পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১০৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] গিয়েছিল। সে পথে পথে এক্লা ঘুরেছে—প্রতিদিন তার রাগ আর হিংসা বেড়েই চলেছিল। একবার যদি স্বীর দেখা পায় তা হ’লে তাকে কি-ভাবে যন্ত্রণ দেবে তার নানারকম চমৎকার ফন্দীও সে বের ক’রে রেখেছিল।” শীর্ণকায়া মুম্ষু ঈডিথ নিঃশব্দে মৃত্যুদূতের এই কাহিনী শুনিতেছিল—তাহার রক্তহীন মুখে মুহূর্তে মুহূর্তে ভাৰবিপৰ্য্যয় হইতেছিল ; সে আর থাকিতে পারিল না ; বৈদনাকাতরকণ্ঠে সেই ছায়ামূৰ্ত্তিকে বাধা দিয়া বলিয়া উঠিল— “থাম থাম, আর বলোন, আমি আর সইতে পারছি ন—হায় হায়, আমি কি ভীষণ অন্যায় করেছি—এর জবাবদিহি করব কেমন ক’রে—ভেবে পাচ্ছি না। আমিই ওদের মিলন ক’রে দিলাম। স্ত্রীর সঙ্গে দেখা না হ’লে ওর পপি এত বেশী হ’ত না ।” মৃত্যুযানের চালক গম্ভীর ভাবে উত্তর দিল, “থাক, আর বেশী বল্বার প্রয়োজন নেই। আমি শুধু এইটুকু বলতে চাই—আর সময় চাওয়া বৃথা—তুমি এর কোনো প্রতিকার করতে পারবে না।” ঈডিথ, উচ্ছসিত হইয়া বলিয়া উঠিল—“না না—আমি পারব, তুমি একটু সময় দাও। এমন ভাবে আমি মরুতে পারব না-সামান্ত কয়েক মুহূৰ্ত্তের জন্তে তোমায় অনুরোধ ধ্ৰুছি। তুমি জান আমি তাকে ভালবাসি—এই মুহূৰ্ত্তে :াকে যত ভালবাস্ছি আর কখনো আমি এত ভালবাসিনি ।” ভূমিশায়িত ছায়ামূৰ্ত্তিটি চঞ্চল হইয়। উঠিল, যতক্ষণ তাহার কথা বলিতেছিল সে নিৰ্ণিমেঘ নেত্রে সিস্টার ঈডিথকে দেখিতেছিল। তাহার মুখের প্রত্যেকটি কথা সে যেন পান করিতেছিল-মুখের প্রত্যেকটি ভাব সে দেন মনে গাথিয়া লইতেছিল—যেন অজানা অনন্ত ভবিষ্যতের পথে ইহাই মাত্র তাহার সম্বল। ইডিথ যাহা বুলিয়াছে, যতই কেন তাহার বিরুদ্ধে হউক—সে মুগ্ধ ইয়া শুনিয়াছে ; ঈডিথের বেদনা, ঈডিথের সহানুভূতি তাহার জর্জরিত হৃদয়ে প্রলেপের মত স্নিগ্ধতা আনিয়াছে । তাহার প্রতি তাহার মনে এক অজানিত ভাব উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিতেছিল—ইহার কি নাম সে জানে মৃত্যু-দূত సె%ఏ না ; সে শুধু এইটুকু মাত্র বুঝিল, ইহার হাতে সে সব কিছু সহ করিতে পরিবে। এইটুকু মাত্র সে জানিল যে, তার মত একজন হতভাগ্য কাপুরুষকে ভালবাসিতে স্বর্গের দেবতারা পারেন কিনা সন্দেহ –অথচ যে তাহাকে মৃত্যুর কোলে টানিয়া আনিয়াছে তাহাকেই সে ভালবাসিয়াছে। যতবার ওই নারী তাহাকে ভালবাসে বলিয়া স্বীকার করিয়াছে ততবারই তাহার আত্মা এক অনচুভূত আনন্দে শিহরিয়া উঠিয়াছে, ইহার কল্পনা ও সে কখনো করিতে পারে নাই। ডেভিড জর্জের দৃষ্টি আকর্ষণ করিতে অনেক চেষ্টা পাইল, কিন্তু জর্জ তাহার দিকে চাহিল না, উঠিতে চেষ্টা করিয়া সে অসহ যন্ত্রণায় পীড়িত হইল । সে লক্ষ্য করিল সিস্টার ঈডিথ কি যেন দুৰ্ব্বিযক্ত বেদনায় শষ্যায় পড়িয়া ছটু ফটু করিতেছে। সে দুই হাত আঞ্চলিবদ্ধ করিয়া জর্জের নিকট ব্যাকুল প্রার্থনা জানাইতেছে, কিন্তু জর্জের মুখ জড় পামাণের মত ভাবলেশশূন্ত । - জর্জ অবশেষে বলিল, “সময় দিতে আমার কোন আপত্তি ছিল না,কিন্তু আমি জানি তুমি বৃথাই সময় চাইছ —তুমি কিছুই করতে পারবে না।” এই বলিয়া মৃত্যুদৃত জীবনের সমাপ্তিমন্ত্র উচ্চারণ করিবার জন্য একটু আনত হইল—এই মন্ত্র দেহ হইতে মুক্তি পাইবার জন্য আত্মাকে আহ্বান করিবার মন্ত্র। • সেই মুহূৰ্ত্তে ডেভিডের অস্পষ্ট ছায়ামূৰ্ত্তি বহুকষ্টে মুমূর্যু ঈডিথের সন্নিকটবৰ্ত্তী হইল । সে প্রাণপণ শক্তিতে আপনার বন্ধনমোচন করিয়াছে—এই প্রচেষ্টায় যে অসহ বেদন সে পাইয়াছে তাহা সে কখনো মুহূর্বের জন্য কল্পনায় আনিতে পারে নাই । ইহার জন্য অনন্ত কাল তাহাকে যন্ত্রণ পাইতে হইবে, তা হউক-কিন্তু তাহার সহিত সাক্ষাতের জন্য সিস্টার ঈডিথ ব্যাকুল ; তাহার এই বেদন ও প্রার্থনাকে সে বৃথা হইতে দিবে না। সে জর্জের অলক্ষ্যে সিস্টার ঈডিথের শয্যার অপর পাশ্বে গিয়৷ তাহাকে স্পশ করিবার জন্য হস্ত প্রসারিত করিল। যদিও সেই রক্তমাংসবিহীন ছায়া-হস্তের স্পশাচুভূতি জাগাইবার ক্ষমতা ছিল না—তবু সিসটার ঈডিথ তাহার উপস্থিতি অনুভব করিল ; ব্যাকুল আগ্রহে সে মুখ ফিরাইল,