পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ግህ፦ প্রবাসী SNSBNご তাহার মত দাদা যদি মাঝে মাঝে কাদে ! মাঝে মাঝে সে দাদার সম্মুখে কাদিয়া ফেলিত । প্রথম প্রথম অরুণ তাহাকে কাদিতে দেখিলে আদর করিত, বলিত, কাদিস্নে টুলি ; কিন্তু এখন একবার প্রতিমার দিকে করুণভাবে চাঙ্গিয় মুখ ফিরাইয়। লয়। প্রতিমা এখন লুকাইয়া কাদে । নিজ সত্তার এ পরিবর্তন অরুণ অনুভব করিত । তাহার হৃদয় যেন বরফের মত জমিয়া গিয়াছে, বুকটা বেশ ঠাণ্ড লাগে, এই ত শাস্তি । অস্ত্রোপচারের পূৰ্ব্বে চিকিৎসক যেমন রোগীকে ক্লোরোফৰ্ম্ম দ্বারা সংজ্ঞাহীন করিয়া দেন, তেমনই যেন তাহার হৃদয়কে অসাড় করিয়ু দিয়াছে । কোন শোক, কোন বেদন তাহাকে বিচলিত করিতে পরিবে না। শুধু হৃদয় নয়, তাহার মস্তিষ্কের রক্ত-চলাচলও ক্ষীণ হইয় আঁসিয়াছে। বি-এ পরীক্ষা সন্নিকট। অরুণ পাঠ্যপুস্তকগুলি পাশে লইয়া চজি-চেয়ারে তেলান দিয় বারান্দায় বসিয়া থাকে, পুস্তকগুলি পড়িতে চেষ্টা করে, কিন্তু মাথায় কিছু যেন ঢুকিতে চায় না। পাঠ বার বার ভুলিয়া যায়। কেবলমাত্র হৃদয়ের অসাড়ত নয়, গভীর আলস্য । কৰ্ত্তব্য কৰ্ম্মগুলি ব্যতীত অরুণ আর কিছু করিতে চাহে না । কিন্তু কৰ্ত্তব্য-কৰ্ম্মগুলি অতি নিষ্ঠার সহিত করে । উমা দুইখানি চিঠি দিয়াছে, উত্তর দিতে হইবে চিঠি লিখিতে কুঁডেমি লাগে । বস্তুতঃ কিছু লিখিতে ভাল লাগে না । কিন্তু বন্ধুর আসিলে অনর্গল বাজে কথা কহিতে তাঙ্গর অত্যস্ত উৎসাহ । কলিকাতার নানা মুখরোচক সংবাদগুলি তাঙ্গর প্রতিদিন শোনা চাই । সে অবিশ্রাস্ত কথা কহিয়া যায়, তাহার শ্রাস্তি নাই । বন্ধুব বোঝে, এক অস্বাভাবিক উত্তেজনায় অরুণ কথা কহিয়া ফাইতেছে, ইহাতে অরুণের শান্সি নাই । কিন্তু একা চুপ করিয়া বসিয়া থাকিতে তাহার ভাল লাগে না, সে কিছু ভাবিতে চাহে না । বন্ধুর যখন না থাকে, তখন সে প্রতিমাকে, ঠাকুমাকে বা সরকারমশাইকে বা মোটর চালককে ডাকিযু গল্প করিতে বসে । কিন্তু এত গল্প করিয়াও তাতার মন হাস্ক হয় না । মন খুলিয়া সে কাঙ্গর ৪ সঙ্গে কথা বলে ল । অরুণ ভাবে, যদি মামীম কলিকাতায় থাকিতেন ! মামীম থাকিলে, এত লোক ডাকিয় এত বাজে কথা কহিতে কারণ, হইত না । এই বুদ্ধিমতী পরমস্নেহশীলা নারীর নিকট সে চিরদিন জীবনের সকল সুখ-সু:খ, সকল আশা-আকাঙ্ক্ষা, বেদনার কথা বলিয়াছে ; কত তর্ক করিয়াছে, আলোচনা করিয়াছে, মনে দুৰ্ব্বলতা আসিলে শক্তি পাইয়াছে । আজ এ দুঃখের দিনে তিনি দূরে । দিদির সঙ্গে অনেক কথা হয় বটে, কিন্তু দিদি তাহার মন ঠিক বুঝিতে পারেন না ! রাত্রে খাওয়ার পর দক্ষিণের বড় বারানায় বসিয়া আরুশ উমাকে চিঠি লিখিতে বসিল । উমা, কথাটি লিথিয় সে উমার অনুপম সুন্দর মুখ কল্পনা করিতে চেষ্টা করিল। কল্পনার চক্ষে সে মুখ ভাসিয়া উঠিল না। অতি অস্পষ্ট আবছায়া, যেন কোন স্বপ্নে-দেখা ভুলিয়া যাওয়া মুখ । উমার মুখ সে ভুলিয়া গিয়াছে ! অরুণ একটি সিগারেট ধরাতল । এখন সে ভয়ঙ্কর সিগারেট থায় । চিঠির কাগজটি সে ছিড়িয়া ফেলিল । বারান্দায় থানিক ক্ষণ পায়চারি করিল । অৰ্দ্ধদন্ধ সিগারেটটি ফেলিয় আর একটি নুতন সিগারেট ধরাষ্ট্ৰল । মাঘ মাসের শেষে বসন্তের মুণ্ডু বাতাস বহিতেছে । নারিকেল বৃক্ষগুলির আড়ালে চতুৰ্দ্দশার চম্ভ । হয়ত সে আর উমাকে ভালবাসে না । হয়ত তাহদের প্রেম প্রথম যৌবনের রঙীন স্বপ্ন, যৌবনের অলীক স্বপ্ন, সে স্বপ্ন বুঝি টুটিয়া গিয়াছে । শ্রাস্ত হইয় অরণ চেয়ারে বসিয়া পড়িল । চায় না । কলেঞ্জের কোন পাঠ্যপুস্তক আনিয়া পড়িলে স্থির করিল। কিন্তু ঘরে গিয়া বই খ জিয়া আনিবার শক্তিও বুঝি তাহার নাই । আর একটি সিগারেট ধরাতল । কাগজ লইয়। সে মামামাকে চিঠি লিখিতে বসিল । লিথিতে লিথিতে অরুণ ঘুমাইয়া পড়িল । গভীর রায়ে তাহার ঘুম ভাঙিয়া গেল । প্রস্ফুটিত জু ফুলের মত শুভ্ৰ, স্নিগ্ধ জোৎস্নাধারায় বারানা ভরিয়া গিয়াছে। লিখিবার টেবিলে, চেয়ারে, চোখে চন্দ্রালোকের বন্যা । স্তন্ধ নিশপিনী তরুমৰ্ম্মরে শিহরিয়া উঠিতেছে ; স্বচ্ছ নীলস্ফটিকের মত নীলাকাশে কয়েকটি লঘু শুভ্ৰমেঘ, তাহাদে সে ভাবতে আর একটি চিঠির