পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] জীবনদোলা >>o কেহ করে নাই, তখন হঠাৎ গৌরী একদিন সংসার উজ্জল করিয়া ফুলের গুচ্ছের মতন মা’র কোল জুড়িয়া বসিল । একে পিতামাতার শেষ বয়সের সন্তান, তায় বাড়ীর প্রথম মেয়ে, তাহার উপর আবার এত রূপ ! বাড়ীতে মেয়ে লইয়া যেন কাড়াকড়ি পড়িয়া গেল । বাড়ীও ত নিতান্ত ছোট নয় ; লোকে জনে চারিদিক গম্ গম্‌ করিতেছে। বারমাসই সেখানে যঞ্জিবাড়ী লাগিয়া আছে। বড়ঠা করুণ যখন লাতটি সস্তান লইয়া বিধবা হন, তখন র্তাহার যে ত্রিসংসারে কেহ আত্মীয় স্বজন আছে এমন কথা বিশ্বে কাহারও মুখে শোনা যায় নাই। দুই কন্যার বিবাহ স্বামীই দিয়া গিয়াছিলেন ; পিতৃবিয়োগের পর তাহারাও যেন অকস্মাৎ পর হইয়া গেল। কুড়ি বৎসরের ছেলে হরিকেশবের মুখ চাহিয়া চারটি কচি ছেলে-মেয়েকে গড়িয়া তুলিতে ও সংসারে দাড় করাইয়া দিতে র্তাহার যে কত দুঃখ কত ঝড়-ঝঞ্জ মাথায় করিয়া বহিতে হইয়াছে, তাহার হিসাব আজ কেহ রাখে না। কিন্তু তাহার পর দেখিতে-দেখিতে হরিকেশব যখন ওকালতি মুনসেফির পদ অতিক্রম করিয়া সব-জজিয়তির পদে অধিষ্ঠিত হইলেন, হরিমাধবও চিকিৎসায় পসার করিতে লাগিলেন এবং এমন কি হরিসাধনও একটা কলেজের অধ্যাপক হইয়া বসিলেন, তখন কোথা হইতে জানি না দলে-দলে মামা, কাকা, জ্যাঠা, মাসি, পিসি, মামীর দেখা দিতে লাগিলেন । হরিসাধনের দুধের যোগাড় করিতে যখন বড়ঠাকরুণকে দুই মাস অন্তর- একখানা করিয়া গহনা কি তৈজস বিক্রয় করিতে হইত, তখন কোনো আত্মীয় তাহার এক পোয়৷ দুধের ব্যবস্থা করিয়া দিতে পারেন নাই। কিন্তু সেই হরিসাধনেরই বিবাহের সময় ৫২॥১০২ টাকা যৌতুক লইয়া বিবাহের প্রণামীগুলা অনেকে আদায় করিয়া লইয়া গেল। কেহ-বা হরিসাধনকে দিয়া চিকিৎসা করাইবার অছিলায় ছেলেটিকে সেখানে রাখিয়া গেল ; কেহ-জামাই-এর চাকরীর আশায় হরিকেশবের হাতে মেয়ে-জামাই দুইটিই সপিয়া দিয়া গেল। মা-ভাইকে কত কাল দেখি নাই বলিয়া শৈশবে বিবাহিত বোনইটিও পিতৃসংসারে এত দিন পরে আবার আসিয়া দেখা দিল । তাহাদের স্বামীরা বলিল, “সহরে থাকূলে মেয়েগুলোর বিয়ের ব্যবস্থা করা সহজ হবে, ছেলেগুলোরও পড়াশুনার ঐকটু স্থবিধা হবে ; এখন দিনকতক এখানেই থাক ।” স্বতরাং এই মধ্যবয়সে মেয়েরা আবার বছরে ছয় মাস করিয়া বাপের বাড়ীতেই বাসা বাধিলেন। যখনও বা শ্বশুরবাড়ী যান, তখনও ছেলেদের এখানেই রাখিয়া যান; ন হইলে তাহাদের পড়ার ক্ষতি হইতে পারে। ১০১৫ বৎসর বাপের বাড়ীয় সঙ্গে এই মেয়েদের যে কোনো সম্পর্ক ছিল না বলিলেও কেহ তা বিশ্বাস করিবে না। এমনি করিয়া ছয় জনের সংসার আজ পঞ্চাশ জনের হইয়া উঠিয়াছে। দুই বেলায় চাকর দাসী লইয়া প্রত্যহ সওয়াশ পাতা পড়ে। দোতলাবাড়ী ক্রমশ চারতলা হইয়া উঠিয়াছে, বড়-বড় ঘরের মাঝখানে কাঠের দেওয়াল দিয়া একখানা ঘরকে দুইখান করা হইয়াছে। তবু অতিথিঅভ্যাগত আসিলে তরঙ্গিণীকে মাসে দশ দিন ভাড়ার ঘরে তক্ত পাতিয়া শুইতে হয় । অতিথিকে যেমন-তেমন ঘরে থাকিতে, দিয়া বাড়ীর বড়বে ত স্থখশয্যায় নিদ্রা যাইতে পারেন না । এই আজই বাড়ীতে জামাই আসিবে বলিয়া তরঙ্গিণীকে ঘর ছাড়িয়া ভাড়ার ঘরে শুইতে যাইতে হইবে ; হরিকেশব পুত্র, ভ্রাতুপুত্র ও ভাগিনেয়দের সঙ্গে বাহিরের ঘরেই রাত কাটাইবেন । নিজের ঘর থালি থাকিলেও বাহিরের ঘরের ঘরজোড়া তক্তাপোষের ফরাসের উপর পুথিপত্র লইয়া এমনিই তাহার বছরে ছয় মাস কাটিয়া যায় ; পড়িতেপড়িতে প্রায়ই মাঝরাত কাটে শেষ রাতে ফরাসের তাকিয়ার উপর মাথা রাখিয়া কখন যে ঘুমাইয়া পড়েন ভোর না হইলে নিজেই জানিতে পারেন না। বাহির বাড়ীতে দেবর, ভাগিনেয় ও পুত্রদের সামনে স্বামীকে ডাকিতে আসিতে অথবা ডাকিয়া পাঠাইতে তরঙ্গিণী এত বয়সেও সঙ্কোচ বোধ করেন ; স্বতরাং হরিকেশবের নিজে না মনে পড়িলে ঘরে উঠিয়া গিয়া শয্যাগ্রহণ করা তাহার আর হইয় উঠে না। দুই পুত্রের বিবাহ হইয়া গিয়াছে। বড় বৌটি আজ বছর তিন ঘর সংসার করিতেছে। তাহার কোলে ছয়