tyషి যে-কোন জীবাত্মার মধ্যে নূতন অবতার ( incarnation nouvelle ) হইতে পারি না কি ? সহজ অবস্থায় এট যে অসম্ভব তাহ স্পষ্টই দেখা র্যায়। তথাপি যদি আমার আত্মাকে সম্পূর্ণ শূন্ত করিতে পারি, যদি আত্ম-সম্মোহন অথবা যোগ-বলের মত কোন উপায়ে আমার আত্মার ভিতরকার সমস্ত সঞ্চিত বস্তু নিষ্কাষিত করি, তাহ হইলে আমার এই বিশিষ্ট আমিত্ব বর্জন করিয়া আমার নির্বিশেষ আমিত্বে উপনীত হইতে পারি না কি ? সেই অবস্থায় আমার চেতন তাহার জীবন্ত বৈচিত্র্য ছাড়িয়া নিজস্ব ঐক্যের মধ্যে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ; এক দিক্ দিয়া দেখিলে এই অবস্থায় আমি যেন শূন্য ও অবাস্তব, কিন্তু এই নির্বিশেষ-আমি কি আপন ইচ্ছামত অন্য বিশিষ্ট গুণাদি গ্রহণ করিতে পারে না ? ইহা কি অন্যরূপে নিজেকে গড়িতে বা অন্য পদবীতে নিজেকে নামাইতে পারে ন! ? আত্ম-সম্মোহনের অবস্থায় আত্মাকে প্রাচীন সংস্কারশূন্য কবিলে নবীন সংস্কার-ইচ্ছাদি বাহির হইতে আসিয়া ত প্রভুত্ব করে ; কিন্তু এটা জানি যে, তাহা শুধু পুরাতন দাসত্ব-শৃঙ্খলের স্থানে নূতন শৃঙ্খল জড়ান ;•একটা মোহ কাটাইয়া আর একটা মোহের কবলে পড়া। একটা নূতন মায়ার দাসত্ব করা ত বন্ধ হইল না ! - ইহাই দেখাইতে চাই যে প্রত্যেক আত্মায় প্রত্যেক খণ্ডাত্মায় নিখিল বিশ্ব প্রতিবিম্বিত হয়। প্রত্যেকেই ভূমাকে নিজের মধ্যে অনুভব করিতে পারে এবং নিজেকে ভূমার সঙ্গে ভেস্তাইয়া বসে। কিন্তু আমাদের আমিত্বের যে চারিটি মুখ্য অবস্থা আছে, তাহার অনুসরণ করিয়া ঐ চেতনা বিভিন্ন আকার ধারণ করে – ( ১ ) মৃত্যু আসিয়া এই জীবন-নাট্যের উপর যবনিকাটি টানিয়া দিলে আমি যে বিরাট-আমির মধ্যে প্রবেশ করি, তাহাতে আমার চেতনা সৰ্ব্বানুপ্রবিষ্ট হয়, কিন্তু তাহার মধ্যে স্তর-ভেদ থাকে ; যথা—তাহার মধ্যে থাকে আমার ব্যক্তিগত আমি “ক,” ( যাহাকে এই মাত্র ছাড়িয়া আসিয়াছি) এবং “খ” “গ” ইত্যাদি করিয়া প্রত্যেক বিশিষ্ট সত্তা যাহা অসীমে পরিব্যাপ্ত হইয়া (auto-hypnotism ) প্রবাসী— বৈশাখ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড আছে ; তাহ ছাড়া এই অগণ্য অসীম সত্তাদের সঙ্ঘবদ্ধ সমগ্রতার চেতনাও থাকে । (২) কিন্তু সহজ জীবিত অবস্থায় দেখি এই সৰ্ব্বব্যাপী চেতনা অন্তভাবে প্রকট ; ইহার মধ্যে আছে আমার ব্যক্তিগত চেতনার আধার ( ক ), এবং অন্তসকল সত্তার সঙ্গে একাত্ম হইবার একটা অস্পষ্ট উপাদানশূন্য চেতনা। মোট হিসাবটা ঠিক আছে, কিন্তু কোন বাবদে কতটা আছে সেই খণ্ড-হিসাবের বোধ নাই । . (৩ ) এই জীবনেই আত্ম-সম্মোহনের অবস্থায় দেখি এই বিশিষ্ট-আমিত্বের বোধ লোপ পায় ; চেতন কমবেশী থাকেই, কিন্তু সেটি অস্পষ্ট অরূপ—যেন সমুদ্রের মত । সকলকে লইয়া আছে, অথচ সকলকে স্বতন্ত্র করিয়া দেখাইতেছে না । ( ৪ ) এই নিৰ্ব্বিশেষ সত্তার দ্রবমান প্রবহমান নিঃসীম অবস্থায় ইহাকে অন্য-এক ইচ্ছার ছাচে এক অপরিচিত আত্মার মধ্যে ঢালা যাক ; তখনি দেখিব এই নৃতনের এই অপরিচিতের ছাপ লাগিয়া যায়। যে নূতন ইচ্ছ। জয়ী হইল আমার নির্বিশেষ সত্তা তাহার চেতনায় সচেতন হইয়া উঠে, সুতরাং ইহার সঙ্গে যেন একাত্ম হয় এবং এক নূতন মায়া আসিয়া পুরাতন মায়ার আসন অধিকার করিয়া বসে । কিন্তু মরণের পরই মায়ার অবগুণ্ঠন ৷ voiles de Maya ) ছিন্ন হয়, মোহের দাসত্ব শেষ হয় ; জীবাত্মা পরমাত্মায় বিলীন হয়, তাহার শাশ্বতত্বের বোধ জাগে ; এই অবস্থায় ‘অহম্’এর মধ্যে ব্যষ্টি ও সমষ্টি, দুইই সমন্বয় লাভ করে ; তখন একটি দৃষ্টিতে অহম খণ্ড ও অখণ্ডকে অসীম তাৎপর্য্যে মণ্ডিত দেখে । এই চারিটি অবস্থা সংক্ষেপে নির্দেশ করিতেছি – ( f ) » I - Pizā vertgl (Etat normal)–nful ; বিচ্ছিন্ন সংরুদ্ধ ব্যক্তিত্বের মায়িক চেতনা। ২ । ভাব-সমাধি ( Extase)—সৰ্ব্বভূতে অনুপ্রবিষ্ট হইবার অসংবদ্ধ চেতনা ; বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের লোপ বা বিস্মৃতি । নামরূপের দাসত্ব হইতে ক্ষণকালের জন্য মুক্তি। (নির্বাণের স্তর-ভেদের সঙ্গে তুলনীয় ) (খ) ৩ । ভাব-সম্মোহন (suggestion)—বাহির হইতে
পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১০০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।