পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

སྐས་བྱས༔ ། ། །ས་འབྲིང་། “ཆབ་། করিতেছে। দেখিয়া সন্দেহ হয়, ময়দানবের মত কোন মায়-শিল্পীই বুঝি অতি যত্নে এই অভ্ৰভেদী দেব-স্তম্ভ নিৰ্ম্মাণ করিয়া রাখিয় গিয়াছে। পুথিবীর শৈশবকালে প্রকৃতি যখন আপন মনে খেলাঘর তৈয়ার করিত, ইহা সেই সময়ের স্বষ্টি । হয়ত মানুষ-শিল্পীর হাতও ইহাতে কিছু আছে। বাইনকুলার চোখে দিয়া ভাল করিয়া দেখিলাম, কিন্তু ইহার বহিরঙ্গে মানুষের হাতের চিহ্ন কিছু চোখে পড়িল না। স্তম্ভটা যে ফাঁপা তাহাও বাহির হইতে দেখিয়া বুঝিবার উপায় নাই ; কেবল স্তম্ভের শীর্ষদেশে একটি ক্ষুদ্র রন্থ, চোখে পড়িল—রন্থটি চতুষ্কোণ, বোধ করি দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে এক হাতের বেশী হইবে না। স্বৰ্য্যকিরণ সেই পথে ভিতরে প্রবেশ করিতেছে । ইহাই নিশ্চয় মস্ত্রোক্ত রন্ধ । মগ্ন হইয় এই দৃশ্ব দেখিতেছিলাম। এতক্ষণে পাশে দৃষ্টি পড়িতে দেপিলাম, ভিক্ষু ভূমির উপর সাষ্টাঙ্গে পড়িয় বুদ্ধস্তম্ভকে প্রণাম করিতেছেন । 豪 碌 寧 অন্তিম ঘটনাগুলি বিস্তারিত ভাবে টানিয়া টানিয়া লিখিতে ক্লেশ বোধ হইতেছে । সংক্ষেপে শেষ করিয়া ফেলিব। ভিক্ষু অভিরাম আমাদের নিষেধ শুনিলেন না, একাকী সেই শিকলের সেতু ধরিয়া ও-পারে গেলেন। আমরা তিন জন এ-পারে রহিলাম । পদে পদে ভয় হইতে লাগিল, এবার বুঝি শিকল ছিড়িয় গেল, কিন্তু ভিক্ষর শরীর রুশ ও লঘু, শিকল ছিড়িল না । ওপারে পৌছিয়া ভিক্ষু হাত নাড়িয়া আমাদের আশ্বাস জানাইলেন, তার পর স্তম্ভের দিকে চলিলেন। স্তম্ভ একবার পরিক্রমণ করিয়া আবার হাত তুলিয় চীংকার করিয়া কি বলিলেন, প্রপাতের গর্জনে শুনিতে পাইলাম না। মনে হইল তিনি স্তম্ভের দ্বার খোলা পাঠয়াছেন । তার পর তিনি স্তম্ভের অন্তরালে চলিয়া গেলেন, আর তাহাকে দেখিতে পাতলাম না। চোখে বাইনকুলার লাগাইয়া বসিয়া বহিলাম। মানস চক্ষে দেখিতে লাগিলাম, ভিক্ষু চক্রাকৃতি অন্ধকার সোপান বাহিয়া ধীরে ধীরে উঠতেছেন ; কম্পিত অধর হইতে হয়ত অস্পষ্ট স্বরে উচ্চারিত হইতেছে—তথাগত, তমসে মা জ্যোতিগময়— 為重ー〉》 চন্দন-মূৰ্ত্তি פר-ל সেই গোশীর্ষ চন্দনকাঠের মূৰ্ত্তি কি এখনও আছে ? ভিক্ষু তাহ দেখিতে পাইবেন ? আমি দেখিতে পাইলাম না; কিন্তু সেজন্য ক্ষোভ নাই। যদি সে-মূৰ্ত্তি থাকে, পরে লোকজন আনিয়া উহা উদ্ধার করিতে পারিব। দেশময় । একটা মহা হুলস্থূল পড়িয়া যাইবে। এইরূপ চিন্তায় দশ মিনিট কাটিল । তার পর সব ওলট-পালট হইয়া গেল। হিমালয় যেন সহসা পাগল হইয়া গেল। মাটি টলিতে লাগিল ভূগর্ত হইতে একটা অবরুদ্ধ গোঙানি যেন মরণাহত দৈত্যের আর্তনাদের মত বাহির হইয়া আসিতে লাগিল। শিকলের সেতু ছিড়িয়া গিয়া চাবুকের মত দুই তীরে আছড়াইয়া পড়িল । ১লা মাঘের ভূমিকম্পের বর্ণনা আর দিব না। কেবল এইটুকুই জানাইব যে ভারতবর্ষের সমতলভূমিতে র্যাহারা এই ভূমিকম্প প্রত্যক্ষ করিয়াছেন, তাহারা সেই ভূমিকম্পের জন্মকেন্দ্রের অবস্থা কল্পনা করিতেও পারিবেন না। আমরা মরি নাই কেন জানি না। বোধ করি পরমায়ু ছিল বলিয়াই মরি নাই । নৃত্যেন্মাদ মাটি—তাহারই উপর উপুড় হইয়া পড়িয়া ছিলাম। চোখের সম্মুখে বুদ্ধস্তম্ভ বাত্যাবিপন্ন জাহাজের মাস্তুলের মত দুলিতেছিল। চিন্তাহীন জড়বং মন লইয়া সেই দিকে তাকাইয়া ছিলাম । ভিক্ষু ! ভিক্ষুর কি হইবে ? ভূমিকম্পের বেগ একটু মন্দীভূত হইল। বোধ হইল যেন থামিয়া আসিতেছে। বাইনকুলারটা হাতেই মুষ্টিবদ্ধ ছিল, তুলিয়া চোখে দিলাম। পলায়নের চেষ্টা বৃথা, তাই সে-চেষ্টা করিলাম না । আবার দ্বিগুণ বেগে ভূমিকম্প আরম্ভ হইল : ধেন ক্ষণিক শিথিলতার জন্য অতুতপ্ত হইয়া শতগুণ হিংস্র হইয়া উঠিয়াছে, এবার পৃথিবী ধ্বংস না করিয়া ছাড়িবে না। কিন্তু ভিক্ষু ? স্তম্ভ এতক্ষণ মাস্তুলের মত দুলিতেছিল, আর সহ করিতে পারিল না ; হঠাৎ মূলের নিকট হইতে দ্বিখণ্ডিত হইয়া গেল। অতল খাদের প্রাস্তে ক্ষণকালের জন্য টলমল করিল, তার পর মরণোন্মত্তের মত খাদের মধ্যে ঝাপ দিল । গভীর নিম্নে একটা প্রকাও বাম্পোচ্ছাস উঠিয়া স্তম্ভকে আমার চক্ষু হইতে আড়াল করিয়া দিল ।