পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b~sరి প্রবাসী SNSBNー বেড়ায় তাহারা সরকারেরই অধমশ্রেণীর বেতনভুক্‌ জীব, স্বতরাং এক প্রকার তাহদেরও ভূত্য । অতএব তাঁহাদের ইচ্ছামত সাহায্য দিতে ইহারা বাধ্য। কিছু অমনই নয় ; চিরটা কাল তাহারা সবেগে সরকারের খাজনা যোগাইয়া আসিয়াছে ; দায়ে ঘায়ে মালেক না বুঝিলে চলিবে কেন ? এ-সাহায্য যে সরকারী নয় এই সামান্য কথাটা অনেক করিয়া বুঝাইলেও বিশ্বাস করিবার মত মনোভাব কাহারও বড় দেখিলাম না। বরং এই সকল কথায় তাহার বেশ একটু সন্দিগ্ধ হইয়া উঠিল এবং জলজ্যান্ত সরকার-বাহাদুরকে অস্বীকার করিতে দেখিয়া আমাদের গৃঢ় দুরভিসন্ধি আন্দাজ করিয়া লইতে তাহদের বিলম্ব হইল না। স্পষ্টই অনেকের অসন্তোষ টের পাইলাম এবং উদ্বৃত্ত জিনিষগুলা যে কোথায় যায় এ-বিষয়ে তাহাদের অনুমান এবং সিদ্ধাস্ত সুস্পষ্ট বাক্যে প্রচার করিতে তাহারা দ্বিধামাত্র প্রকাশ করিল না । দেবতার আসন হইতে অপদেবতার আসনে উপস্থাপিত হইয়াও মনে মনে তাহাদিগকে বিশেষ দোষারোপ করিতে পারি নাই। আমার সহকৰ্ম্মীদের খাওয়া-দাওয়া আমোদপ্রমোদের ধুম দেখিলে হঠাৎ তাহাদিগকে বরযাত্র বলিয়া ভ্রম হওয়া বিচিত্র নয়। ইতিমধ্যে জোয়ানগোছের একটি পাথুরে মূৰ্ত্তি—অবশু বৰ্ত্তমানে আর তেমন জোয়ান নাই—এক দিন আসিয়া বেশ একটু শাসাইয়া গিয়াছে। সময়ট নিতান্তই অসময় । সন্ধ্যা হয়-হয় । সকালের সাহায্য বিতরণ, দ্বিপ্রহরের ভূরিভোজন, বৈকালিক চায়ের আডডায় বন্যাবিধ্বস্ত গ্রামের স্বকপোলকল্পিত দুৰ্দ্দশার অভিনব অভিজ্ঞতার বাহুল্যবর্ণনা সহকারে বাহবাস্ফোট ইত্যাদি অবশু কৰ্ত্তব্যগুলি সমাপন করিয়া সঙ্গীরা তখন দ্বিতীয় কিস্তি চায়ের পেয়ালা হাতে উচ্চও তাসের আসর জমকাইয়া বসিয়াছে। ছেলেবেলা হইতেই এ-সকল লঘুতা আমার ধাতে সহিত না। শ্রান্তচিন্তে উদ্বেল দামোদরের জনহীন তীরে, অামাদের ডেরার কিছুদূরে বসিয়া, নাবাল জলের কর্দমাক্ত তটভূমির কার্য্যতায় বিলুপ্ত অপগত খামশম্পঐর অভিনব চিত্র কল্পনায় আঁকিয় তুলিবার চেষ্টা করিতেছি ; এমন সময় এই নির্জন প্রায়ান্ধকার বঙ্গাপ্লাবিত নদীতটে আমার সমস্ত অস্তরাত্মা চমকাইয়া দিয়া অতিশয় রক্ষ চেহারার একটি দীর্ঘকায় যুবক অত্যন্ত অকস্মাৎ এবং সম্পূর্ণ বিনাভূমিকায় আমার নিকট আসিয়া কিছু সাহায্য দাবি করিল। বলিল—কিছু দুধ তাহার এখনই বিশেষ আবশ্বক। বুঝিলাম লোকটি অহিফেনসেবী এবং স্বরসিক। প্রার্থী দেখিয়া বুকে ভরসা আসিল। যথাসাধ্য শাস্ত স্বরে জানাইয়া দিলাম যে দুগ্ধ সরবরাহ করা আমার কার্ধ্য নয়। তা ছাড়া, এখন অসময় ; কাল সকালে আসিলে আবশ্বক বুঝিয়া ব্যবস্থা করা যাইতে পারে। আমার গাম্ভীর্ষ্যে কিছুমাত্র বিচলিত না হইয় বেশ একটু উদ্ধতভাবে যুবক বলিল, “যখন চাইব তখনই দিতে হবে ; সরকারের নিমক থাও না ?” বার-বার সরকার সরকার শুনিয়া মনটা পূৰ্ব্ব হইতেই বেশ উত্তপ্ত ছিল, ফল্‌ করিয়া জলিয়া উঠিলাম। বলিলাম, "সরকার ত এক নৌকা চাল পাঠাঠয়াই খালাস, তার অৰ্দ্ধেক ত আবার যায় তার কৰ্ম্মচারীদের পেটে । এই যে দেশদেশান্তরের স্বেচ্ছাসেবকের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষ সংগ্ৰহ করিয়া অন্নবস্ত্ৰ আনিয়া বারে বারে এদের শূন্ত গহবরে ঢালিয়া দিতেছে, তার সব ধন্যবাদ সব কৃতজ্ঞতা সরকারই ভোগ করিবে নাকি ?”—মাথায় কেমন ভূত চাপিল, লোকটাকে জোর করিয়া বুঝাইতে বসিলাম । রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সমাজনৈতিক বন্ধ তথ্য তাহাকে অতি প্রাঞ্জল ভাষায় সবিস্তারে এবং সোৎসাহে বুঝাইলাম। সে কি বুঝিল সে-ই জানে। কহিল, “বাবু, এতই দয়া যদি তোমাদের, তা আগে এলে না কেন ?—আগে এলে আমার এমন সৰ্ব্বনাশটা হ’তে পারত না ।” তাহার স্বরে কোথায় যেন একটা শ্লেষের আভাস ছিল—অথবা সেটা হয়ত আমারই ফুৰ্ব্বল চিত্তের একটা সন্দেহমাত্র—এবং অনেকখানি হতাশা ছিল । একটি শিশুর ক্রদনে চমকিত হইয়া দেখি, ফুটফুটে ছেলেটি বানে-ভাঙা রাস্তার ধারটিতে দাড়াইয়া কাদিতেছে। আমার দৃষ্টির অমুসরণে চাহিয়া যুবকটি কহিল,—যাক, মরুকৃ গে, পরের বোঝ, আমার কি? যত শঙ্কুর তাই-- —তোমার সব বুঝি গেছে ? —আমার সব ? কিষ্ট বা ছিল । এক বুড়ো মা--তা সে কবে মরে গেছে। আমি একাই। —বউ ? —বউ কোথা পাব ?—মতিগতি তেমন স্থবিধার নয়