পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্বিন পর দিন অতিবাহিত করেছে, শুনতে শুনতে নিখিলনাথের প্রাণ বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু কোথায় পেলে ? একটুকু একটুখানি তত্বদেহে অত বড় একটা আত্মদান করবার তড়িৎ-প্রেরণ সে পেলে কোথায় ? নিখিলনাথের কাছে তার হাসপাতালের কাজকৰ্ম্ম, আত্মপ্রতিষ্ঠ, লোকের মঙ্গল-চেষ্ট এর কাছে তুচ্ছ, উপহাসকর বোধ হতে লাগল। নিখিলকে চুপ করে দাড়িয়ে থাকৃতে দেখে সীমা বললে, “ভাবছেন কি দাড়িয়ে ? খাওয়ার মত কিছু আমেঞ্জন করা এখানে সম্ভব নয়। তবু উপোস করতে হবে ভেবেই এই টুকু করেছি। ভাড়টা নিয়ে তাড়াতাড়ি একটু মুখ হাত ধুয়ে বসে পড়ুন। এই পোড়া ভাতে সেদ্ধটুকু যদি গরম-গরম না থান তবে আজ আপনার অদুষ্টে হরিবাসরত হবে ।” - নিখিল একটু অপ্রভিত হয়ে হেসে বললে, “ত বটে ; এমন হরিবাসর আমার কপলে সহজে জোটে না । যে উংকলর তুটি আমার পাকতত্ত্বের পয্যালোচনা করেন, পাকের চেয়ে দুৰ্ব্বিপাকেই তিনি সিদ্ধহস্ত ; সুতরাং অধিকাংশ দিনই আমাকে রুটিমাথমের উপর নির্ভর করে কাটাতে হয়। আজ কপালটা নিতান্তই সুপ্রসন্ন বলতে হবে । পেটুক লোকের রুচিট আপনাদের কাছে ধরা পড়তে দেরী হয় না ।” - নিখিলনাথের এই সহজ কৌতুকে দীন আয়োজনের লজ্জা সীমার মন থেকে দূর হ’ল । সে মুন্ধু হেসে বললে, “আচ্ছ, এখন হাতমুখটা ধুয়ে আমুন ত, তারপর দেখা যাবে আপনি কত বড় বীর ।” নিখিলনাথ আর বাক্যব্যয় না করে, মুখ হাত ধুয়ে এল এবং বা হাতের উপর ভর দিয়ে পা ছড়িয়ে থেতে বসে গেল । খিদে খুব যে তার পেয়েছিল তা নয়, কিন্তু এই নিরাড়ম্বর মেয়েটিকে তার সা গ্রহ আতিথেয়তা থেকে বঞ্চিত করতে তার ইচ্ছে হ’ল না। আয়োজন কিছুই ছিল না প্রায়। অল্প একটু ডাল ও আলু-ভাতে, খানিকটা ঘি ও একটা পোড়া লঙ্কা। কিন্তু সীমার আগ্রহ এবং যত্ন এই সামান্ত আহাৰ্য্যের মধ্যে যে রসসঞ্চার করেছিল তার গৌরবে নিখিলনাথের অন্তরে সমস্ত আয়োজনটি যেন একটি উৎসবের উদ্বোধন বলে প্রতিভাত হ’ল। এই আত্মসমাহিত কঠোর মানুষের মন وجنوبي سو# ব্ৰতচারিণী মেয়েটি তার মনশ্চক্ষের সমক্ষে একটি বিশেষ মহিমায় প্রকাশিত হ’ল । খেতে বসে একবার জিজ্ঞাসা করলে “কই, আপনি খাবেন না ?” বলে তখনি তার প্রশ্নের বিসদৃশতা তার কানে বাজল । সীমা বললে, “আপনি খেয়ে গিয়ে সত্যদার কাছে বস্থন, আমি এ-দিকটা একটু গুছিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। দেখুন তো ক-টা বেজেছে । বারোটার আগে আপনার ট্রেন নেই। তবে অনেকটা পথ আপনাকে ঘুরে যেতে হবে । এ ষ্টেশন থেকে আপনার গাড়ী ধরা হবে না।” “এখন সাতটা পঞ্চাশ হয়েছে। কিন্তু এ করছেন কি ? আর একটুও দেবেন না। তাহলে আজ এখানেই রাত কাটাতে হবে কিন্তু ” খাওয়া শেষ হ’লে নিখিলনাথ রোগীর ঘরে গেল । ঠোঙায় ঢাকা একটি ছোট লণ্ঠনের ঘোলাটে আলোয় ঘরটি অন্ধকারপ্রায় । রোগীর চোথে আলো লাগার ভয়ে তত নয়, বাইরের দৃষ্টির দূরতম সম্ভাবনাকে লুপ্ত করবার জন্তে যত। সত্যবানের একটু তন্দ্র এসেছিল কিনা কে জানে, প্রথমটা তার কোন সাড়া পাওয়া গেল না। খানিকক্ষণ পরে, একটু গভীর নিশ্বাস ত্যাগ করে যেন জেগে উঠলেন বললেন, “নিখিল অনেক দিন পরে তোকে পেয়েছি। আমার অনেক আশা ছিল, কিছুই পূর্ণ হ’ল না।—” নিখিল বাধা দিয়ে বললে, “এ কথা কেন বলছ ? ভাল হয়ে উঠে আবার নতুন করে কাযে লেগে যাও। কালই আমি তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করছি।” একটা অতিমৃদু পরিহাসের হাসি সত্যবানের মুখে ফুটে উঠল। বললেন, “তুই ঠিক তেমনিই ছেলেমাস্থ্যটি আছিস এখনও । এখান থেকে ফিয়ে গিয়ে এখানকার প্রসঙ্গ একেবারে ভুলে যাবি, বুঝলি ? নইলে তোর ত মঙ্গল নেই-ই, আমাদেরও বে-হেপাজতে আর বেশী দিন কাটাতে হবে না। “গিরিডির বাইরে একটা পোড়ো বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ঘাগুলোর অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছিল বলে সীমা একটি বাঙালী ডাক্তারকে ডেকে নিয়ে এল—কিছুতেই শুনলে না। ডাক্তারটি লোক খারাপ নয় ; তা ছাড়া এসব ক্ষেত্রে প্রাণের ভয়ও থাকে লোকের । কিন্তু একটু খোসগল্প করবার লোভ বোধ হয় সামলাতে পারে নি। তারপর বুঝতে