পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ե8 জীবাত্মার কাছে মুক্ত হইবার দুটি উপায় আছে – (১) যাহা সাধারণ মানুষের ;–আমি যাহা তাহাই হইব-— অন্য বিষয়ে মাথা ঘামাইব না, যাহা আমি ইচ্ছা করি, আমি যাহা করি, সংক্ষেপত: আমি যাহা, তাহাই মানিব ; অনুগ্রহ করিয়া নানা মতবাদের বোঝা যদি আমার ঘাড়ে চাপান না হয় তাঙ্গ হইলে জমির ঢালুট। যেমন নদীকে আপনি একদিকে গড়াইয়া লইয়া যায় তেমনি আমি ও আমার প্রকৃতির টানে ছুটিব—কার অধীন কার ক্রীতদাস আমি সে কথা ভাবিবই না । (২) যাহা ভাবরসিকদের –চির সত্য ভূমার দিকে নিজেকে তুলিবার প্রচেষ্টা ; খণ্ডকে পূর্ণের তাৎপর্য্যে মণ্ডিত করিয়া দেখা। সঙ্গতের মধ্যে একটা বিবাদী স্বরকে পৃথক করিয়া শুনিলে তাহা কানটাকে আঘাত করে ; কিন্তু তা’র আসল জায়গায়, তানের বিকাশে, সেই বিবাদী সুরটাই কানকে খুলী করে ; ভূমীর বীণায় আমি যেন সেই বিবাদী স্বর ; তবে আমি সেই অবস্থায় আসিয়াছি যেখানে নিজেকে বিচার করিতে পারি, নিজের সম্বন্ধে বিরক্তও হইতে পারি ; কিন্তু আমি সমগ্র রাগিণীটি শুনিতে পাই, বুঝিতে পারি তাহার মধ্যে আমার বিবাদী সুরগুলি কেমন যেন গ্রন্থির কাজ করে । এই চোখে দেখিলে গানের প্রত্যেক অংশটিই আমাদের ভাল লাগিবে । বাহিরে যে “বহু” আছে তাহাকে আমার আত্মার ভিতরে খুজিতে হইবে ; অন্তরকে বাহিরে খুজিলে চলিবে না। তাহা হইলে দেখিব শুধু বেস্থর ও অসামঞ্জস্য—স্বাধীনতা একদিকে অনন্ত পূর্ণ অন্য দিকে খণ্ড চুর্ণ সঙ্কীর্ণতায় অনন্ত । এই নিৰ্ব্বোধ দ্বৈতবোধ একটা মরিয়া-রকমের ফুৰ্বি জাগাইতে পারে কিন্তু সে উদ্ধত ফুৰ্বির আবরণ ভেদ করিয়া দেখা যায় নিয়তির নিগড় মাথা পাতিয়া লওয়া হইয়াছে । দার্শনিকদের প্রতি আমার সাধ্যমত আদিতত্ত্বটা যেমন বুঝিয়াছি তাহার আভাস দিলাম। দর্শনশাস্ত্রের অন্তর্গত মনস্তত্ত্ব পর্য্যায়ের যাবতীয় তথ্যের কারণ নির্দেশ আমার কাছে আশা করা উচিত নয় ; সেটা বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের ব্যাপার। আমি শিল্পী মাত্র। আমার শিল্পের মধ্যে ঝাঁপ দিয়া জীবনের প্রবাসী-বৈশাখ, ১৩০৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড বিচিত্র লীলা তন্ময় হইয়া দেখিবার পূৰ্ব্বে আমি জীবনের অর্থ কি তাহা বুঝিবার প্রয়োজন অনুভব করি ; সৌধ নিৰ্ম্মাণের পূৰ্ব্বে ভিত্তিটার সম্বন্ধে নিশ্চয়তার দরকার হয়। সেই ভিত্তির দুইটা দিক এখন (কারণ স্বষ্টির লীলায় ঝাপাইয়া পড়িবার জন্য আমি চঞ্চল ) আমার দৃষ্টির সম্মুখে দুইটি প্রকাণ্ড প্রশ্ন হইয়া দেখা দিতেছে — ( ১ ) আমরা কি ? আমাদের অসীম বৈচিত্র্য ও স্থির মূলপ্রকৃতির দিক্ দিয়া বিচার করিলে আমাদের কি মনে হয় ? ( ) কেমন করিয়া আমাদের বঁচি উচিত ? এই দুটি প্রশ্ন ছাড়া বাকী সমস্তই উপস্থিত অবাস্তর মনে হয় । আমি একথা বলি না ধে পর জীবনে সময়-সুযোগ পাইলে আমার এ জীবনের এই তরুণ বিশ্বাসের সাহায্যে তৎসংক্রান্ত নানা প্রশ্ন সমস্ত্যাদির কারণ সন্ধান আমি করিব না। এই বিশ্বাস সমস্ত তত্ত্বের মূল বলিয়া নানা তত্ত্বের মধ্যে ঐক্য খুজিয়া বাহির করা সহজ, কিন্তু উপস্থিত সে কাজে নামিবার ইচ্ছা বা ধৈর্য্য নাই, কারণ শিল্প আমায় টানিতেছে। বর্তমানের চেতন হইতে ক্রমশঃ অতীতের স্মৃতি, বাহ জগতের কারণ, অহম এর সত্য বোধ ইত্যাদির ভিতর দিয়া অনন্ত দেশ অনন্ত কালরহস্তে উপনীত হওয়া যায় । প্রত্যেক চেতনার মধ্যে ভালর দিকে ঝোক ও মন্দের বিরুদ্ধে ও দুঃখের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জাগিয়া উঠে ; সজীব সহজ জ্ঞানের প্রধান ও প্রায় একমাত্র ধৰ্ম্মই এই ; ইহা হইতেই বাহ জগৎ সম্বন্ধে সহজ জ্ঞান জন্মায়। এ স্থলে মানুষ সচেতন নয়। ইহা একপ্রকার আদিম বিশ্বাস যাহা কোন এক অস্পষ্ট চেতনা এক অপূর্ণ প্রয়াস হইতে উদ্ভূত হয়। সত্তা যখন সচেতন হইয়া আবিভূত হয় এবং বিশ্লেষণ করিয়া সবটা বুঝিতে চেষ্টা করে তখন তাহার চেতন৷ যেন এক বাহ প্রক্রিয়া বলিয়া বোধ হয় এবং জীবনের রহস্যার্থটি সে হারাইয় ফেলে। আর সে চেতনাকে তেমন প্রাণদীপ্ত বলিয়া অনুভব করে না, স্বতরাং তাহা হইতে আর বেশী কিছু পায় না ; কারণ এই হওয়-এবং-মুখী হওয়া ব্যাপারটা বুঝিবার জিনিষ নয় অনুভব করিবার ।