পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



আশ্বিন
পাল-সাম্রাজ্যের শাসন-প্রণালী
৮৮৭

অশ্বসমূহের বর্গীকরণ (classification) অশ্বের কুল, বয়স, বর্ণ, চিহ্ন ও কর্ম্ম বিষয়ে সম্যক্ জ্ঞান এই কর্ম্মচারীর থাকা চাই। পাল-রাজগণ নিজ নিজ অশ্বশালার জন্য পারসীক কাম্বোজ প্রভৃতি দেশে উৎপন্ন অশ্বসমূহের আমদানী করিতেন বলিয়া জানা যায়।

 উষ্ট্রব্যাপৃতক—পাল-রাজগণের পশুশালাতে উষ্ট্রেরও স্থান ছিল। যে কর্ম্মচারী উষ্ট্ররক্ষাদির অবেক্ষণ কার্য্য করিতেন, তাহাকেই উষ্ট্রব্যাপৃতক বলা হইত। সেনার রসদ-বহনে উষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা বিশেষ ভাবে উপলব্ধ হইত।

 শরভঙ্গ—এই নাম যে কোন্ রাজপুরুষকে বুঝাইতে প্রযুক্ত হইত, তাহা জানা যায় না। তিনি সম্ভবতঃ যুদ্ধ-বিভাগের কোন কর্ম্মচারী হইয়া থাকিবেন। তীর ধনু লইয়া যাহারা যুদ্ধাদি করিত তাহাদের কোন ঊর্দ্ধতন কর্ম্মচারী হইবেন কি?

 কিশোর-বড়বা—গো-মহিষাধিকৃত, গো-মহিষাজাবিকাধ্যক্ষ—যাঁহারা ‘কিশোর’ অশ্ব (অর্থাৎ ৬ মাস হইতে ২॥ বৎসর বয়স্ক অশ্ব) সমূহের ও ‘বড়বা’ ঘোটকী প্রভৃতির প্রত্যবেক্ষণে নিযুক্ত থাকিতেন তাঁহারাই ‘কিশোরাধিকৃত’ ও ‘বড়বাধিকৃত’ বলিয়া অভিহিত হইতেন। সেকালে বার্ত্তা-বিদ্যার অন্তর্ভুক্ত ‘পাশুপাল্য’ বা পশুপালন যে সমাজে কত দূর আদরের বস্তু ছিল, রাজসরকারে গবাধ্যক্ষ, মহিষাধ্যক্ষ, অজাধ্যক্ষ (ছাগাধ্যক্ষ) অবিকাধ্যক্ষ (মেষাধ্যক্ষ) প্রভৃতি নানা প্রকার পশুর অধ্যক্ষ নিয়োগ হইতেই তাহা প্রতীয়মান হয়। রাজপশুশালায় প্রত্যেক জাতীয় বহুসংখ্যক গৃহপশু রক্ষিত হইত এবং তাহাদের ক্রয়বিক্রয় এবং তজ্জাত দ্রব্যাদিদ্বারা বাণিজ্য করা হইত।

পুলিস বিভাগ

 মহাপ্রতীহার—রাজসদনে যত দ্বাররক্ষকগণ বা যামিকগণ (প্রহরিগণ) রক্ষাকার্য্যে নিযুক্ত থাকিয়া পুলিসের কার্য্য করিয়া থাকে তাহাদের ঊর্দ্ধতন রাজপুরুষের নাম ‘মহাপ্রতীহার’। তিনি প্রাচীনকালে উচ্চশ্রেণীর অমাত্যবর্গের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

 দাণ্ডিক—দণ্ডধারী রক্ষি-পুরুষ-শ্রেষ্ঠ পুলিস বিভাগের কোন কর্ম্মচারী (দারোগা) অথবা অপরাধীর দণ্ডবিধানকারী বিচার বিভাগের কোন কর্ম্মচারী তিনি হইয়া থাকিবেন। তিনি পরবর্ত্তীকালে ‘দাণ্ডপাণিক’ বলিয়াও উল্লিখিত হইয়াছেন।

 দাণ্ডপাশিক বা দণ্ডপশিক—বিচারে যে-সকল অপরাধীর প্রতি প্রাণদণ্ডের আদেশ হইয়াছে তাহাদের বধাধিকৃত রাজপুরুষই ‘দাণ্ডপাশিক’ নামে অভিহিত হইত বলিয়া মনে হয়।

