পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



আশ্বিন
পরের বোঝা
৮৮৯

 গমাগমিক ও অভিত্বরমাণ বা অভিত্বরমাণক—মনে হয়, যাহাদিগকে স্বরাষ্ট্রে ও পররাষ্ট্রে সংবাদাদি সংগ্রহ করার জন্য বা কোন দ্রব্যাদি আনা নেওয়ার জন্য পাঠাইতে হইত—তাহাদের কার্য্য প্রত্যবেক্ষণের ভার যে কর্ম্মচারীর উপর ন্যস্ত থাকিত, তিনিই গমাগমিক। এবং 'অভিত্বরমাণ’ শব্দটিও যাহারা রাজকার্য্য সম্পাদনে শীঘ্রগ, তাহাদিগের ঊর্দ্ধতন কর্ম্মচারীকে বুঝাইতে ব্যবহৃত হইয়া থাকিবে।

 তদাযুক্তক ও বিনিযুক্তক—পাল-রাজগণের তাম্রশাসনে এই প্রকার নামধারী রাজপুরুষের উল্লেখ পাওয়া যায়। কিন্তু, তাঁহাদের নিয়োগ সম্বন্ধে আমরা কোন সুস্পষ্ট পরিচয় কোথাও বড় একটা পাইতেছি না। তবে, মনে হয় যে রাজাদিগের কোন প্রয়োজন-বিশেষ উপস্থিত হইলে যদি হঠাৎ নানাশ্রেণীর কর্ম্মচারীর নিয়োগ আবশ্যক হয়, তখন যে কর্ম্মচারীর উপর সেই প্রকার সেবক নিয়োগের প্রধান ভার ন্যস্ত থাকিত, তিনিই সম্ভবতঃ ‘তদাযুক্তক’ নামে আখ্যাত হইতেন। আর বিশেষ বিশেষ কার্য্যে লোক নিযুক্ত করার ভার যাঁহার উপর অর্পিত থাকিত, তিনিই ‘বিনিযুক্তক’ নামে পরিজ্ঞাত রাজপুরুষ হইয়া থাকিবেন।

 উপরি বর্ণিত নানা প্রকার রাজপাদোপজীবিগণের নাম ও তাঁহাদের কার্য্যকলাপ হইতে এই অনুমান সর্ব্বথা সঙ্গত বলিয়াই মনে করা যাইতে পারে যে, পাল-সাম্রাজ্যে যে শাসনপ্রণালী প্রচলিত ছিল, তাহা রাজতন্ত্র-শাসন হইলেও পাল-নরপালগণ তাঁহাদের বিশাল রাজ্যে শাসনের সৌকর্য্যার্থে বর্ত্তমান সময়ের প্রাদেশিক আমলাবর্গের (bureaucracy) ন্যায় নানা বিভাগের অধ্যক্ষাদির সহায়তা লইতেন। মৌর্য্যযুগে, গুপ্তযুগে কিংবা মধ্যযুগে, নরপতিগণ যে প্রায় একই প্রকার শাসন-প্রণালী অবলম্বন করিয়া ভারতের সর্ব্বপ্রদেশে রাজ্যশাসন সম্পাদন করিতেন, তাহাতে কোন সংশয় নাই। তবে যুগে-যুগে রাজপুরুষগণের নাম অনেক সময়ে পরিবর্ত্তিত হইয়া গিয়াছে এবং নূতন নূতন নিয়োগাদিরও যে সৃষ্টি করা হইয়াছে—ইহা ইতিহাস, প্রাচীন সংস্কৃত-সাহিত্য ও তাম্রশাসনাদিরূপ প্রত্ননিদর্শনের আলোচনা হইতে প্রতীয়মান হইয়া থাকে।


পরের বোঝা

শ্রীসরযূ সেন

বন্যাপীড়িতদের সাহায্যের জন্য ভলাণ্টিয়ার সাজিয়া প্রথম যখন পরমোৎসাহে সদলবলে রওয়ানা হইলাম তখন কল্পনাটা ছিল বেশ জাঁকালোগোছের। গন্তব্যস্থলে পৌঁছিবার বহু পূর্ব্বেই বিষয়টার পৌনে-ষোল আনা মনে মনে উপভোগ করিতে করিতে দুর্গত-জনের কৃতজ্ঞ-সজল দৃষ্টিতে পুণ্যস্নান করিয়া মহত্ত্বের মরলোক ডিঙাইয়া একেবারে দেবত্বের অমরলোকে আপনাকে প্রতিষ্ঠিত দেখিতে লাগিলাম এবং বেশ একটা আত্মপ্রসাদ অনুভব করিলাম।

 তার পর, ভাবলোক হইতে অভাব-লোকে পদার্পণ করিতেই নেশা ছুটিয়া যাইবার জো হইল। দেখিলাম বাহিরের বিপর্য্যস্ত প্রকৃতির যে কবিত্বময় চিত্র মনে মনে আঁকিয়াছি, তাহা নিতান্তই আমার কাঁচা হাতের কাজ। কোথায় আমার কল্পিত বিশ্বপ্রকৃতির সেই বিরাটব্যাপ্ত জলরাশির তরঙ্গায়িত লীলাবিলাস, আর কোথায় বা সেই বিপর্য্যস্ত গ্রাম্যশ্রীর উদ্‌ভ্রান্ত সৌন্দর্য্য। চমক ভাঙিয়া দেখিলাম, পীড়িতস্কন্ধে দুর্ব্বহ বস্তা, জানুপ্রমাণ কাদা ভাঙিতে ভাঙিতে মৃত জন্তু ও গলিত বৃক্ষলতার দুর্গন্ধে আমার শ্বাস রোধ হইবার উপক্রম হইয়াছে এবং যাহাদের সাহায্যের জন্য আসিয়াছি তাহাদের মধ্যে আমার প্রতি কল্পিত কৃতজ্ঞতার সজল স্নিগ্ধদৃষ্টি, বুভুক্ষা এবং প্রকৃতির অকথ্য অত্যাচারে শকুনির মত ক্রূর হইয়া উঠিয়াছে।

 ব্যাপার এই, তাহারা জানে যে সরকার-বাহাদুরই এ-সব সাহায্যের ব্যবস্থা করিয়া থাকেন; এবং যে-সকল পিতৃমাতৃ গৃহতাড়িত হতভাগ্য এই সকল সাহায্য বিতরণ করিয়া