পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> е е ছবি আর অন্য-অন্য দু-চারজন চিত্রকারের ছবি প্রবাসী প্রথম-প্রথম প্রকাশ করেছিল । কিন্তু অল্প কয় বৎসরের মধ্যেই ‘প্রবাসী রূপকৰ্ম্ম বিষয়ে আমাদের দেশে যে নবীন সাধনা-চল ছিল, তা’র খবর পায়, আর প্রবাসী তখনই পূর্ণভাবে তাকে গ্রহণ ক’রে বাঙালী জাতকে তা গ্রহণ করতে আহবান করে। ইংরিজী ১৯০৪ কি ১৯০৫ সাল, ইস্কুলে চতুর্থ কি তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ি, তখন একদিন আমি কলকাতার সরকারী আর্ট -ইস্কুলে বিলিতী আর এ-দেশী ছবির সংগ্রহের মধ্যে হাভেল সাহেরের কীৰ্ত্তি আমাদের দেশের প্রাচীন রাজপুত আর মোগল শৈলীর ছবির সংগ্রহটি প্রথম দেখি। আর সেই সময়ে ঐ আর্ট-ইস্কুলের চিত্রশালায় অবনীন্দ্রনাথের প্রতিভার নিদর্শন আটখানি চিত্রের সঙ্গে আমার পরিচয়ের সৌভাগ্য ঘটে। সেই সময় থেকেই অবনীন্দ্রনাথের আর তার কিছু পরে নন্দলালের অপূৰ্ব্ব রূপদক্ষতা আমার ব্যক্তিগত জীবনে এক শ্রেষ্ঠ আনন্দ দান ক’রে আসছে। যে দিন ‘প্রবাসী'র সম্পাদক মহাশয় অবনীন্দ্রনাথ আর র্তার শিষ্যদের অণক ছবি ‘প্রবাসী’ আর ‘মডার্ণ-রিভিউতে প্রকাশ ক’রে র্তার সাহিত্য-সাধন। আর সমাজের হিতৈষণার অন্তরালে নিভৃতে অবস্থিত রসোপভোগ শক্তির পরিচয় দিলেন, আর আমাদের দেশের প্রাচীন যুগের কৃতি রাজপুত মোগল আর অন্য অন্য রূপ-কৰ্ম্মের প্রতিলিপি দিতে লাগলেন, সে দিন আধুনিক যুগে বাঙলার আর ভারতবর্ষের মুকুমার শিল্পের উজ্জীবন-বিষয়ে এক পরম শুভদিন । পারিপাশ্বিক আর বাহ-সঙ্গতি, আর আলে|ছায়ার বিজ্ঞানাঙ্গুমোদিত সমাবেশ, আর আপাত-দৃষ্টিআকৰ্ষণকারী সৌষ্ঠব,—শিল্পের এইসব ব্যাকরণের বুলি আর শিল্প-সম্বন্ধে প্রাকৃত জনোচিত ধারণা নিয়ে, রাফেলের পরের যুগের অতি খেলো চিত্রশিল্পকে মাথায় পেতে নিয়ে, আমাদের দেশের শিল্পের উৎসগুলি যে শুখিয়ে যাচ্ছে সে দিকে একটিবারও দৃকপাত না করে বা উপেক্ষ-ভরে তাকে বিদেশী শিল্পের বৈঠকে অস্পৃগু ক'রে দূরে তাড়িয়ে দিয়ে আর আমাদের জাতির মধ্যে অন্তনিহিত সাধারণ সৌন্দর্ঘ্যবোধ আর কল্পনা শক্তিকে অশিক্ষিত ব’লে বর্জন করে, আমরা মহোল্লাসে আমাদের দেশকে ইউরোপের অধীন প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৩ [ २७* छानं, sष थ७ করতে চলেছিলুম শিল্প আর রূপকৰ্ম্ম বিষয়েও—এমন সময়ে সহৃদয় বিদেশী হাভেল আর আমাদের অবনীন্দ্রনাথ দাড়ালেন, তার আমাদের ব’লে দিলেন, দেখিয়ে দিলেন যে ওদিকে নয়,—বিলিতী আর্টের টবের গাছ এনে জাতীয় রূপ-সাধন চলে না, সে টবের গাছকে চারাবাড়ীতে পূরে ঝড় জল থেকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়, দেশের মনের ভাবের প্রকাশ যে জাতীয় শিল্পের দ্বারায় হয়েছে সেই শিল্পকে জাঁইয়ে তুলতে হবে, প্রাণসঞ্চার ক’রে তাকে সময়োপযোগী করে নিতে হবে । এদের এই নিবেদন আমাদের দেশবাসীর কাছে বড়োই অদ্ভুত ঠেকূলে আমাদের অশিক্ষিত চোখ ভারতীয় শিল্পের অপূৰ্ব্ব স্বষ্টির সৌন্দর্য্য দেখতেই তো পেলে না, বরং সৌন্দর্যবোধের শক্তির অভাব বিরোধ আর বিদ্রুপের দ্বারা পূরণ করবার চেষ্ট হ’লো। এর মধ্যে ‘প্রবাসী’ অবিচলিতভাবে ভারতের নবসঞ্জীবিত শিল্পের পক্ষ গ্রহণ ক’রে দাড়ালে। মাসেব পর মাস ধ’রে ‘প্রবাসী’ যে নবীন রূপকার-মণ্ডলীর আঁক; ছবি প্রকাশ করে এসেছে তার ফলে এই দাড়িয়েছে যে, এদের উদ্দেশ্য আর পদ্ধতি সাধারণ শিক্ষিত বাঙালীর গা-সহ হ’য়ে গিয়েছে, আর তার তথ-কথিত শিল্প-জ্ঞানে বা শিল্প-বোধে এর নীনত্ব আর তেমন ক’রে ঘা দেয় না, —পরিচয়ের সঙ্গে সঙ্গে একে বোঝবার চেষ্টাও কিছু কিছু হ’তে আরম্ভ করেছে, আর অল্পে-আল্পে দু’চার জন ক’রে এর গুণগ্রাহীর সংখ্যাও বাড়ছে। শিক্ষিত বাঙালীর মানসিক উৎকর্ষের বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় শিল্পের আদরও বেড়ে চ’লেছে ; ইউরোপের সমজদার মহলে আধুনিক বাঙালী রূপকারদের দ্বারায় পুনরধিষ্ঠিত ভারতীয় শিল্প সম্মানের সঙ্গে গৃহীত হ’য়েছে, তাই দেখাদেখি ভারতের অন্যান্য প্রদেশেও এর প্রসার হচ্ছে। পৃথিবীর সৰ্ব্বকালের শ্রেষ্ঠ রূপক্লংদের মধ্যে নন্দলাল আর তার গুরু অবনীন্দ্রনাথকে ধরা যেতে পারে, এ কথা বললে এখন আর শিল্পের অপমান হ’চ্ছে বলে আধুনিক ইউরোপীয় শিল্পের বাঙালী হাতুড়ে বা মোক্তারের আগেকার মতন এখন আর চটে,ওঠে না। বাঙলা দেশের এই নবীন শৈলীর রূপকারদের কেন্দ্র শাস্তিনিকেতনের এখন কলাভবনে বাঙলার বাইরে থেকেও ছাত্রের গুরুকুলবাস ক’বৃতে আসছে,