 দণ্ডশক্তি—কেবল ধর্ম্মপালদেবের তাম্রশাসনেই এই রাজপাদোপজীবীর নাম পাওয়া যায়। উহার করণীয় কিরূপ ছিল তাহা জান যায় নাই। তবে মনে হয়, তিনিও পুলিস বিভাগের কোন রাজপুরুষ হইয়া থাকিবেন।

দেওয়ানী বিভাগ

 মহাদণ্ডনায়ক—অর্থশাস্ত্রে যাঁহাকে ‘দণ্ডপাল’ আখ্যা দেওয়া হইয়াছে, তিনিই পরবর্ত্তী সময়ে ‘মহাদণ্ডনায়ক’ নামে পরিচিত হইয়া থাকিবেন। গুপ্ত-যুগে এক জন প্রধান অমাত্যকে (হরিষেণের পিতা তিলভট্টককে) সান্ধিবিগ্রহিক ও কুমারামাত্য—এই দুইটি উপাধিসহ মহাদণ্ডনায়ক উপাধি ব্যবহার করিতে দেখা গিয়াছে। মনে হয় যাঁহারা ফৌজদারী বিভাগের আসামীদিগকে শাস্তি বিধান করিতেন, তাঁহাদেরই ঊর্দ্ধতন রাজকর্ম্মচারীর নাম ছিল মহাদণ্ডনায়ক। অনেকে এই শব্দটিকে ‘সেনাপতি’—সমানার্থক মনে করিয়া থাকেন। তাহা হইলে দুইটি শব্দ পৃথগ্‌ভাবে একই তাম্রশাসনের রাজপাদোপজীবিগণের মধ্যে ব্যবহৃত পাওয়া যায় কেন?

 প্রমাতা—এই রাজপুরুষের ব্যাপার অপরিজ্ঞাত। তিনি কি কোন প্রকার বিচারক শ্রেণীর অধিপতি? অথবা ভূমি প্রভৃতির জরীপ বা মাপ সম্বন্ধে কার্য্যকর্ত্তা? তিনি অর্থশাস্ত্রে পৌতবাধ্যক্ষ ও মানাধ্যক্ষ বলিয়া উল্লিখিত কর্ম্মচারীদ্বয়ের শেষোক্ত জন হইবেন কি? মানাধ্যক্ষের কর্ত্তব্য ছিল তুলা (balance) ও নানা প্রকারের মাপের দ্রব্যাদির পরীক্ষা করা (weights and measures-দর্শক)।

 ধর্ম্মাধিকারার্পিত—এই ব্যক্তিই সম্ভবতঃ পূর্ব্বকালে ‘পৌরব্যবহারিক’ ও পরবর্ত্তী কালে ধর্ম্মাধ্যক্ষ বা ‘মহাধর্ম্মাধ্যক্ষ’ নামে অভিহিত হইতেন। দেওয়ানী-বিচারে তিনিই শ্রেষ্ঠ বিচারক। কুমারপালদেবের মহামন্ত্রী বৈদ্যদেব যখন কামরূপাধিপতি নিযুক্ত ছিলেন, তখন তদীয় ‘ধর্ম্মাধিকারার্পিত’ এক রাজপুরুষের নাম ছিল শ্রীগোনন্দন (কমৌলি-লিপি)। পরবর্ত্তী সময়ে বিখ্যাত পণ্ডিত হলায়ুধ ছিলেন লক্ষ্মণসেনের রাজ্যে প্রধান বিচারপতি বা ‘মহাধর্ম্মাধ্যক্ষ’।

সঙ্কীর্ণ বিভাগ (Miscellaneous)

 দূতক—তিনি দূত-নামক বার্ত্তাহর হইতে ভিন্ন প্রকারের কার্য্যকারী। প্রাচীন কালে ব্রাহ্মণাদিকে তাম্রশাসনদ্বারা ভূমি প্রভৃতি দান বা তাহা বিক্রয় করিবার সময়ে, অমাত্য-শ্রেণীভুক্ত যে রাজপাদোপজীবী, প্রতিগ্রহীতা বা ক্রয়কারী ব্যক্তির আবেদন রাজাদের