পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

g\ه سموا প্রবাসী SOHO যেমন শয্যা ছাড়িয়া একান্ত অবশে চলিয়া যায়, তেমনি ভাবে ঘর ছাড়িয়া চলিয়া গেলেন। তার পর তিন মাস আর তাহার সাক্ষাৎ পাইলাম না। হঠাৎ পৌষের মাঝামাঝি একদিন তিনি মূৰ্ত্তিমান ভূমিকম্পের মত আসিয়া আমার স্থাবরতার পাকা ভিত এমনভাবে নাড়া দিয়া আলগা করিয়া দিলেন যে তাহ পূৰ্ব্বাঃে অনুমান করাও কঠিন। অন্ততঃ আমি যে কোন দিন এমন একটা দুঃসাহসিক কাৰ্য্যে ব্ৰতী হইয়া পড়িব তাহা সন্দেহ করিতেও আমার কুষ্ঠা বোধ হয় । তিনি বলিলেন, ‘সন্ধান পেয়েছি।” আমি সানন্দে তাহাকে অভ্যর্থনা করিলাম, বসুন!” তিনি বসিলেন না, উত্তেজিত স্বরে বলিতে লাগিলেন, ‘পেয়েছি বিভূতি বাৰু, সে মূৰ্ত্তি হারায় নি, এখনও অাছে।’ ‘সে কি, কোথায় পেলেন ? পাই নি এখনও। প্রাচীন বৈশালীর ভগ্নাবশেষ যেখানে পড়ে আছে সেই ‘বেসাড়ে গিয়েছিলুম। জেতবন-বিহারের কিছুই নেই, কেবল ইট আর পাথরের শুপ। তবু তারই ভেতর থেকে আমি সন্ধান পেয়েছি—সে মূৰ্ত্তি আছে।’ “কি ক’রে সন্ধান পেলেন ? "এক শিলালিপি থেকে। একটা ভাঙা মন্দির থেকে একটা পাথর খসে পড়েছিল—তারই উল্টো পিঠে এই লিপি খোদাই করা ছিল।” এক খও কাগজ আমাকে দিয়া উত্তেজনা-অবরুদ্ধ স্বরে বলিতে লাগিলেন, ‘জেতবন-বিহার ধ্বংস হয়ে যাবার পর বোধ হয় তারই পাথর দিয়ে ঐ মন্দির তৈরি হয়েছিল ; মন্দিরটাও পাচ-ছ-শ বছরের পুরনো, এখন তাতে কোন বিগ্রহ নেই।–একটা বিরাট অশথ, গাছ তাকে অজগরের মত জড়িয়ে তার হাড়-পাজর গুড়ো ক’রে দিচ্ছে—পাথরগুলো খসে খসে পড়ছে। তারই একটা পাথরে এই লিপি খোদাই করা ছিল।’ কাগজখানা তার হাত হইতে লইয়া পরীক্ষা করিয়া দেখিলাম ; অল্পমান দশম কি একাদশ শতাব্দীর প্রাকৃত ভাষায় লিখিত লিপি, ভিক্ষু অবিকল নকল করিয়া আনিয়াছেন। ‘আসুন— পাঠোদ্ধার করিতে বিশেষ কষ্ট পাইতে হইল না শিলালেখের অর্থ এইরূপ— “হায় তথাগত ! সদ্ধৰ্ম্মের আজ মহা দুদিন উপস্থিত হইয়াছে। যে জেতবন-বিহারে তুমি পঞ্চবিংশ বর্ষ যাপন করিয়াছ তাহার আজ কি শোচনীয় দুর্দশ । গৃহিগণ আর তোমার শ্রমণদিগকে ভিক্ষা দান করে না ; রাজগণ বিহারের প্রতি বীতশ্রদ্ধ। পৃথিবীর প্রাস্ত হইতে শিক্ষাখিগণ আর বিনয়-ধৰ্ম্ম-স্বত্ত অধ্যয়নের জন্ত বিহারে আগমন করে না । তথাগতের ধৰ্ম্মের গৌরব-মহিমা অস্তমিত হইয়াছে। “তদুপরি সম্প্রতি দারুণ ভয় উপস্থিত হইয়াছে । কিছুকাল যাবৎ চারি দিক হইতে জনশ্রুতি আসিতেছে যে, তুরুষ্ক নামক এক অতি বর্বর জাতি রাষ্ট্রকে আক্রমণ করিয়াছে। ইহারা বিধৰ্ম্মী ও অতিশয় নিষ্ঠুর ; ভিক্ষু-শ্রমণ দেখিলেই নৃশংসভাবে হত্যা করিতেছে এবং বিহার-সজ্যাদি লুণ্ঠন করিতেছে । “এই সকল জনরব শুনিয়া ও তুরুষগণ কর্তৃক আক্রাস্ত কয়েক জন মুমুধু পলাতক শ্রমণকে দেখিয়া জেতবন-বিহারের মহাথের বুদ্ধরক্ষিত মহাশয় অতিশয় বিচলিত হইয়াছেন। তুরুষগণ এই দিকেই আসিতেছে, অবশুই বিহার আক্রমণ করিবে । বিহারের অধিবাসিগণ অহিংসধৰ্ম্মী, অস্ত্রচালনায় অপারক। বিহারে বহু অমূল্য রত্নাদি সঞ্চিত আছে : সৰ্ব্বাপেক্ষ অমূল্য রত্ন আছে, গোশীর্ষ চন্দনকাষ্ঠে নিৰ্ম্মিত বুদ্ধমূৰ্ত্তি—যাহা ভগবান তথাগতের জীবিতকালে প্রসেনজিৎ নিৰ্ম্মাণ করাইয়াছিলেন। তুরুষ্কের আক্রমণ হইতে এ সকল কে রক্ষা করিবে ? “মহাথের বুদ্ধরক্ষিত তিন দিবস অহোরাত্র চিন্তা করিয়া উপায় স্থির করিয়াছেন । আগামী অমাবস্তার মধ্যযামে দশ জন শ্রমণ বিহারস্থ মণি-রস্থ ও অমূল্য গ্রন্থ সকল সহ ভগবানের চন্দন-মুঠি লইয়া প্রস্থান করিবে। বিহার হইতে বিংশ যোজন উত্তরে হিমালয়ের সামু-নিষ্ঠত উপলা নদীর প্রস্রবণমুখে এক দৈত্যনির্মিত পাষাণ-স্তম্ভ আছে ; এই গগনলেহী স্তম্ভের শীর্ষদেশে এক গোপন ভাণ্ডার আছে। কথিত আছে ষে অমুর-দেশীয় দৈত্যগণ দেবপ্রিয় ধৰ্ম্মাশোকের কালে হিমালয়ের স্পন্দনশীল জক্তযাপদেশে ইহা নিৰ্মাণ করিয়াছিল। শ্রমণগণ চন্দন-স্মৃত্তি ও অন্যান্ত মহার্য বস্তু এই