরিয়ে কোন রকম ছোটখাট ব্যবসা নিজেই অবলম্বন করতে পারে। চরিত্রে, ব্যবহারে বা নিয়ম-পালনে কোন ব্যতিক্রম ঘটলে এই অর্থ সম্পূর্ণ বাজেয়াপ্ত হতে পারবে। এই নিয়ম থাকায় এখানকার কাজে ছাত্রীদের যেমন উৎসাহ, সুচারুরূপে নিয়মাধীন থাকার দিকে তেমনি তাদের দৃষ্টি।” 8ó বৎসরের পর বংসর আসে এবং যায়। অক্লান্ত পরিশ্রমে পাৰ্ব্বতী তার কাজ ক'রে চলে। তার কোথাও বিরাম নাই, কোন ব্যতিক্রম নাই। বিলেতী শিক্ষায় তার কৰ্ম্মপটুতা এবং কৰ্ম্মস্থল ছিল প্রচুর এবং কাজ করবার শক্তিও ছিল তার অদম্য। তবু সমস্ত কর্থের অবসানে গভীর রাত্রে নদীর দিকের বারান্দার উপর সে যখন একখানি ডেক্-চোরে তার করান্ত দেহটি এলিয়ে দিয়ে তারাডর আকাশের দিকে চেয়ে পড়ে থাকে তখন হঠাৎ এক-এক দিন মানুষের মন छाह” छ क তার মনট আবার সেই স্বদুর ইউরোপের পর্বতমালাবেষ্টিত বন-উপবন-চিত্রিত ছায়া আলোর ঝালরকাটা মিস্কোজল দিনগুলির জন্য আকুল হয়ে ওঠে। মনে মনে নিজেকে শ্রাস্ত এমন কি বয়োবৃদ্ধ বলে মনে হয় ; সমস্ত জীবন থেকে অমৃতের আস্বাদ যেন লুপ্ত হয়ে যায় ; অকারণে তার চোখ থেকে জল ঝরতে থাকে এবং পরমাকাঙ্ক্ষিত অনাস্বাদিত রস-সম্পূরিত এক অনাগত জীবনের বিরহে তার সমস্ত প্রাণ ব্যর্থতার অভিমানে ভরে ওঠে । হঠাৎ মনে হয় সে যেন বন্দিনী। এই বৃহৎ অনুষ্ঠানের কৰ্ম্মবহুলতার শত পাকে তার সমস্ত চিত্ত, সমগ্র স্বাধীনতা, সমস্ত জীবন যেন বাধা পড়েছে ; এর থেকে উদ্ধার পাবার কোন রাস্তা নেই। পাথরের দেবতার পূজায় সে তার সমস্ত অন্তরাত্মাকে বলি দিয়েছে। মাথা কুটে মরলেও যেন তার কাছ থেকে কোন সাড়া পাওয়া যাবে না । তবু সে তার এই পূজা-মন্দির ছেড়ে কোথাও ষেতে পারে না। এরই দুয়ারে সে তার শ্রাস্ত মাথা ঠেকিয়ে বলে, “বাচাও, ওগো নিয়ে যাও আমাকে এই কৰ্ম্মের কারাগার থেকে, তোমার স্নেহবন্ধনের অবাধ মুক্তির মধ্যে। দিও না আমাকে এমনি করে বিপুল আড়ম্বরপূর্ণ ব্যর্থতার মধ্যে অবসান পেতে। কৰ্ম্মের দুনিবার মত্ততার অবসাদে আমার দেহমন অবসন্ন। এস ওগো আমার রাজপুত্র, আমার স্বপ্ত আত্মাকে জাগাও তোমার সোনার কাঠির অমৃতম্পর্শে। তোমার উত্তপ্ত বেদনাতুর আহত মাথাটাকে আমার স্নেহব্যাকুল ক্রোড়ে আশ্রয় দিয়ে শীতল, শাস্ত করবার অধিকার দাও আমাকে । ওগো নিয়ে যাও উদ্ধার করে যেখানে সকল কৰ্ম্মের অবসানে তোমার মুগু-দীপ অন্ধকারকক্ষে তুমি তোমার সমস্ত পৃথিবী থেকে স্বতন্ত্র, মুক্ত অবিমিশ্র সেই সম্পূর্ণ তোমার নিবিড় অস্তিত্বের অব্যাহত আলিঙ্গনের মধ্যে ।” রাত্রির অন্ধকার তার উত্তপ্ত ಇfಾಗ್ವತಿ' কুক্কজাল বিস্তার করে। সে তার কৰ্ম্মপরিবেষ্টনের কোলাহলমন্ত্র বাস্তব থেকে কোন সুপ্তিমশ্ন দিগন্তরেখাহীন কল্পনারাজ্যের মধ্যে নীত হয় ; যেখানে এই দুরতিক্রম্য পৃথিবীর অসংখ্য নরনারী একটিমাত্র সংখ্যাতীত পরমেক্সিত অনধিগম্য মামুযে এসে ঠেকে-প্রদোষান্ধকার পরিপূর্ণ করে যার জাভা
পাতা:প্রবাসী (ষট্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৪৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।